মহানায়কের উত্তম একাদশ

মহানায়ক উত্তম ‍কুমার অভিনয় করেছেন প্রায় ২১২ টি চলচ্চিত্রে। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার অভিনীত সেরা ছবিগুলোর মধ্যে এমন এগারোটি ছবির কথা তার ভক্ত-দর্শককে মনে করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ, পরিচালনা সব দিক থেকেই অসাধারণ।

শান্তা মারিয়াবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2015, 02:48 PM
Updated : 24 July 2015, 02:48 PM

নায়ক উত্তম কুমার অভিনীত সেরা ছবিটির নাম নিঃসন্দেহে ‘নায়ক’। এ ছবির পরিচালক সত্যজিৎ রায়। এর কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংগীত পরিচালনাতেও ছিলেন সত্যজিৎ রায়।‘নায়ক’ ছবিতে উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম অরিন্দম চ্যাটার্জি। তিনি একজন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক। তার মানসিক টানাপড়েন, উচ্চাশা, কখনও স্বার্থপরতা, কখনও নীতির সঙ্গে আপোষ, শিল্পবোধ ও অর্থচিন্তার দ্বন্দ্ব এসব নিয়েই গড়ে উঠেছে সিনেমার কাহিনি। 

একজন নায়কের কেবল সুঅভিনেতা চলে না। রূপ, ব্যক্তিত্ব এবং চটক্‌ও থাকা চাই, সেই সঙ্গে নায়কসুরভ ম্যানারিজমও থাকা প্রয়োজন। সেদিক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিকল্প কাউকে ভাবতে পারেননি সত্যজিৎ রায়। ছবিটির প্রযোজক ছিলেন আর ডি বনশল। আরও অভিনয় করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, বীরেশ্বর সেন, সোমেন বোস প্রমুখ। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নায়ক’ ১৯৬৭ সালে সেরা বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক বডিল অ্যাওয়ার্ড পায় বেস্ট নন ইউরোপিয়ান ফিল্ম হিসেবে। ১৯৬৬ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পায়। ওই উৎসবে ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ডও পায় ছবিটি। বেঙ্গলি ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সেরা পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায় এবং সেরা অভিনেতা হিসেবে উত্তম কুমারকে পুরস্কৃত করে এ ছবির সুবাদে।

হারানো সুর ছবিটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার হয়েও উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের অভিনয়গুনে কালোত্তীর্ণ হয়েছে।‘হারানো সুর’ মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালে। পরিচালক ছিলেন অজয় কর। প্রযোজক ছিলেন উত্তমকুমার নিজেই। সংগীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। রেল দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারায় ধনী ব্যবসায়ী অলোক মুখার্জি। তার চিকিৎসা করেন ডা. রমা ব্যানার্জি। অলোককে মানসিক হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে তিনি নিজের বাড়িতে নিয়ে যান এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে। সেখানে তাকে বিয়ে করেন তিনি। পরে স্মৃতি ফিরে এল অলোক চলে আসেন কলকাতায় এবং ভুলে যান রমাকে। রমা কলকাতায় এসে অলোকের ভাগ্নির গভর্নেস হিসেবে কাজ নেন এবং বিভিন্নভাবে অলোকের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। সিনেমার শেষ পর্যায়ে রমাকে চিনতে পারেন অলোক। স্মৃতি হারানো এবং স্মৃতি ফিরে পাওয়ার পর অলোকের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন অসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলেন উত্তম কুমার। উত্তম-সুচিত্রা জুটির অন্যতম সেরা ছবি ‘হারানো সুর’। রোমান্টিক অভিব্যক্তিতে দুজনেই এখানে ছিলেন অসামান্য। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সংগীত ছিল অসাধারণ। ‘তুমি যে আমার’ গানে গীতা দত্ত এবং ‘আজ দুজনার দুটি পথ’ গানে কণ্ঠ দেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হলিউডের ‘স্পেল বাউন্ড’ এবং ‘র‌্যানডম হারভেস্ট’ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল ছবিটি।  অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি

উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে বাংলা ভাষার ফিরিঙ্গি কবি অ্যান্টনির জীবনভিত্তিক এ চলচ্চিত্রটিতে নাম ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করেন উত্তম কুমার। বাংলায় পিরিয়ডিকাল বায়োপিকের অন্যতম সেরা উদাহরণ এই ছবি। ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির পরিচালক ছিলেন সুনীল ব্যানার্জি। সংগীত পরিচালনা করেন অনিল বাগচী। পর্তুগিজ বাবা ও বাঙালি মায়ের সন্তান হেনসমান অ্যান্থনি ছিলেন উনবিংশ শতাব্দির প্রথমদিকের একজন লোককবি যিনি অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি নামে পরিচিত ছিলেন। অ্যান্টনি এবং পেশাদার বাইজি শাকিলার প্রেমকাহিনি ও বিয়োগান্তক পরিণতি এ ছবির মূল উপজীব্য হলেও কবি হিসেবে অ্যান্টনির অন্তর্দ্বন্দ্ব, সামাজিক সংঘাত, হিন্দু সমাজের তৎকালীন  সংকীর্ণতা সবই উঠে এসেছে এ ছবিতে। শাকিলার ভূমিকায় ছিলেন তনুজা এবং সমসাময়িক কবি ভোলা ময়রার ভূমিকায় অসিত বরণ অভিনয় করেন।

উত্তম কুমারের অভিনয়ের পাশাপাশি ছবিটির অন্যতম আকর্ষণ এর সংগীত। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও প্রণব রায়ের লেখা গানের সঙ্গে হেনসমান অ্যান্থনি, ভোলা ময়রা, ঠাকুর দাস সিংয়ের লেখা গান ব্যবহার করা হয়েছে এতে। মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গানগুলো একই সঙ্গে সমালোচকদের প্রশংসা এবং বিপুল জনপ্রিয়তা পায়|। ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’, ‘আমি যে জলসা ঘরের’সহ বিভিন্ন বিখ্যাত গান রয়েছে ছবিতে। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য উত্তম কুমার ১৯৬৮ সালে বাংলা ভাষায় সেরা অভিনেতা হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ছোট গল্প অবলম্বনে খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ছবিটি নির্মিত হয়। অগ্রদূত পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। এতে আরও অভিনয় করেন দীপ্তি রায়, সুচরিতা স্যান্যাল এবং অসিত বরণ। এ ছবিতে সম্পূর্ণ নন-গ্ল্যামারাস একটি ভূমিকায় অভিনয় করেন উত্তম কুমার। অভিজাত পরিবারের বিশ্বস্ত গৃহভৃত্য রাইচরণ। প্রভুর শিশুপু্ত্রের অকাল মৃত্যুতে নিজেকে দোষী ভাবে রাইচরণ। নিজের পুত্র জন্মালে তার ধারণা হয় প্রভুপুত্র ‘খোকাবাবু’ তার ঘরে পুনর্জন্ম গ্রহণ করেছে। সেই বিশ্বাস থেকে নিজের ছেলেকে সে প্রভুর ছেলে হিসেবে বড় করে এবং এক সময় তাকে দিয়ে আসে প্রভুর বাড়িতে। পরিবারের সবাই এবং কিশোর ছেলেটিও রাইচরণকে মনে করে ‘শিশুচোর’। নিজের ছেলেকে প্রভুর হাতে সমর্পণ করে দুঃখী রাইচরণ হারিয়ে যায় জনারণ্যে। এ ছবিতে উত্তম কুমারের অভিনয় ছিল মর্মস্পর্শী। রোমান্টিক হিরো উত্তম একেবারে ভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করে চমক সৃষ্টি করেন। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

সপ্তপদী

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘সপ্তপদী’ মু্ক্তি পায় ১৯৬১ সালে। ছবিটির পরিচালক ছিলেন অজয় কর। প্রযোজক ছিলেন উত্তম কুমার।সংগীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবির নায়ক কৃষ্ণেন্দুর ভূমিকায় উত্তম কুমার এবং নায়িকা রিনা ব্রাউনের ভূমিকায় সুচিত্রা সেন ছিলেন অনবদ্য। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রিনা ব্রাউনকে বিয়ে করার জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান হন ডা. কৃষ্ণেন্দু। কিন্তু কৃষ্ণেন্দুর বাবার অনুরোধে রিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করে এই যুক্তিতে যে, সাধারণ এক নারীর জন্য যে নিজের ধর্ম ত্যাগ করতে পারে সে অন্য কোনো নারীর জন্য যে রিনাকে ত্যাগ করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।

