'বন্ধু আমার না ফেরার দেশে...'

চলচ্চিত্র সাংবাদিক মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন আর নেই।  বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ স্ট্রোক করলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত তিনটার দিকে তিনি মারা যান।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2015, 08:12 AM
Updated : 2 Oct 2015, 08:12 AM

বৃহস্পতিবার চ্যানেল আইয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দিনভর তারকাদের সঙ্গে থাকা আওলাদ হোসেন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

দৈনিক মানব জমিনের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ইসলামপুরের সন্তান আওলাদ হোসেনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ইসলামপুর জামে মসজিদে, বেলা ২ টায় এফডিসিতে তার দ্বিতীয় জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর আজিমপুর গোরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু  শোকবার্তায় বলেন, “মোহাম্মদ আওলাদ হোসেনের দীর্ঘ ত্রিশ বছরের কর্মজীবন একজন নিবেদিতপ্রাণ প্রতিভাবান সাংবাদিকের জীবন ছবি। বিনোদন সাংবাদিকতায় তার অনন্য অবদান দেশের গণমাধ্যমজগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

খল চরিত্রের অভিনেতা মিশা সওদাগর ফেইসবুকে লিখেছেন, “এই ১৯ অগাস্ট বন্ধু আওলাদ হোসেনকে জন্মদিনে উইশ করে বলেছিলাম , চলুক কলম -বাড়ুক  আয়ু। বন্ধু আমার কিছুক্ষণ আগে না ফেরার দেশে চলে গেল। এরকম সজ্জ্বন, অসম্ভব মেধাবী মানুষ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আর পাবে কিনা জানি না। বন্ধু আমি ছিলাম তোর পাশে, ল্যাব এইড থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ফুটবল খেলার দিনগুলোর মতো। সারাটি জীবন অকারণে তুই আমার অনেক কথা রেখেছিলি। আজকে আমাকে তোর চলে যাওয়ার কথাটি ভাবীকে বলতে হবে, কল্পনাও করিনি।”

চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস লিখেছেন, “বাবার (প্রয়াত পরিচালক দিলীপ বিশ্বাস) পর মিডিয়াতে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে হারালাম। আজকের পর থেকে মিডিয়াতে আমার আর কোনো অভিভাবক রইলো না। আজকের পর থেকে আমাকে আর কেউ দেখা হলে জড়িয়ে ধরে দিয়ে বলবে না-‘ও কাকু কেমন আছো’?”

অভিনেত্রী পূর্ণিমা বলেন, “আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আওলাদ ভাই আপনি আর নেই। মাথার উপর থেকে ছায়া সরে গেল। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুক।”

একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন লিখেছেন, “মামা আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না আপনি আমাদের ছেড়ে  চিরতরে চলে গেছেন।”

চিত্রনায়ক ওমর সানি লিখেছেন, “চলচ্চিত্রের একনিষ্ঠ সাংবাদিক, আমার আর মৌসুমীর সবচেয়ে আপনজন আওলাদ হোসেন আর নেই। ওনার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।

চিত্রনায়িকা রত্না লিখেছেন, “আওলাদ ভাই আপনাকে আজ খুব মিস করছি। আমি এত কষ্ট জীবনে আর কোনোদিন পাইনি। আমি পারবো না আপনার লাশ দেখতে। আমি আপনাকে জীবন্ত হাসিমুখে দেখতে চাই সারাজীবন। জানি সম্ভব না, তবুও। আমাদের সব নায়িকাদের একমাত্র ভাই আর নেই। আওলাদ ভাই কি কারণে গেলেন বলেন তো।"

১৯৬৬ সালের ১৯ই আগস্ট ঢাকার ইসলামপুরের নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করা মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ছিলেন তার পরিবারের চতুর্থ সন্তান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্স এবং ১৯৯০ সালে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। তার দুই সন্তান শাহবাজ হোসেন মুন ও অপরাজিতা হোসেন মীম দুজনই  পড়ছেন মেডিকেল কলেজে।

১৯৮৭ সালে সাপ্তাহিক ছায়াছন্দে সহ-সম্পাদক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন।

২০০৪ সাল থেকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক যুগান্তর, সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা, সাপ্তাহিক মনোরমা, সাপ্তাহিক বর্তমান দিনকাল, সাপ্তাহিক চিত্রালী, পাক্ষিক প্রিয়জন, পাক্ষিক বিনোদন বিচিত্রা, চ্যানেল আইয়ের পাক্ষিক আনন্দ আলো, পাক্ষিক আনন্দ ভুবনসহ অনেক পত্রিকাতেই কলাম লিখেছেন তিনি।

ছবি-- তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম