জলবায়ু পরিবর্তন: ১০ কোটি চরম দরিদ্র, ৫০ কোটি ঘরহারার শঙ্কা

কার্বন নিঃসরণ লাগামহীনভাবে চলতে থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ১০ কোটির বেশি মানুষ চরম দরিদ্র এবং ৫০ কোটির বেশি মানুষ গৃহহীন হতে পারে বলে নতুন দুটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।   

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2015, 06:33 PM
Updated : 13 Nov 2015, 03:21 PM

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘের ২১তম বৈশ্বিক সম্মেলন (কপ ২১) সামনে রেখে প্রতিবেদন দুটি প্রকাশ করা হয়েছে।

আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ফ্রান্সের লে বুর্গে এই সম্মেলন হবে।

রোববার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন দরিদ্রদের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত যে কোনো নীতিতে দারিদ্র্য নিরসনের পদক্ষেপ থাকতে হবে।

এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে আগামী ১৫ বছরে ১০ কোটির বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারা আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

জলবায়ুজনিত ঘটনাবলী এরইমধ্যে দারিদ্র্য নিরসন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে বলে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শস্যের ক্ষতি, খাদ্যপণ্যের দামসহ কৃষিতে অন্যান্য নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যেগুলো অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানিবাহিত রোগ ও ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত ১৫ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরিতে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্টেফানে হেলেগেট বলেন, “প্রতিবেদনে এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, দারিদ্র্য নিরসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা আলাদাভাবে করা যাবে না-যদি একসঙ্গে দুটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া হয় তাহলেই এগুলো অর্জন করা সহজ হবে।”

জলবায়ু পরিবর্তন ও এর নানা প্রভাব নিয়ে কর্মরত ক্লাইমেট সেন্ট্রালও রোববার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কার্বন নিঃসরণের কারণে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এই পরিমাণ ভূমি প্লাবিত হতে পারে, যেখানে বর্তমানে ৭৬ কোটি মানুষের বসবাস রয়েছে।

বড় মাত্রায় কার্বন নিঃসরণের রাশ টেনে ধরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ১৩ কোটিতে নেমে আসতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ১০টি শহরের সবগুলোই এশিয়ায়। এগুলোর মধ্যে ঢাকা ছাড়াও কলকাতা, মুম্বাই, হং কং, সাংহাই, জাকার্তা ও হ্যানয় রয়েছে।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী চীনের ঊপকূল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বলে ক্লাইমেট সেন্ট্রাল মনে করছে।

৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে চীনের সাড়ে ১৪ কোটি এবং ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ছয় কোটি ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে প্লাবিত এলাকা অর্ধেকে থাকবে।

এশিয়ার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকার কথা জানিয়ে এতে বলা হয়, বর্তমানে দেশটির প্রায় আড়াই কোটি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছেন।