প্রতিমন্ত্রী দাবি করেছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে প্রচারণা দেখে প্রভাবিত হয়েছেন নোবেলজয়ী এই পরিবেশবাদী।
বাগেররহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব দেশি-বিদেশি পরিবেশবাদীরা; ইউনেস্কোও এনিয়ে আপত্তি তুলেছে।
কয়েকদিন আগে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়ে এ প্রসঙ্গে কথা তোলেন আল গোর।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা নিয়ে কাজ করে আসা আল গোরের উদ্বেগ শুনে প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি বাংলাদেশে এসে সরেজমিনে প্রকল্পটি দেখে যাওয়ার আহ্বান জানান।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আল গোরের উদ্বেগের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আল গোর একটা জায়গায় বসে কথা বলছেন, যার কারণে প্রধানমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশে এসে ঘটনাস্থল দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
“ওখানে বসে ইন্টারনেটের তথ্য নিয়ে সব কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়া যায় না। বাস্তবে ঘটনাস্থলে এসে প্রাক্টিক্যালি দেখতে হবে, সেখানে ৬৯ কিলোমিটার দূরে আদৌ কোনো ক্ষতি হবে কি না?”
পরিবেশবাদীদের দাবি, সুন্দরবনের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এই বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
তাদের প্রচারের পাল্টা প্রচারও চালাচ্ছে সরকার। সরকারের দাবি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দরবনকে রক্ষা করেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।
মিট দ্য প্রেসে প্রতিমন্ত্রী নসরুল এখন কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের বিরোধিতাকারী দেশগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক সময় এই উৎস ব্যবহারের কথাও বলেন।
“বিশ্বব্যাপী রিনিউয়েবল এনার্জির (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) পক্ষে আন্দোলন চলছে। কিন্তু বিশ্ব খুব সহজে কয়লা থেকে সরে আসবে না। যে সব দেশ এখন রিনিউয়েবল এনার্জির কথা বলছেন, আল গোর বা অন্যরা যারা কথা বলছেন, তারা উন্নত দেশ হয়েছেন মূলত কয়লাকে ব্যবহার করে।”
এই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের মাথাপিছু আয় ১৪শ ডলার। ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসসহ যেসব দেশ রিনিউয়েবল এনার্জির পক্ষে কথা বলছে, তাদের মাথাপিছু আয় ২২ হাজার ডলারের উপরে।
“তাদের বিদ্যুতের ব্যবহার ১৭ হাজার কিলোওয়াট পার আওয়ার, আর আমাদের বিদ্যুতের ব্যবহার সাড়ে তিনশ কিলোওয়াট পার আওয়ার। সুতরাং আকাশ এবং পাতালকেও উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যাবে না।”
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিবেশবাদীরা এখন এই প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও সময়মতো ঠিকই মেনে নেবে।
“এর আগে যমুনা সেতু নির্মাণের সময়ও বিরোধিতা হয়েছে। যমুনা সেতুর কারণে নদীর চর পড়ে কিছু ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? এই সেতুটি অযৌক্তিক কিছু? পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে ইলিশের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যাবে বলেও পরিবেশবাদীরা আওয়াজ তুলেছিল। এটা ঠিক, পাইলিংয়ের সময় ইলিশের চলাফেরার কিছু ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর প্রয়োজনীয়তা কি কমে গেছে?”
সুন্দরবনেরও ক্ষতি হবে না দাবি করে নসরুল বলেন, “আমরা পরিবেশকে সাথে নিয়েই, পরিবেশ আইন মেনে এই ডেভেলপমেন্ট করার পক্ষে।”
ডিআরইউর সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী।
বিশ্ব বাজারে তেলের দামের হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে পরিকল্পনা থাকলেও এই মুহূর্তে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত ‘থেমে আছে’ বলে জানান জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।