'শিল্পী লাভবান, কিন্তু শিল্প ধ্বংস হচ্ছে'

গানের মানুষ আগুন। গাইতে গাইতে কাছের মানুষদের অনুরোধ ফেলতে না পেরে একদিন অভিনেতাও বনে গেলেন। ডিসেম্বরে মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের মা জননী’।

ইমতিয়াজ হাসানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2015, 07:14 AM
Updated : 9 Oct 2015, 07:16 AM

গান ও অভিনয়ের নানা কথা নিয়ে আগুন মুখোমুখি হলেন গ্লিটজের।

গ্লিটজ: অনেকদিন আপনার নতুন গান নেই। গান ছেড়ে হঠাৎ অভিনয়ে এত মনোযোগী কেন?

আগুন: এক সময় বহু জনপ্রিয় গান গেয়েছি আমি, চলচ্চিত্র, অডিও বাজার সব খানেই। এখনও যে গাইছি না, তা কিন্তু নয়। তবে কাজের সেই আগের আমেজটা আর নেই, অডিও বাজারে ব্যবসা নেই। মানুষ সব প্রযুক্তিমুখী। তাছাড়া কপিরাইট আইনেরও প্রয়োগ নেই। সব মিলিয়ে অনীহা ঠিক না, কাজ আগের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছি। আর অভিনয়ের ব্যাপারটা ভিন্ন। ভাল চরিত্র আর প্রিয় মানুষদের অনুরোধ কি এড়ানো যায়?

গ্লিটজ: তাহলে আমরা কি আগুনের কন্ঠ আর শুনতে পাবো না সচরাচর?

আগুন: কেন পাবেন না! আমি তো গানেরই লোক। তবে অডিও বাজারে আর নয়। আমাকে পাবেন লাইভ শো, স্টেজ পারফর্ম্যান্স আর অনলাইন স্টোরগুলোতে। অনলাইন স্টোরগুলোতে আমি আমার করা নতুন-পুরাতন গানগুলো আপলোড করব। আর আপনারা সেখান থেকে শুনবেন। গান কিংবা অভিনয় যাই বলেন না কেন, সব তো ভক্তের জন্যই। তারা না শুনলে, দেখলে আমাদের মূল্যটা কোথায়?

গ্লিটজ: এক সময় আপনাকে প্লেব্যাকে খুব দেখা যেতো। এখন তুলনামূলকভাবে কম। কারণটা কি?

আগুন: কোথায় কাজ করবো, কার সঙ্গে কাজ করবো তা কিন্ত শিল্পীর নিজের ওপরই নির্ভর করে। আর আগের সেই ভাল লাগাটা, শান্তিটা এখন তুলনামূলক কম। তাই কাজটাও তুলনামূলক কম, সিম্পল।

গ্লিটজ: অভিনয়ের প্রসঙ্গে আসি। সবশেষ আপনাকে দেখা গেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রে। বড় পর্দায় বিরতি নিলেন কেন?

আগুন: আসলে বিরতি ঠিক না। মনের মতো গল্প আর পছন্দসই অভিনয়নির্ভর গভীর চরিত্র না পেলে কি করে অভিনয় করি বলুন?

গ্লিটজ: ‘একাত্তরের মা জননী’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে যদি একটু বলতেন...

আগুন: আমার অভিনীত ‘একাত্তরের মা জননী’ চলচ্চিত্রটি আসছে ১৬ ডিসেম্বর। পরিচালক শাহ আলম কিরণ এটি নির্মাণ করেছেন। এখানে আমাকে হাসেম নামের এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে দেখা যাবে। আর আমার বিপরীতে চিত্রনায়িকা নিপুণ এখানে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে সে সময়ের নিখুঁত জীবনধারা। চলচ্চিত্রটির দৃশ্যায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে নরসিংদীতে।

ভালো একটা চলচ্চিত্র পেতে যাচ্ছে দর্শক। পরিচালক শাহ আলম কিরণ নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই ছবিটি নির্মাণ করেছেন। দর্শকদের কাছে অনুরোধ, আপনারা প্লিজ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখবেন।

গ্লিটজ: আপনার দৃষ্টিতে টিভি নাটক এখন কি অবস্থায় আছে?

আগুন: টিভি নাটক নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। এতটুকুই বলবো, শিল্পীরা লাভবান হলেও ধ্বংস হচ্ছে নাট্যশিল্প। আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ জরুরী।

গ্লিটজ: নাটকের বাজেটের এ দুরবস্থার জন্য আসলে দায়ী কে?

আগুন
: বিশেষভাবে দায়ী কেউ না, দায়ী আসলে সিস্টেম, বাজার সব কিছুই। বাজারে এত চ্যানেল, এত শিল্পী-কলাকুশলী! সবকিছুতেই ছোঁয়া লেগেছে প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে টিকে থাকতে সবাই বাধ্য হয়েই এমনটা করছেন। কম বাজেটে নাটক নির্মাণ হচ্ছে। ফলে আশানুরূপ কাজ পাওয়া যাচ্ছে না, ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে।

গ্লিটজ: এত চ্যানেলের ভিড়ে মানুষ কি আদৌ নাটক দেখছে?

আগুন: সত্যি কথা বলতে মানুষ আসলেই নাটক দেখছে না। কেবল রিমোট নিয়ে চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রতিটি চ্যানেলের হাইলাইটস দেখছে।

গ্লিটজ: দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি নিয়েও সিনিয়র, জুনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আপনার কি মনে হয়?

আগুন: বিজ্ঞাপন বিরতির দৈর্ঘ্য দিনে দিনে বাড়ছেই, যেটা আসলেই কারও কাম্য নয়। চ্যানেলগুলোর কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা ব্যবসানীতি মাথায় রেখে সহনীয় পর্যায়ের একটা বিজ্ঞাপন প্রচারনীতি প্রণয়ন করুন। তাহলে দর্শক আর টিভি স্ক্রিন ছেড়ে ইউটিউবমুখী হবে না। আর মানহীন-মানসম্মত ব্যাপারটা আসলে আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে এখন যেন একটু বেশিই। ভালো কাজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে বের হচ্ছে না বললেই চলে। সব যেন রাবিশ কাজ বের হচ্ছে। এর মাঝে সিঁকে ভাগ ভালো কাজ হচ্ছে বলেই ইন্ডাস্ট্রিটা এখনো মরেনি, বেঁচে আছে।

গ্লিটজ: গান, নাটক, চলচ্চিত্র সবই তো চলছে। আসলে কোন মাধ্যমে নিজেকে থিতু করতে চান?

আগুন: মাধ্যম বুঝি না, আমি বুঝি অভিনয়, বুঝি গান। সোজা কথায়, কাজ করতে চাই। মনের মতো সব ঠিকঠাক মিলে গেলে সব মাধ্যমেই আমার সরব উপস্থিতি থাকবে। কাজ করবো নিজের জন্য নয়, দর্শক-শ্রোতার জন্য, যাতে তারা আমায় আজীবন মনে রাখেন, স্মরণ করেন। কারণ তারাই তো সব, তারা না থাকলে আমার কোনো মূল্য নেই।

গ্লিটজ: নতুনদের নিয়ে কিছু বলতে চান?

আগুন:  হোক অভিনয় কিংবা গান যে মাধ্যমেই তোমরা আসতে চাওনা কেন স্কুলিংটা নিয়ে এসো। আর তারকা হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে শিল্পী হওয়ার ক্ষুধা নিয়ে এসো। দেখবে সফলতা তোমাদের পেছনে ছুটছে।