'নকল না করে উপায় কি!'

ঈদ-উল-আযহায় মুক্তি পাওয়া দুটি বাণিজ্যিক ছবি ‘রাজাবাবু’ এবং ‘আশিকি’র বিরুদ্ধেই উঠেছে নকলের অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, সেন্সর নীতিমালা অনুসরণ আর পরিচালক সমিতির গঠনতন্ত্র নিয়েও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2015, 05:40 AM
Updated : 1 Oct 2015, 05:49 AM

প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া ‘আশিকি’ সিনেমাটি তেলেগু 'ইশক’র কপিরাইট এনে নির্মাণের কথা বললেও শাকিব-অপু-ববির ছবি ‘রাজাবাবু’র পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলছেন, তার সিনেমাটি আরেকটি তেলেগু ছবি ‘ধাম্মু’র ‘নকল নয়’। তবে সিনেমা দুটির গল্প মিলে যেতে পারে।

এদিকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে ছবিটি নকল কি না তা যথাযথভাবে নিরীক্ষা না করা এবং বারবার নকল ছবি বানিয়ে ছাড় পেয়ে যাওয়া পরিচালকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার মতো অভিযোগ উঠছে সেন্সর বোর্ডের বিরুদ্ধে।

যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আশিকি’র বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিনেমাটির পরিচালক ও প্রযোজক আব্দুল আজিজ গ্লিটজকে নিশ্চিত করলেন, “সিনেমাটি মোটেই নকল না। আমরা তেলেগু সিনেমা ‘ইশক’ এর কপিরাইট এনে সিনেমাটি নির্মাণ করছি। সিনেমাটির বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে আনীত নকলের অভিযোগ সত্যি না। আমরা পুরো সিনেমাটিই কপি করি নাই।”

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক উঠেছে শাকিব খানের ‘রাজাবাবু’ সিনেমাটি নিয়েই। পরিচালক বদিউল আলম খোকন গ্লিটজকে বললেন, “চলচ্চিত্রাঙ্গনে যখন ভাল চিত্রনাট্যকারের অভাব, তখন আমরা কি করবো? তখন আমাদের বাধ্য হয়েই হিন্দি বা তেলেগু ছবির কাহিনীর দ্বারস্থ হতে হয়। তাছাড়া বাংলা সিনেমার দর্শককেও মৌলিক ছবি দিয়ে হলে টানা যায় না। সব কিছুর পরে তো আমাদের হল ব্যবসা। সব কিছুর পরে আমাদের এসব না করে উপায় থাকে না।”

খোকন আরও বলছেন, “পরিচালক নকল করলো কি করলো না, সেটা মুখ্য না হয়ে সিনেমাটি তিনি কতোটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলেন তা নিয়ে তো কেউ কথা বলে না। এদিকে সেন্সর বোর্ড যে আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে এ নিয়ম, সে নিয়মে। আমরা মৌলিক গল্প নিয়ে সিনেমা বানালে ওরা বলছে, অমুক দৃশ্য ক্ষতিকর, তমুক দৃশ্যে অশান্তি-জঞ্ঝাট বেধে যেতে পারে। আমাদের ছবি যখন পাইরেসি হয়ে যায়, তখন সরকারও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তখন আমরা কি করবো?”

খোকন জানালেন, তিনি সেন্সর নীতিমালা মেনেই ‘রাজাবাবু’ সিনেমাটির জন্য মারপিটের দৃশ্যের শুটিং করলেও সেন্সর বোর্ডের বাধায় সে দৃশ্য ফেলে দিতে হয়েছে, যাতে সিনেমাটি ‘অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে।

‘রাজাবাবু’ সিনেমাতে সুদীপ কুমার দীপের লেখা ও আলী আকরাম শুভর সংগীতায়োজনে ‘চল না দুজন মিলে ওয়ান-টু খেলি’ শিরোনামের আইটেম গানটিও হিন্দি সিনেমা ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’-র ‘টিংকু জিয়া’ গানটির হুবহু নকল। গানটির আয়োজক ও সিনেমার সংগীত পরিচালক আলী আকরাম শুভ নকলের অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে দোষ চাপিয়ে দিলেন পরিচালক বদিউল আলম খোকনের কাঁধে।

“আমাকে পরিচালক এসে বললেন, সিনেমার কাহিনি এই, অ্যারেঞ্জমেন্ট এই, তুমি আমাকে ‘টিংকু জিয়া’ টাইপের একটা গান করে দাও। তো আমি কি করবো”?-এরপর ফোনের লাইনটি কেটে দেন তিনি।

এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গ্লিটজ যোগাযোগ করেছিল সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সঙ্গে। কিন্তু তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কথা হয় সেন্সর বোর্ড সদস্য প্রযোজক নাসিরউদ্দিন খান দিলুর সঙ্গে। তিনি জানান, নকলের যথাযথ অভিযোগ নিয়ে কেউ সেন্সর বোর্ডে আসলে তখন সদ্যসরা সেই সিনেমাটির পুনঃনিরীক্ষণ করবেন। সিনেমাটির বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে সেন্সর বোর্ড সিনেমাগুলোর প্রদর্শনীও স্থগিত করে দিতে পারে।

মুক্তির আগে সিনেমাটি নকল কি না তা কেন খতিয়ে দেখা হল না - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা তো তামিল-তেলেগু সিনেমা দেখি না, হিন্দি সিনেমা দেখি। কোনো সিনেমাকে সেন্সর সনদ দেওয়ার আগে সিনেমাটি দর্শক মনে কোনোভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে কি না, সিনেমাটি আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কি না- তা আমরা নিরীক্ষা করি। কিন্তু তেলেগু সিনেমার কপি ‍যদি কেউ নিয়ে আসেন সেন্সরে, তবে আমরা তা বিবেচনা করবো।”

সেন্সর বোর্ডের আরেক সদস্য ও পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজারও বলছেন একই কথা। নকলের অভিযোগে অভিযুক্ত পরিচালকদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ইস্যুতে তিনি জানালেন, পরিচালক সমিতির গঠনতন্ত্রে ‘সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই’।

“গঠনতন্ত্রে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক হয়েছে আমাদের নিজেদের মধ্যে। সিনেমা হল বাঁচাতে বারবার নকল ছবিই বানাতে হবে, ব্যবসা করতে হবে- এমন কথা ঠিক না। কেউ কপিরাইট এনে সিনেমা বানাতে পারলে ঠিক আছে। কিন্তু কোনো অনুমতি ছাড়াই সিনেমা নকল করলে তা বেআইনি কাজ। নকল সিনেমা বানিয়ে আমরা আমাদেরই বদনাম করছি।”

ঢাকাই সিনেমাতে নকলের ধারাটি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে বলেও জানান গুলজার।

“সিনিয়রদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, তাদের অনেকেই কিন্তু নকল ছবি বানিয়েছেন। তখন আকাশ সংস্কৃতি উন্মুক্ত ছিল না, তাই দর্শকরা ছবি নকল কি না তা বুঝতে পারেনি। চিত্রনাট্যকারের অভাব আছে, এটা খুব সত্যি। যারা আছে তাদের অনেকেই হিন্দি-তামিল-তেলেগু ছবির নকল করে কাহিনি লিখছে। আর আমাদের সহকর্মীরা তাদের কাহিনিতেই সিনেমা বানাচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক।”