'রানআউট': গতানুগতিকের উন্নত স্বাদ

পোস্টারে নায়লা নাঈমের আবেদনময়ী উপস্থিতি আর ‘এইটটিন প্লাস’- এর সিল ছাড়াও বড় পর্দায় সজলের অভিষেক - সব মিলিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনায় ছিল ‘রানআউট’। প্রত্যাশার বাইরে কিছু করতে না পারলেও সিনেমাটি বিনোদনের খোরাক যুগিয়েছে নিশ্চিতভাবেই।

জেনিফার ডি প্যারিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2015, 07:53 AM
Updated : 27 Oct 2015, 09:53 AM

অ্যাকশন থ্রিলার ‘রানআউট’ নির্মাণ করেছেন তন্ময় তানসেন। মূলত ভাইকিংস ব্যান্ডের প্রধান হিসেবে পরিচিত তন্ময় এর আগে পরিচালকের আসনে বসেছেন ‘পদ্ম পাতার জল’ সিনেমার জন্য। ‘রানআউট’- এ মুখ্য ভূমিকায় দেখা গেছে সজল নূর, মৌসুমি নাগ ও তারিক আনাম খানকে। এছাড়া ছিলেন ওমর সানি, তানভির হোসেন প্রবাল, রোমানা স্বর্ণা ও আহমেদ শরীফ।

পুরো সিনেমাটি গতানুগতিক থ্রিলারের ছাঁচে ফেলেই তৈরি করেছেন তন্ময়, নেই বাড়তি কোনো চমক। যারা নায়লা নাঈমকে দেখতে প্রেক্ষাগৃহে গেছেন, তাদের হতাশ হতে হবে। সিনেমায় কেবল একটি গানে পারফর্ম করেছেন তিনি।

তবে কাহিনির বুননে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। যে কোনো থ্রিলারের শুরুতেই দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নেয়া জরুরি, আর এই চেষ্টায় সফল হয়েছেন তন্ময়। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর পরিচয় করানো হয়েছে বেশ ভালোভাবেই।

‘রানআউট’এর গল্প গড়ে উঠেছে একজন নিরীহ নাগরিককে ঘিরে, যার অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করে প্রভাবশালী পক্ষ।

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে কিশোরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সজল। কিশোর চট্টগ্রাম শহরের একজন ছাপোষা যুবক, যার জগত নিজের চাকরি ও গ্রামের বাড়িতে রেখে আসা মায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

এক রাতে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় এক খুনের ঘটনার সাক্ষী হতে হয় কিশোরকে। মৃতদেহসহ পুলিশ কিশোরকে গ্রেফতার করে। শহরের এক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী কিশোর ভেবে নেয়া হয় তাকে। 

প্রায় তিন ঘণ্টার এই সিনেমায় সজলের চরিত্রটি নানা চড়াই উতরাই পেরোয়। শুরুতে খেই হারিয়ে ফেললেও পরের দিকটায় হাল ধরে নিয়েছেন সজল। তবে কিছুটা অতি অভিনয় চোখে পড়েছে।

সিনেমাতে একজন উচ্চ শ্রেণীর পতিতা জেনিথের চরিত্রে দেখা গেছে অভিনেত্রী মৌসুমি নাগকে। নিজের নৈপুণ্যের জোরে আলো অনেকটাই নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন তিনি। সিনেমার গল্প সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেকটাই ভূমিকা রেখেছেন। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জেনিথের চট্টগ্রামের এক বড় ব্যবসায়ীর রক্ষিতা হয়ে ওঠার গল্প দেখানো হয়েছে সিনেমায়।

রক্ষিতার পাশাপাশি একজন মায়ের ভূমিকায়ও দেখা গেছে তাকে। কখনো আবেদনময়ী, কখনো প্রতিবাদী আবার কখনো অসহায় মা—সব মিলিয়ে নিজের চরিত্র দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মৌসুমি। তার অভিনয় নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।  

সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র চট্টগ্রামের এক শিল্পপতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্য নিরীহ যুবক কিশোরকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বানিয়ে তোলেন তিনি। ক্ষমতালোভী ও প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর চরিত্রের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য বেশ পাকাভাবে তুলে ধরেছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। পাশাপাশি নিজের রক্ষিতা জেনিথের সঙ্গে রসায়ন তার চরিত্রের উন্মাদনাকে ভালোভাবেই প্রকাশ করেছে। 

সিনেমাতে ছোট ছোট দৃশ্যে দেখা দিয়েছেন ওমর সানি, একজন পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে। তাকে মূলত দুর্নীতিগ্রস্ত ঘুষখোর হিসেবেই দেখানো হয়। এছাড়া পর্দায় এসেছেন রোমানা স্বর্ণা। কিশোরের প্রেমিকার চরিত্রে স্বর্ণা কেবল গ্ল্যামার ছড়ানো ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেননি।

‘রানআউট’- এর গল্প আহামরি কিছু না হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া ঢাকাই থ্রিলারগুলোর চেয়ে কাহিনিকাঠামোতে ফাঁক-ফোকর ছিল কম। পুরো গল্পে তেমন একটা গোঁজামিল দেখা যায়নি, তবে স্বর্ণাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সজলের সঙ্গে গুণ্ডাদের মারামারির দৃশ্যটি কিছুটা খটকা জাগায়।

মারামারির প্রতিটি দৃশ্য অবশ্য তামিল-তেলেগু অ্যাকশন সিনেমাগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ক্লাইম্যাক্সের লড়াই দৃশ্যটি দেখে অনেকটা হিন্দি সিনেমা ‘বডিগার্ড’- এর কথা মনে হতে পারে। 

আঠারোর্ধ দর্শকদের জন্য - এমন সিলমোহর দেখে মনে হতে পারে ‘হেইট স্টোরি’র মতো ইরটিক থ্রিলার এটি। কিন্তু তেমন কোনো রগরগে দৃশ্য চোখে পড়বে না এ সিনেমায়। নারী চরিত্রগুলোর প্রত্যেকটিকেই যৌন আবেদনময়ী হিসেবে দেখানো হলেও সরাসরি যৌনতা দেখানো হয়নি।

‘রানআউট’- এর চিত্রগ্রহণ করেছেন তন্ময় নিজেই। একেবারে আনাড়ি না হলেও কয়েকটি দৃশ্যে আলো ছায়ার ব্যবহারকে আরো ভালো মতো কাজে লাগানো যেতো।  

সিনেমাতে সঙ্গীত দিয়েছে তন্ময়ের ব্যান্ড ভাইকিংস। বাংলা সিনেমায় ব্যান্ড সঙ্গীতের চমৎকার ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন তিনি। অনেকদিন পর শোনা গেছে ‘ভালোবাসি যারে’ ধাঁচের গান। তবে নাচের গান ছিল একটি, যেখানে দেখা মিলেছে নায়লা নাঈমের।

সামাজিক অবক্ষয়, দুর্নীতি আর অপরাধ জগতের নানা চিত্র তুলে ধরা সিনেমাটিতে ভারতীয় বাণিজ্যিক সিনেমার প্রভাব উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাকশন থ্রিলার ধাঁচের ফর্মুলা ফিল্মের জোয়ারেই ভেসে এসেছে ‘রানআউট’। তবে পার্থক্য একটাই, এর স্বাদ একটু উন্নত।