ঢাকা মাতালেন কোরীয় জ্যাজ শিল্পী  

ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শেষে আবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে ঢাকার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার সংস্কৃতিপ্রেমীরা ভিড় করেছিলেন শিল্পকলা একাডেমি। কোরিয়ান দূতাবাসের চার্ম অব কোরিয়া আয়োজনের সপ্তম আসরে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যাজ গায়িকা ওং স্যানের পরিবেশনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2015, 05:05 PM
Updated : 1 August 2015, 05:05 PM

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪২তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ আসরের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ছে। আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে তারা যেমন পরিচিত হচ্ছে, তেমনি তাদের সংস্কৃতি কেমন তা জানতে পারছি আমরা।”

কোরীয় রাষ্ট্রদূত লী-ইয়ান-ইয়ংয়ের বিদায় ক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। এক মাস পরই বাংলাদেশে তার কাজের মেয়াদ শেষ হবে। যাবার বেলায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ‘মুগ্ধ’ এই কর্মকর্তা গ্লিটজকে বললেন, “আমার অনেকদিন মনে থাকবে বাংলাদেশের কথা। এদেশের মানুষ, এদেশের কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা, সবকিছুই আমার মনে পড়বে। সুযোগ হলে আবার আসবো বাংলাদেশে। বাংলার গান আমার খুব ভালো লাগে। আমি কখনও ভুলবো না এই দেশের কথা।”

এরপরই মঞ্চে হাজির হলেন জ্যাজ গায়িকা ওং স্যান। শিল্পকলার মিলনায়তন তখন কানায় কানায় পূর্ণ। দর্শকের উদ্দেশ্যে স্যান বললেন, “আমি সত্যিই অভিভুত। আমার গান শুনতে এত মানুষ এসেছে! আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ । ধন্যবাদ বাংলাদেশ।”

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়িকা তার ব্যান্ড নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের নানা দেশে। ২০০৮ সালে বেস্ট জ্যাজ অ্যান্ড ক্রসওভার অ্যালবাম, ২০১০ সালে সুইং জার্নালের গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ এবং ২০১৩ সালে জ্যাজ ক্রিটিসিজমের জ্যাজ ডিস্ক গ্র্যান্ড প্রাইজ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় তার ব্যান্ড। স্যান শুধু জ্যাজ গানেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, কোরীয় লোক সংগীতের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতের এক অদ্ভুত মেলবন্ধনও ঘটিয়েছেন তিনি।

পরিচয়পর্বের পর শুরু হয় গানের পালা। ওং স্যানের সঙ্গে স্যাক্সোফোন নিয়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন জংজিক লি, ড্রামসে চিউলয়্যু পার্ক, পিয়ানোতে কিউনএন মেন, গিটারে কিয়ন হু পার্ক, বেজ গিটারে হগিউ হুয়াং।  

ভিয়েনা বয়েজ কয়ারের লেখা ও সুর করা ‘নাথিং কমপেয়ারস টু ইউ’ দিয়ে ‘জ্যাজ স্টোরি’ শুরু করেন স্যান। জ্যাজ ঘরানার গানের সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যালের মিশেলে গাইলেন ‘ইউ সুই মারিয়া’ গানটি। শুধু যে গাইতেই পারেন তা কিন্তু নয়, নিজের উদ্ভাবিত এক বাঁশিরও সুর তুললেন ‘মারিয়া’র সঙ্গে। ততক্ষণে দর্শক রীতিমতো বুঁদ হয়েছে স্যানের জ্যাজ গানে।

তরুণ দর্শকের উৎসাহ পেতেই স্যান গাইলেন ক্রিস কিস্ট্রোফার্সনের ‘হেল্প মি মেক ইট থ্রু দ্য নাইট’ গানটি। অন্যের লেখা গান গাইলেও এরপর স্যান শুরু করলেন তার নিজের গান। শুরুতেই গাইলেন ‘মিস্টার ব্লুজ’। গানটি গাইবার আগে ‘আর ইউ ব্লুজ’ এই প্রশ্ন নিয়ে দর্শক সারিতে নেমে আসলে তরুণরা জবাব দিলেন ‘ইয়েস, উই আর’। জমে গেল গানের আসর। স্যান গাইলেন ‘ইয়েসটার্ডে’ গানটি।

বাইরে ঝুম বৃষ্টি। জ্যাজ গানে বৃষ্টিসন্ধ্যা মাতাতে স্যান গাইলেন, জর্জ গাস উইনের ‘মার্সি’, এলিংটন জর্ডানের ‘আই উড র্যাদার গো ব্লাইন্ড’ গানগুলো।

আসরের অন্যতম  আকর্ষণের কথা তো বলাই হলও না। বাংলাদেশে এসেছেন স্যান, বাংলা গান গাইবেন না তা কি হয়! প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি 

বাংলায় গান গাই’ গানটি গেয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিলেন ৪২ বছর বয়সী এই জ্যাজ শিল্পী।

আসরের শেষ গান ‘ভোলারে কান্তারে’। এক মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন নিয়ে জিপসি কিংসের লেখা গানটি গেয়েই শেষ করলেন স্যান। ততক্ষণে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামছে ঢাকায়।