অগ্নি টু: মাহির জন্য দেখুন

মাহির ক্যারিয়ারে ইতি টানার সিদ্ধান্ত, ভিডিও বিতর্ক, জ্যাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে মনোমালিন্য—এমন সব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই মুক্তি পেয়েছে ‘অগ্নি টু’। বেশ কিছুদিন ধরে দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সিনেমাটি। লড়াই কিংবা নাচ-গান - সবকিছুতেই পাকা হয়ে পর্দায় ফিরেছে তানিশা ওরফে অগ্নি, কিন্তু এবার তার অভিযানে পাওয়া যায়নি নতুনত্ব।

জেনিফার ডি প্যারিসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 02:04 PM
Updated : 28 July 2015, 02:04 PM

সিনেমায় শুরু থেকে শেষ ছিল টানটান উত্তেজনা। ‘অগ্নি’র পর এর সিকুয়ালেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি। সিনেমার শুরুর দিকে থাইল্যান্ডের পথে এক কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীর সঙ্গে মাহির লড়াইয়ের দৃশ্য থেকেই বাড়তে শুরু করে উত্তেজনার পারদ। বরাবরের মত অ্যাকশন দৃশ্যে মাহির সাবলীল অভিনয় ছিল সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ। তবে সিনেমার কাহিনি অনেকটাই অনুমেয় হয়ে পড়ে সিনেমা অর্ধেক পেড়ুনোর পর। আর তখনই চিত্রনাট্যের অসংলগ্নতাগুলো ফুটে উঠতে শুরু করে আর পরিচালকের খামতিও।

এতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার অভিনেতা রাজা গোস্বামী ওম, নায়ক হিসেবে পর্দায় যার উপস্থিতি একদমই জোরালো হয়নি। পুলিশের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তাকে চুমু খেয়ে বসেন মাহি। অচেনা-অজানা এই মেয়েটির প্রতি কোনো রকম কৌতূহল না দেখিয়ে শুধু তার কাছে ‘একখান চুমু’ চাইতে চাইতে কেটে যায় পর্দায় ওমের অনেকটা সময়।

মাহির পরপরই যার অভিনয় বিশেষভাবে নজর কাড়বে, তিনি হলেন ভারতের আশিষ বিদ্যার্থী। কিন্তু পাকা এই অভিনেতার পর্দা উপস্থিতি অনেক কম থাকায় তিনি তার শতভাগ দক্ষতা দেখাতে পারেননি।

গল্পের বিশেষ দুর্বলতা ছিল সিনেমায় থাই পুলিশের বাংলা ভাষা জ্ঞান  এখানে ইন্টারপোলের গোয়েন্দার ভূমিকায় দেখা গেছে ঢাকাই অভিনেতা অমিত হাসানকে, যিনি থাই পুলিশ বাহিনিকে বাংলায় নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত গল্পের গাম্ভীর্য ওখানেই হারিয়েছে ‘অগ্নি টু’।

ঢাকাই সিনেমার সেন্সর বোর্ডের উদারতা বিশেষভাবে চোখে পড়ে সিনেমাতে বিকিনি পরিহিতা রুশ নারীকে দেখে। এছাড়া নানাভাবে বিদেশি সুন্দরীদের শরীরী সৌন্দর্য ধারণ করা হয়েছে সিনেমাটির গানগুলোতে, যা দর্শককে দিতে পারে মশলাদার বলিউডি গানের স্বাদ।

চিত্রনাট্যের মত নতুনত্ব নেই সংলাপেও। কিন্তু অ্যাকশন দৃশ্যে মাহির অভিনয় নিঃসন্দেহে ঢাকাই নায়িকাদের মনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভয় সৃষ্টি করবে। কারণ এমন সব সাহসী মারামারির দৃশ্যে ভারতীয় নায়িকাদেরকেও খুব কম দেখেছে দর্শক।

সিনেমাটির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য খুব দ্রুত শেষ করে দেয়া হয়েছে, যেগুলো আরও দীর্ঘ হলে কাহিনি আরও জমে উঠত। যেমন ছাদের উপর মাহির সঙ্গে পাঞ্জাবী সন্ত্রাসীটির মারামারির দৃশ্য কিংবা সিনেমার একদম শেষে প্রয়াত প্রেমিকের কবরে মাহির ফুল দিতে আসার দৃশ্যটি।

‘অগ্নি টু’র সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হচ্ছে সিনেমাটির গান। প্রতিটি গানের চিত্রায়ন এবং নৃত্য নির্দেশনা দর্শকের মন ভোলাবে। পাঁচটি গানের মধ্যে চারটিতেই কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতীয় শিল্পীরা। আইটেম গান ‘ম্যাজিক মামনি’তে একাধিক হিন্দি শব্দের ব্যবহার বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে শ্রুতিকটু মনে হলেও, ভারতীয় দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই হয়তো এই সংযোজন। সিনেমায় আবহ সঙ্গীতের ব্যবহারও হয়েছে যথাযথভাবে।

পুরো সিনেমার চিত্রগ্রহণ নিয়ে সমালোচনা করার কোনো অবকাশ রাখেননি পরিচালক। তবে অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে ভিডিও অ্যানিমেশন আরও ভালো হতে পারতো।

এবার আসা যাক বক্স অফিস প্রসঙ্গে। ঢাকাই সিনেমায় যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নায়কদের দাপট, সেখানে প্রথমবারের মত ঢাকাই সিনেমার একচ্ছত্র অধিপতি শাকিব খানকে টক্কর দিতে মাঠে নেমেছেন মাহি।

ঈদে মুক্তি পেয়ে এ বছর শাকিব খানের সিনেমা 'লাভ ম্যারেজ'-এর সঙ্গে বক্স-অফিসে চলছে মাহির 'অগ্নি টু'র লড়াই। সম্পূর্ণ নায়িকানির্ভর সিনেমা হিসেবে এমন এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে মাহির 'অগ্নি টু', যা আগামীতে ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।

‘অগ্নি’র মাধ্যমে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রত্যাশার সীমারেখা এমনিতেই উঁচু করে রেখেছেন ইফতেখার চৌধুরী। তাই ‘অগ্নি টু’র মাধ্যমে তার কাছ থেকে আরও ভালো কিছু আশা করেছে দর্শক, আর দর্শকের প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে পেরেছেন তিনি। ফলে এই সিরিজের পরবর্তী সিকুয়ালের প্রতি আগ্রহ এবং প্রত্যাশা, দুটোই থাকবে অনেক বেশি।