সাইয়িদ জাফরি: অভিনয়কে ভালোবেসেছিলেন যিনি

চলচ্চিত্রের প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা তার জীবনের গল্পেই প্রতিফলিত হয়েছে। একজন থিয়েটার মালিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেতাদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠার এই যাত্রায় সাইয়িদ জাফরি অনুপ্রাণিত করেছেন অনেক শিল্পীকে।

গ্লিটজ ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2015, 07:28 AM
Updated : 17 Nov 2015, 07:28 AM

পঞ্চাশের দশকের এই থিয়েটার মালিক ভারতে এনেছিলেন শেক্সপিয়ার ও টেনেসি উইলিয়ামসের মতো ইংরেজি সাহিত্যের মহারথীদের নাটক। তার হাত ধরেই ভারতে ইংরেজি মঞ্চ নাটকের প্রচলন হয়।

অভিনয়ে অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা এই অভিনেতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ১৪ নভেম্বর লন্ডনে। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

প্রথম যৌবনে সাইয়িদ বিয়ে করেছিলেন তার সহশিল্পী ও ভ্রমণকাহিনি লেখক মেহরুনিমাকে, কিন্তু তাদের বিচ্ছেদ হয় ১৯৬৫ সালে। একসঙ্গে তাদের রয়েছে তিন মেয়ে—মিরা, জিয়া ও সাকিনা।

১৯৮০ সালে সাইয়িদ বিয়ে করেন কাস্টিং পরিচালক জেনিফার আইরিন সোরেলকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই স্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন তিনি।

বর্ষীয়ান এই অভিনেতার মৃত্যুর খবর বিশ্ববাসীকে সামাজিক যোগাগযোগ মাধ্যমে জানান তার ভাগ্নি শাহিন আগারওয়াল।

ফেইসবুকে সাইয়িদের স্ত্রী জেনিফার জাফরির পক্ষ থেকে সেই পোস্টে লেখা হয়, "আমার প্রিয়তম স্বামী সাইয়িদ জাফরি শনিবার সকালে লন্ডনে মারা গেছেন, মস্তিষ্কে আকস্মিক রক্তক্ষরণের মাধ্যমে। আমি সব সময়ই তাকে স্মরণ করবো (আমরা ৪১ বছর একসঙ্গে কাটিয়েছি), তবে এটাই সান্ত্বনা যে তিনি খুব সুন্দর একটি জীবন পেয়েছিলেন আর তার মৃত্যু হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। শুভকামনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।"

১৯২৯ সালে পাঞ্জাবের এক মুসলমান পরিবারে জন্ম সাইয়িদের। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে নয়া দিল্লীতে ইউনিটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু হয় তার।

ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম, যিনি ইংরেজি সাহিত্যের ধ্রুপদী নাটকগুলোকে মঞ্চায়িত করেন।

মঞ্চ থেকে সাইয়িদ পা রাখেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’, ‘চাশমে বাদ্দুর’, ‘মাসুম’, ‘মান্ডি’, ‘মশাল’, ‘রাম তেরি গাঙ্গা ম্যায়লি’, ‘চালবাজ’, ‘রাম-লক্ষন’ ও ‘দিওয়ানা মাস্তানা’র মতো অনেক সিনেমায় পাশ্বর্-চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে দর্শক নন্দিত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাইয়িদ দর্শকের কাছে পরিচিত ‘গান্ধী’, ‘দ্য ম্যান হু উড বি কিং’, ‘এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’, ‘হর্সমেন’ ও ‘দ্য উইলবি কন্সপিরেসি’র মতো সিনেমার মাধ্যমে। এছাড়া ব্রিটিশ টিভিতেও সাইয়িদ ছিলেন পরিচিত মুখ, অভিনয় করেছেন ‘গ্যাংস্টারস’, ‘দ্য জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন’, ‘কমন অ্যাজ মাক’, ‘করোনেশন স্ট্রিট’- এর মতো টিভি শোতে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাইয়িদ কাজ করেছেন শেখর কাপুর, শ্যাম বেনেগাল, রাজ কাপুর, সুভাশ ঘাই, জন হিউস্টন, জেমস আইভরি, ডেভিড লিন, রিচার্ড অ্যাটেনবরো ও স্টিফেন ফ্রিয়ারসের মতো নির্মাতাদের সঙ্গে।

গুণী এই অভিনেতার ঝুলিতে আছে বিরল সব স্বীকৃতি। এশিয়ান শিল্পীদের মধ্যে ব্রিটিশ ও কানাডিয়ান একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পাওয়া অভিনেতাদের মধ্যে একজন হলেন সাইয়িদ। অভিনয়ে অবদান রাখার কারণে ব্রিটেনের রানি তাকে অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার (ওবিই) পদকে ভূষিত করেন, এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ভারতীয় যিনি এই সম্মাননা পেয়েছেন।

সাইয়িদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে। অভিনেতা অনুপম খের, পরিচালক মধুর ভান্ডারকর, ঋষি কাপুরের মতো শিল্পীরা টুইটারের মাধ্যমে এই গুণী অভিনেতার মৃত্যুর শোক প্রকাশ করেন।