যৌনতা থেকে সন্ত্রাস: পাকিস্তানে সিনেমায় নিষিদ্ধ সবই

পর্দায় নায়িকার স্তনের ভাঁজ, বোমা হামলার দৃশ্য কিংবা নায়কের টুপি-দাড়ি - এহেন আরও নানা বিষয় পাকিস্তানের দর্শকদের জন্য নিষিদ্ধ। যার ফলে প্রতিবেশি দেশ ভারতে নির্মিত বেশিরভাগ সিনেমাই দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তারা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2015, 05:27 AM
Updated : 9 August 2015, 05:27 AM

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হওয়া বলিউডি সিনেমার সুদীর্ঘ তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে ‘ব্যাঙ্গিস্তান’-এর নাম। কমেডি ধাঁচের এই সিনেমায় মৌলবাদ নিয়ে বিদ্রূপ করা হলেও বিষয়টি ভালভাবে গ্রহণ করেনি পাকিস্তানের সেন্সর বোর্ড।

নিষিদ্ধ হওয়ার এই পরম্পরার শুরুটা অনেক আগে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর থেকে সব ধরনের ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পাক সরকার। ১৯৭৯ সালে আরও জোরালো হয় এই নিষেধাজ্ঞা, যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হক দেশটিতে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সব ধরনের বিনোদন, বিশেষ করে ভারতীয় বিনোদনকে অশালীন বলে অভিহিত করেছিলেন। তার শাসনামলে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র শিল্পেও ধস নেমেছিল।

নিষেধাজ্ঞার এই কালো পর্দা উঠে ২০০৩ সালে, যখন উষ্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে পাক-ভারত সম্পর্ক। ২০০৪ এ মহেশ ভাটের সিনেমা ‘পাপ’ মুক্তি পায় করাচিতে। এক বছর পর পাকিস্তানি অভিনেত্রী মিরাকে নিয়ে মহেশ ভাট নির্মাণ করেন ‘নাজার’, একই সময়ে গায়ক আতিফ ইসলামকেও ভারতবাসীর সঙ্গে পরিচয় করান তিনি।

এরপর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবেই পাকিস্তানে চলছে বলিউডি ফিল্মের প্রদর্শনী। তবে বরাবরই সিনেমাগুলোকে নানা শর্তের বেড়াজাল ডিঙাতে হচ্ছে ।

সাম্প্রতিক সময়ে সব শর্তে উতরে গিয়ে পাকিস্তানে রমরমা ব্যবসা করতে পেরেছে সালমান খানের ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’। কিন্তু পাকিস্তানি শিশু আর ভারতীয় যুবকের নির্ভেজাল এই গল্পেও কাঁচি চালিয়েছে পাক সেন্সরবোর্ড।

কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া আকশায় কুমারের ‘বেবি নানা চেষ্টা-চরিত্র করেও পাকিস্তানে মুক্তি পাওয়ার অনুমিত পায়নি।

পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে দেখানোর জন্য নিষিদ্ধ হয় সাইফ আলি খান-কারিনা কাপুর খান অভিনীত ‘এজেন্ট ভিনোদ’। ভারতে রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করলেও পাক দর্শকেরা বঞ্চিত হন সালমান খান-ক্যাটরিনা কাইফের ‘এক থা টাইগার’- এর আনন্দ থেকে। কারণ এতে একজন আইএসআই এজেন্টের ভূমিকায় ছিলেন ক্যাটরিনা।

বিদ্রূপাত্মক কমেডি ‘তেরে বিন লাদেন’-এ অভিনয় করে মুম্বাইতে খ্যাতি পান পাক অভিনেতা আলি জাফর। কিন্তু নিজ দেশেই চলেনি তার সিনেমা। অভিযোগ উঠেছিল, পাকিস্তানি আইনব্যবস্থাকে দুর্বল হিসেবে দেখানো হয়েছে এতে।

অতিমাত্রায় যৌনতা থাকার কারণে পাকিস্তানে চলেনি বিদ্যা বালানের ক্যারিয়ারের সেরা সিনেমা ‘দ্য ডার্টি পিকচার’। অবশ্য সিনেমাটি ভারতেও প্রাপ্তবয়স্ক সনদ দিয়ে ছাড়া হয়েছিল। 

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠে আকশায় কুমারের সিনেমা ‘খিলাড়ি সেভেন এইট সিক্স’-এর বিরুদ্ধে, কারণ ‘সেভেন এইট সিক্স’ সংখ্যাগুলো ইসলাম ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এরপর সংখ্যাগুলো নাম থেকে বাদ দিয়ে সিনেমাটি পাকিস্তানে মুক্তি দেয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিল নিখাঁদ প্রেমের সিনেমা ‘রানঝানা’ও। কারণ একটাই, এতে দেখানো হয়েছে হিন্দু ছেলের সঙ্গে মুসলমান মেয়ের প্রেম।