প্রত্যাখ্যাত কৃষ্ণেন্দু ধর্মযাজক হয়ে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করে। অনেক বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার দুজনের দেখা হয়। রিনা তখন নিজেই ধর্মের উপর বীতশ্রদ্ধ। আত্মজিজ্ঞাসা, মানসিক দ্বন্দ্ব, সমাজের ঘাত-প্রতিঘাত সবকিছু মিলিযে ছবিটি ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য উত্তম কুমার শেক্সপিয়রের ‘ওথেলো’ নাটকটি রীতিমতো শিক্ষক রেখে পড়েন। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটিতে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক আবেদন অনবদ্য। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার প্রাইজ পান সুচিত্রা সেন। ১৯৬১ সালে ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।

রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত 

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস থেকে অংশ বিশেষ নিয়ে ১৯৫৮ সালে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’। ছবিটির পরিচালক ছিলেন হরিদাস ভট্টাচার্য| শ্রীকান্তর ভূমিকায় উত্তম কুমার এবং রাজলক্ষ্মীর ভূমিকায় ছিলেন সুচিত্রা সেন|। পিরিয়ডিকাল ছবি হিসেবে এটি ছিল সুনির্মিত। শ্রীকান্তর উদাসীনতা, পরিহাসপ্রিয়তা এবং রাজলক্ষ্মীর প্রতি প্রেমকে সার্থকভাবে রূপালি পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন উত্তম কুমার।

 

সন্ন্যাসী রাজা: 

ভাওয়ালের বরৌদি স্টেটের রাজা সূর্যকিশোর নাগচৌধুরী এবং তার রানি ইন্দুমতির জীবনের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘সন্ন্যাসী রাজা’। ১৯৭৪ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবিটির পরিচালক ছিলেন পীযুষ বোস এবং সংগীত পরিচালক ছিলেন নচিকেতা ঘোষ। এখানে উত্তমের বিপরীতে ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। পুরীতে অবকাশ যাপনের সময় ভাওয়ালের রাজা সূর্যকিশোরকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন তার গৃহ চিকিৎসক। চিকিৎসককে সহায়তা করেন রানি ইন্দুমতি। ঘটনাচক্রে রাজার মৃত্যু হয় না। একদল সন্ন্যাসী তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু   তার স্মৃতি লোপ পায়। পরবর্তীতে স্মৃতি ফিরে এলে সন্ন্যাসীবেশে রাজা ফিরে আসেন তার এলাকায়। রাজার জমিদারির মালিকানা নিয়ে শুরু হয় মামলা।ব্রিটিশ আমলে এটি ছিল একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। এখানে বিলাসী ও উদার হৃদয় রাজা এবং পরবর্তীতে সন্ন্যাসীর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন উত্তম কুমার।

স্ত্রী

বিমল মিত্রের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘স্ত্রী’তে বিলাসী ও লম্পট জমিদারের চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তম কুমার। তার স্ত্রীর প্রেমিকের চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। উত্তম-সৌমিত্র অভিনীত মুষ্টিমেয় ছবির মধ্যে ‘স্ত্রী’ অন্যতম। ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির পরিচালক ছিলেন সলিল দত্ত, সংগীত পরিচালনা করেন নচিকেতা ঘোষ। জমিদারের স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন আরতি ভট্টাচার্য। এটিও পিরিওডিকাল ফিল্ম। ১৯৩০ সালের ঘটনা দেখানো হয় এতে। অভিজাত ধনী জমিদার মাধব দত্ত সরলমনা, মেজাজী, মাতাল, লম্পট এবং উদার। তার পারিষদ সীতাপতি। সীতাপতিকে আশ্রয় দেন মাধব দত্ত। সীতাপতি জড়িয়ে পড়ে জমিদারপত্নীর সঙ্গে ভালোবাসায়। সীতাপতির সন্তান জমিদারের সন্তান হিসেবেই পরিচিত হয়।স্ত্রীর মৃত্যুর অনেক বছর পর পুত্রের বিয়ের আযোজনের সময় সত্য উদঘাটিত হয জমিদারের চোখে। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তিনি হত্যা করতে চান বৃদ্ধ সীতাপতিকে।সীতাপতি এই ছবির নায়ক। কিন্তু মাধব দত্ত খলনায়ক নন। তিনি ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের প্রতীক। জমিদার মাধব দত্তর জটিল চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেন উত্তম কুমার। এই ছবিতে ‘হাজার টাকার ঝাড় বাতিটা’সহ আরও্র কয়েকটি গানের প্লেব্যাকে দ্বৈতভাবে কণ্ঠ দেন মান্না দে ও হেমন্ত| ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’সহ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে অসাধারণ কয়েকটি গান রয়েছে এতে।

