'আরও ভালবাসবো তোমায়': কথা রেখেছেন শাকিব 

ঠিক এক বছর আগে নায়ক শাকিব খান বলেছিলেন, যেন তেন সিনেমা আর নয়, এবার দর্শকদের রুচিশীল বিনোদন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন তিনি। ‘আরো ভালবাসবো তোমায়’-এর মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন ঢাকাই সিনেমার কিং খান।

জেনিফার ডি প্যারিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2015, 08:49 AM
Updated : 18 August 2015, 08:49 AM

নতুন এই প্রেমের সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘ বিরতির পর পরিচালনায় ফিরেছেন এস এ হক অলীক। ‘হৃদয়ের কথা’ এবং‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’র মতো সিনেমা উপহার দেয়া এ পরিচালক আবারও দর্শকদের জন্য নিয়ে এসেছেন একটি নিখাঁদ প্রেমের গল্প।

শাকিব খান এবং পরীমনির সঙ্গে সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুলশান আরা চম্পা, সোহেল রানা, সাদেক বাচ্চুএবং আফজাল শরীফের মত বর্ষীয়ান অভিনেতারা।

‘আরও ভালবাসবো তোমায়’-এর কাহিনি গড়ে উঠেছে বাস্তবের নায়ক শাকিব খানের প্রেম নিয়ে। সিনেমায় দেখা যায় মুঠোফোনে পরিচয় হওয়া এক মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়ক। সিনেমার শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ঘটনার চিত্রায়ন দর্শককে আনন্দ দেবে, প্রেমিকা নোলকের সঙ্গে শাকিবের খুনসুটি ছিল খুবই বিশ্বাসযোগ্য । সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শাকিব-পরীমনির পর্দা রসায়ন ছিল দুদর্ান্ত। 

কাহিনিতে কোনো নতুনত্ব না থাকলেও মৌলিকত্ব আছে। এটি কোনো বিদেশি সিনেমার নকল নয়। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হয়েও শাকিবের প্রেমের অমোঘ আকর্ষণকে এড়িয়ে যেতে পারেনা নোলক, যার খেসারত তাকে দিতে হয়। এই ধরনের গল্পের শেষ কেমন হতে পারে, তা অনেকেই অনুমান করতে পারবেন।

চিত্রনাট্য সরল হলেও চোখে পড়েনি কোন ধরনের গোঁজামিল। নির্মাতার নিজস্বতা চোখে পড়ে দৃশ্যায়ন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে।

ঢাকাই সিনেমায় আবেগপ্রবণ দৃশ্যে অতি অভিনয় এড়াতে পারেন না কলাকুশলীরা। এ সিনেমায় প্রত্যেকেই সেক্ষেত্রে পরিমিতি বোধের পরিচয় দিয়েছেন। নায়ক-নায়িকার বিরহ কিংবা নায়িকার বাবার কঠোরতা - কোনো কিছুই অতিরঞ্জিত মনে হয়নি।

সিনেমাতে শাকিব খান শুধু একজন প্রেমিক নন, তিনি তার বাস্তব জীবনের চরিত্রকেও ফুটিয়ে তুলেছেন। নায়ক শাকিব খানের সেই গাম্ভীর্য দেখা গেছে তার অভিনয়ে, পাশাপাশি নোলকের প্রেমে মগ্ন হতেও কার্পণ্য করেননি তিনি। অভিনেতা হিসেবে কিছু নিজস্ব ঢংও বজায় রেখেছিলেন শাকিব।

এবার আসা যাক নায়িকা পরীমনির প্রসঙ্গে। বাণিজ্যিক ধারার এই প্রেমের সিনেমায় পরীকে গ্ল্যামারাস অবতারেই তুলে ধরা হয়েছে। তার রূপসজ্জা এবং পোশাক নির্বাচনে নির্মাতার বিশেষ নজর চোখে পড়েছে।

কিন্তু কয়েকটি দৃশ্যে তাকে খানিকটা কম গ্ল্যামারাস দেখালেই ভালো হতো। যেমন রেল স্টেশনের দৃশ্যে, যখন নিজের বাড়ি সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন নোলক। 

বরাবরের মতো এই সিনেমাতেও লোকেশনকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন অলীক। শুধু গানের দৃশ্যেই নয়, সিলেটের সৌন্দর্য তিনি তুলে ধরেছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যেও।

‘আরও ভালবাসবো তোমায়’ সিনেমাতে দেখা গেছে ৪ টি গান, যার মধ্যে একটি বাদে সবগুলো চিত্রায়িত হয়েছে সিলেটের নানা স্থানে। শ্রুতিমধুর গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন পড়শি, হৃদয় খান এবং কোনালের মত শিল্পীরা। এছাড়া ছিলেন অলীকের ‘হৃদয়ের কথা’ এবং ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’র নিয়মিত গায়ক হাবিব ওয়াহিদ এবং এস আই টুটুল।

সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি অভিনয়শিল্পীর পোশাকের ধরন পাল্টেছেন নির্মাতা, যা লক্ষ্য করা গেছে শাকিব, পরী এবং চম্পার পোশাকে।

নায়ক সোহেল রানার ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন সোহেল রানা, শাকিবের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে তাকে। চলচ্চিত্রশিল্পীদের প্রতি সাধারণ মানুষের নাক সিটকানো মনোভাব নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ শোনা যায় তার মুখে। তবে তার চরিত্র বেশিদূর এগোয়নি।

শাকিব-পরীর পরে সিনেমাতে যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তিনি হলেন চম্পা। নোলকের (পরী) ফুপু ঝুমকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন চম্পা। বয়সের ব্যবধান অনেক বেশি হলেও তিনি হাবুডুবু খাচ্ছেন নায়ক শাকিবের প্রেমে। গ্ল্যামারের দিক থেকে পরীর চাইতে কোনো অংশে কম মনে হয়নি তাকে। শুরুর দিকে ফুপুর সঙ্গে নোলকের সম্পর্ক অনেকটা বান্ধবীর মতো মনে হলেও, পরে নোলকের মৃত মায়ের স্থান দখল করেন ঝুমকা। 

এছাড়া নায়িকা নোলকের বাবার চরিত্রে দেখা গেছে সাদেক বাচ্চুকে, আর  শাকিবের দীর্ঘ দিনের সেক্রেটারি হিসেবে অভিনয় করেছেন আফজাল শরীফ।

‘আরও ভালবাসবো তোমায়’-এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই চোখে পড়েছে নির্মাতার যত্ন। সেট ডিজাইনেও বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এর চিত্র সম্পাদনা আরও ভালো হতে পারতো। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে নিম্নমানের ফুটেজ সিনেমার আকর্ষণ অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে সিনেমার দৈর্ঘ্য কিছুটা কমানো গেলে, আরও জমজমাট হতো।  

পর্যাপ্ত বাজেট থাকলে আমাদের দেশীয় লোকেশনে সম্পূর্ণ দেশী কলাকুশলীদের নিয়ে ভালো সিনেমা বানানো সম্ভব, তা প্রমাণ করেছেন এস এ হক অলীক।

সবশেষে শাকিব খানের কথা ধার করেই বলা যায়, যৌথ প্রযোজনার সিনেমার দিন ফুরিয়ে আসছে। পরিচালনা এবং সার্বিক উপস্থাপনায় বাংলাদেশি নির্মাতারা অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। এখন শুধু অপেক্ষা আরও ভালো গল্পের, যা হবে মৌলিক এবং আকর্ষণীয়।