সম্প্রতি গ্লিটজের সঙ্গে আলাপ হলো নতুন সিনেমা 'ব্ল্যাক' এবং ক্যারিয়ার নিয়ে।
গ্লিটজ: শুরুতে জানতে চাই ‘ব্ল্যাক’ সিনেমাটি নিয়ে । ‘ব্ল্যাক’ সিনেমাতে আপনার চরিত্রটি ঠিক কেমন?
মিম : ছবিতে আমার নাম তিনা। সোহম অভিনয় করছে বুলেট চরিত্রে। ছবির শুরুতে দেখা যাবে, তিনা ও বুলেট প্রতিবেশী। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই একদিন রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। কৈশোরের গণ্ডি পার হতেই বুলেট ক্রমে নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। তখন তিনা তাকে বাধা দিতে যায়। তিনা বুলেটকে নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকে, তার কখন কি হয়ে যায়। গল্পে নানা টুইস্ট আছে। প্রেম-ভালোবাসা আর নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের গল্পে দারুণ একটি সিনেমা পেতে চলেছে দর্শক।
গ্লিটজ: ইউটিউবে ‘ব্ল্যাক’- এর ট্রেইলার প্রকাশিত হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, নভেম্বরেই নাকি সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হবে। বাংলাদেশের প্রযোজকরা এ বিষয়ে কিছু বলছেন না। সিনেমাটির শুটিং কি শেষ?
মিম: সিনেমাটির মুক্তির ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানি না। ভারতীয় প্রযোজক চাইছিলেন নভেম্বরে সিনেমাটি মুক্তি দিতে। খুব দ্রুতই তিনি সিনেমাটির শুটিং শেষ করতে চাইছেন। আমাদের একটি রোমান্টিক গানের শুটিং এখনও বাকি আছে। তারপর এডিটিং, কালার কারেকশন, পোস্ট প্রোডাকশনের কতো কাজ ! বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আবার সেন্সর বোর্ড থেকেও ছাড়পত্র নিতে হবে। সেন্সর সনদ পেতেও সময় লেগে যাবে। সহসা এই ছবি মুক্তির কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
গ্লিটজ: আপনার আগে যারা টালিগঞ্জে গিয়ে কাজ করে এসেছে, তারা সবাই বলছে, টালিগঞ্জ ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি পেশাদার। আপনারও কি তাই মনে হয়?
মিম : তারা অবশ্যই আমাদের চেয়ে অনেক বেশি পেশাদার। আমাদের এখানে খুব ভোরে ক্যামেরা ওপেন হলো তো, গভীর রাত অবধি শুটিং করতে হয়। টালিগঞ্জে এমনটা নেই। ক্যামেরা ওপেন মানে তো শুটিং স্পটে সবাই হাজির। ওদের সময়ও ছকে বাধা। রাত অবধি শুটিং বিড়ম্বনা নেই। তাছাড়া দেখুন, আমাদের দেশে আউটডোর শুটিংয়ের সময় যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তা কি আদৌ আছে? নেই তো। অথচ ভারতের শিল্পীরা আসলে তাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। আমরা বাংলাদেশী শিল্পীরা ভীষণ কষ্ট করে কাজ করি। আমাদের দেশের কাজের পরিবেশ কিন্তু আমরা খুব সহজেই ঠিক করতে পারি। কিন্তু আমরা তা করছি না। আমরা এখানে মাসের প্রতিদিনই কাজ করি। ভোর থেকে শুরু করে রাত বারোটা বা একটা অবধি আমরা কেন কাজ করবো? সব কিছুরই একটা নিয়ম থাকা উচিত, তাই না।
গ্লিটজ : সমস্যা আসলে কোথায়?
মিম : সমস্যা তো নিজেদেরই। এখানে কাজের কাজ কিছু হয় না, হয় শুধু সমালোচনা। তার এটা ঠিক হলো না, অমুক এটা ভালো করলো না - এসব নিয়েই মাতামাতি। কাজ থেকে বেশি সমালোচনা হলে সমস্যার সমাধান হবে কি করে?
গ্লিটজ : সিনেমাটির পরিচালক রাজা চন্দকে কেমন দেখলেন? শোনা যাচ্ছে, সিনেমাটির শুরুতে নাকি বাংলাদেশি নয়, ভারতীয় প্রযোজকদের সঙ্গেই আপনার কথা হয়েছিলো?