শেষ অংক

উত্তম কুমার যে গুটিকয় চলচ্চিত্রে নেতিবাচক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তার মধ্যে একটি হলো ‘শেষ অংক’। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬২ সালে। পরিচালক ছিলেন হরিদাস ভট্টাচার্য। ছবিতে আরও অভিনয করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, সাবিত্রী চ্যাটার্জি, বিকাশ রায়, উৎপল দত্ত ও  তরুণ কুমার। সাসপেন্সধর্মী ছবিটিতে দেখা যায় বিপত্নিক উত্তম ভালোবাসেন ও বিয়ে করতে চান তরুণী শর্মিলা ঠাকুরকে। কিন্তু তার স্ত্রী পরিচযে আবির্ভুত হন সাবিত্রী চ্যাটার্জি। কিন্তু উত্তম তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে কোনোভাবেই স্বীকার করেন না। ছবির শেষ অংকে উদঘাটিত হয় প্রকৃত সত্য। ছবিটিতে উত্তমের অভিনয় ছিল অসামান্য।

 

ভ্রান্তিবিলাস

কমেডি ছবিতেও উত্তম কুমার ছিলেন সেরা। আর তার অভিনীত কমেডি সিনেমাগুলোর মধ্যে সেরা বলা যায় ‘ভ্রান্তিবিলাস’কে। শেক্সপিয়রের ক্ল্যাসিক নাটক ‘কমেডি অফ এররস’ অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘ভ্রান্তিবিলাস’। ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির পরিচালক ছিলেন মানু সেন। উত্তম কুমারের বিপরীতে ছিলেন সাবিত্রী চ্যাটার্জি এবং সন্ধ্যা রায়। অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া যমজ দুই ভাই এবং তাদের দুই যমজ অনুচরকে নিয়ে দম ফাটানো হাসির ছবি ‘ভ্রান্তি বিলাস’। উত্তম কুমারের অসামান্য অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর হযে আছে ছবিটি।ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন শ্যামল মিত্র। ছবিটির প্রযোজক ছিলেন উত্তম কুমার।

 

অমানুষ

উত্তম কুমার হিন্দি ছবিতেও সাফল্য পেয়েছিলেন। তবে বাংলা ছবির জগতকে ভালোবেসে তিনি কখনও একে ত্যাগ করে মুম্বাইকে স্থায়ীভাবে গ্রহণ করেননি।উত্তম কুমারের সফল হিন্দি ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় ‘অমানুষ’। এটি দ্বিভাষিক ছবি। পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন শক্তি সামন্ত। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে। উত্তম কুমারের বিপরীতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। খলনায়কের ভূমিকায় উৎপল দত্ত।শ্যামল মিত্রের সংগীত পরিচালনায় কিশোর ‍কুমারের কণ্ঠে দুটি বিখ্যাত গান রয়েছে।‘কি আশায় বাঁধি খেলাঘর (দিল অ্যায়সা কিসি নে মেরা তোড়া’) এবং ‘যদি হই চোরকাঁটা (তেরি গালো কো)গানদুটি জনপ্রিয়তা পায় দারুণভাবে।সুন্দরবনের পটভূমিতে গড়ে ওঠে ছবির কাহিনি। ষড়যন্ত্র করে জমিদারের ভাতুষ্পুত্র মধু চৌধুরি (উত্তম কুমার)কে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে নায়েব মহিম ঘোষাল (উৎপল দত্ত)। প্রেমিকা লেখার(শর্মিলা ঠাকুর) সঙ্গেও সৃষ্টি করে ভুল বোঝাবুঝির। ‘অমানুষ’ ও বখাটে হিসেবে পরিচিতি পায় মধু। তার জীবনে হতাশা ছাড়া আর কিছু থাকে না। পরে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিযে পুলিশ অফিসার ভুবন রায়ের ( অনিল চ্যাটার্জির) সহায়তায় সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে সক্ষম হয় মধু। ফিরে পায় সম্পত্তি ও প্রেমিকা লেখাকে। বাণিজ্যিক ফর্মুলা ছবি হলেও উত্তম কুমার ও উৎপল দত্তর দুর্দান্ত অভিনয়, শর্মিলা ঠাকুরের লালিত্য আর পরিচালকের মুন্সিয়ানায় ছবিটি দারুণ বাণিজ্যিক সাফল্য এবং সমালোচকদের প্রশংসা পায়।ছবিটি ১৯৭৬ সালে ফিল্মফেয়ারের আসরে ৯ টি বিভাগে নমিনেশন পায় এবং দুটি পুরস্কার জয় করে।