রাজা চন্দ খুব পেশাদার একজন পরিচালক। প্রথম তো বুঝতেই পারিনি, তার পরিচালনার ধাঁচ। যখন বুঝলাম, তখন দেখছি তিনি খুব সহজে খুব কঠিন দৃশ্যগুলোর শুটিং করে ফেলছেন। আমরা কিন্তু বুঝতেও পারছি না। এত দ্রুত তিনি কাজ শেষ করতে পারেন, সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতোই।।
গ্লিটজ : যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নিয়ে চারপাশে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। সমালোচনারও কমতি নেই। ‘ব্ল্যাক’ এর টিজার দেখেও সমালোচকরা বলাবলি করছে, এটা নাকি পুরোপুরি ভারতীয় ছবি ….
মিম : ‘ব্ল্যাক’ এর টিজার নিয়ে ভালো বলতে পারবেন প্রযোজক বা পরিচালকরা। তারাই আসলে ভালো জানেন, কিভাবে তারা সিনেমাটি উপস্থাপন করবেন। কিন্তু আমি বলবো, সিনেমাটি দুদেশেরই সিনেমা। দুদেশের সংস্কৃতিকেই তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। তবে আমাদের আরো ভাবা উচিত। আমাদের দুই দেশের সংস্কৃতি যেন সমানভাবে ফুটে ওঠে, তাতে নজর রাখা উচিত। ববিতা-শাবানারা যখন যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করেছেন, তখন কিন্তু মনে হয়নি যে সিনেমাগুলো একেবারেই ভারতীয় সিনেমা। এখন পার্থক্য বড় চোখে লাগে। এখন দুদেশের পরিচালক-প্রযোজকদেরও আরো ভাবা উচিত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে।
গ্লিটজ: যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, শিল্পী সংখ্যা নিয়ে। শিল্পী সংখ্যার তারতম্য বিচারে ভারতকেই কিন্তু এগিয়ে রাখা হচ্ছে..
মিম : ‘ব্ল্যাক’ এর ক্ষেত্রে কিন্তু তেমন কিছু হচ্ছে না। সিনেমাটিতে বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণ আছে। তাছাড়া যখন বাংলাদেশে শুটিং হচ্ছে, তখন পুরো ইউনিট কিন্তু বাংলাদেশেরই থাকছে। তবে বাংলাদেশি শিল্পীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হলে ব্যাপারটি কিন্তু সত্যি ভালো হতো।
গ্লিটজ : সিনেমাটির প্রচার-প্রচারণা ঠিক কিভাবে হবে বলে আপনি জানেন?
মিম : পূজার ছুটিতে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলাম। বেশ কটি টিভি চ্যানেল আর পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে এলাম। সিনেমা মুক্তির দিনক্ষণ ঠিক হলে সেগুলো প্রচার করতে থাকবে। বাংলাদেশের ব্যাপারটি এখনও জানি না।
গ্লিটজ :‘ব্ল্যাক’ এর পর ‘সুইটহার্ট’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে। একেবারে ভোল পাল্টে হাজির অন্য এক মিম। সিনেমাটি নিয়ে কিছু বলুন।
মিম : ভীষণ রোমান্টিক একটি সিনেমা। অনেকদিন পর রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করলাম। এর আগে ‘রহস্য’ নামে একটি নাটকে কাজ করেছিলাম তার সঙ্গে। তারপর তার ‘মনের মাঝে তুমি’ সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখে এসেছিলাম। কী দারুণ অভিনয় করেছিলেন তিনি! সেই থেকে আমি তার দারুণ ভক্ত বনে গেলাম। আমাদের নাটকের শুটিংয়ের সময় কিন্তু সেভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। এবার কিন্তু বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছি। খুব মজা করে কাজ করেছি। সিনেমাতে আমার আরেক সহ-অভিনেতা বাপ্পীও ভীষণ মজার। কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকে সবসময়। সব মিলিয়ে দারুণ একটি গল্প।
গ্লিটজ : তানিয়া আহমেদের ‘গুড মর্নিং লন্ডন’ সিনেমার কাজ কতদূর এগোলো?
মিম : কাজ প্রায় শেষ। সিনেমাটিতে আমি লন্ডনে পড়াশোনা করা এক বাঙালি মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। মেয়েটির এক রহস্যময় অতীত থাকে। সে একদিন তার বাবার কাছে ফিরে আসে। তার এক ছেলে বন্ধু থাকে। সম্পর্কের নানা টানাপড়েনের মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকে চরিত্রটির গল্প। সবটুকু এখনই বলতে চাই না। তাহলে তো আবেদনই থাকলো না আর চরিত্রটির।
গ্লিটজ; গেল ঈদ-উল-ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘পদ্ম পাতার জল’ সিনেমাটিতে আপনার ফুলেশ্বরী চরিত্রটি কিন্তু একাই টেনে গিয়েছিলো সিনেমাটিকে। এমন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব কি আর আসছে? এখন যে গল্পগুলো আসছে, সেগুলোর মান কেমন?
আমি জানি যে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির গল্পগুলো সাধারণত নায়কপ্রধানই হয়ে থাকে। তাতে আমার আপত্তি নেই। নায়কপ্রধান সিনেমাতে আমার চরিত্রটি এমন হতে হবে যেন, তা সিনেমাটির ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠে। শুধু নায়িকা হিসেবে পর্দায় হাজির না করে আমাকে একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। দর্শক যেন দেখেই বলে, ‘এ চরিত্রটি না হলে সিনেমাটিই হতো না।’
গ্লিটজ: হালের অনেক নায়িকাই তো নির্দিষ্ট কোনো হাউজের ব্যানারে কাজ করতে মুখিয়ে আছেন। আপনিও কি কোনো হাউজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন?
মিম: দেখুন, আমার একটাই পরিচয়, আমি একজন শিল্পী। একজন শিল্পী হিসেবে আমি সবার সঙ্গেই কাজ করবো। যে কোনো হাউজ থেকেই অফার আসলে আমি বিবেচনা করবো, আমার চরিত্র, গল্প, পরিচালক আর ইউনিট কেমন। কোনো নির্দিষ্ট হাউজের ব্যানারে আমি কাজ করছি না এখন। আমি এখন মনপ্রাণ দিয়ে অভিনয় করতে চাই, তা যে কোনো হাউজের সঙ্গেই হোক।
গ্লিটজ : ‘ব্ল্যাক’ সিনেমার পর টালিগঞ্জের বেশ কটি প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে নাকি অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন?
মিম: এ খবরও জেনে গেছেন ! আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও আমি সায় দেইনি। যারা এসেছে, তাদের হাউজ থেকে কিন্তু বেশ বিগ বাজেটের ছবি নির্মিত হয়েছে। আমি হ্যাঁ বা না কিছুই বলিনি। ‘ব্ল্যাক’ এর শুটিং শেষ হোক, তারপর সেসব নিয়ে ভাবা যাবে। তবে এখনই কিন্তু লিখবেন না যে মিম টালিগঞ্জে নিয়মিত হতে চলেছে। আমিই জানাবো সবাইকে। সবকিছু চূড়ান্ত হোক।
গ্লিটজ : সম্প্রতি শাকিব খান মন্তব্য করেছেন, যৌথ প্রযোজনা বা টালিগঞ্জের সিনেমায় আমাদের দেশের গুটিকয়েক শিল্পী অভিনয়ের সুযোগ পেতে রীতিমতো হন্যে হয়ে উঠেছেন। শাকিবের মন্তব্যকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
মিম : জয়া আপুর কথা বলছেন কি ? (অভিনেত্রী জয়া আহসান)। জয়া আপুর ব্যাপারে কিন্তু আমি ইতিবাচক কথাই শুনে এসেছি। ‘রাজকাহিনী’তে জয়া আপুর চরিত্রটি নিয়ে সবাই ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আর কারাই বা এমন মুখিয়ে উঠেছে ওপাড় বাংলার ছবি করতে। আমি তো তাদের ব্যাপারে জানি না। আমি নিজের কথা বলবো, আমি দেশী সিনেমাই করতে চাই। তারপর টালিগঞ্জ বা অন্য ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবা যাবে।
গ্লিটজ : টিভি নাটক থেকে উঠে এসেছেন আপনি। নাটকে কি আর ফেরা হবে না?
মিম: ভীষণ মিস করি টিভি নাটককে। কিন্তু এখন তো চলচ্চিত্র নিয়ে আমি ব্যস্ত। টিভি নাটকে অভিনয়ের সময় মিলবে কি না জানি না। তবে সুযোগ পেলে আমি হয়তো অভিনয় করতেও পারি।
গ্লিটজ : ‘আমার আছে জল’ থেকে ‘ব্ল্যাক’ এর মিম - তফাৎ কতোটুকু?
মিম: ‘আমার আছে জল’ এর মিম ছিল একেবারেই ছোট একটি মেয়ে, যে কিনা অনেক সময় না বুঝেই অভিনয় করে ফেলতো। এখন মিম অনেক বুদ্ধিমতী হয়েছে। হিসাব কষে তবেই অভিনয় করে। ইন্ডাস্ট্রির সবাই বলছে, মিমকে এখন পুরোদস্তুর নায়িকাই মনে হয়। আমিও মনে করি, আমি এখন চলচ্চিত্রের নায়িকা হতে পেরেছি।