চলে গেলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ

চলে গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। ৪৯ বছর বয়সে তার এই মৃত্যুকে অকালপ্রয়াণ হিসেবে আখ্যায়িত করে শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির চলচ্চিত্র জগতের অনেক ব্যক্তিত্ব। খবর এনডিটিভির।

ইরা ডি কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2013, 04:23 AM
Updated : 30 May 2013, 04:24 AM

জাতীয় পুরস্কার জয়ী কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ ৩০ মে কলকাতার বাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তার সহকর্মী গৌতম ঘোষ জানান, তিনি অগ্নাশয়ের প্রদাহ জনিত রোগেও বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন।

৪৯ বছর বয়সি ওই পরিচালকের এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন তার সহকর্মী এবং বন্ধুরা। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে উপস্থিত হন তাদের অনেকেই।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এক শোকবার্তায় বলেছেন, “বঙ্গ হারালো তার এক স্বর্ণ সন্তানকে।”

ঋতুপর্ণের এই মৃতুকে ‘বিশাল বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। ওদিকে পরিচালক শেখর কাপুর টুইট করেছেন, “ঋতুপর্ণের মৃত্যুর খবরে পুরোপুরি স্তম্ভিত। কিছুদিন আগেই এক আড্ডায় তিনি বলেছিলেন সিনেমাকে ‘পরবর্তী ধাপে’ নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের কথা। ভারতের চলচ্চিত্র জগতের মহান এক চরিত্র ছিলেন তিনি।”

অভিনেতা অনুপম খের বলেন, “অসাধারণ রসিক মানুষ ছিলেন ঋতুপর্ণ। মানবচরিত্রকে খুব ভালোভাবে পড়তে পারতেন তিনি। তাকে এবং তার সিনেমাকে আমরা সবাই মিস করবো।”

এদিকে, মৃত্যুর দুই দিন আগেই টুইটারের মাধ্যমে নিজের পরবর্তী সিনেমা ‘সত্যান্বেষী’র ঘোষণা দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। নিজের ক্যাব্যিক লেখনিতে ওই টুইটে জানিয়েছিলেন, নিজের ২০তম এই ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটির শুটিং পরবর্তী কাজ গোছাতে ব্যস্ত তিনি।  

নয় বছরের ক্যারিয়ারে মোট ১৯টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন ঋতুপর্ণ; অর্জন করেছেন ১২টি জাতীয় পুরস্কার। এর মধ্যে হিন্দী ভাষার ‘রেইনকোট’ এবং ইংরেজি ভাষার ‘দ্যা লাস্ট লিয়ার’ ছাড়া বাকি সবগুলোই বাংলা ভাষায় নির্মিত।

১৯৯৪ সালে ‘হিরের আংটি’র মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন ঋতুপর্ণ। একই বছর তিনি নির্মাণ করেন ‘ঊনিশে এপ্রিল’ সিনেমাটি; সে বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে সেরা ফিচার সিনেমার পদক জয় করে এটি।

এছাড়াও তার পচিালিত ‘দহন’, ‘উৎসব’, ‘দোসর’, ‘দি লাস্ট ইয়ার’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ এবং ‘আবহমান’ সিনেমা জয় করেছে  জাতীয় পুরস্কার। ঐশ্বরিয়া রাই তার সঙ্গে ‘চোখের বালি’ এবং ‘রেইন কোট’ সিনেমায় কাজ করেছেন। ‘চোখের বালি’ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ এবং রাইমা সেন। সিনেমাটি সে বছর বাংলায় সেরা ফিচার ফিল্ম হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার জয় করে। অন্যদিকে অজয় দেবগান অভিনীত ‘রেইন কোট’ সিনেমাটি জিতে নেয় সেরা হিন্দী ফিচার ফিল্মের জাতীয় পুরস্কার। তার একমাত্র ইংরেজি সিনেমা ‘দ্যা লাস্ট লিয়ার’- এ অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ২০০৭ সালে সিনেমাটি জয় করে নেয় ‘সেরা ইংরেজি ফিচার ফিল্ম’ এর জাতীয় পুরষ্কার।

২০১০ সালের বিগ বাংলা মুভি অ্যাওয়ার্ডে দশর্কদের ভোটে ‘সর্বকালের সেরা পরিচালক’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঋতুপর্ণ।

২০১২ সালে ‘চিত্রাঙ্গদা’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কারে ঋতুপর্ণ বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড পান। সিনেমাটি মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা চরিত্রটিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো। পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্য রচনা এবং এর কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর একটিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।

পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে নিজের অনুপ্রেরণা হিসেবে তুলে ধরতেন ঋতুপর্ণ। তিনি বলেছেন, “যদি চলচ্চিত্র নির্মাণে কেউ আমাকে অনুপ্রাণিত করে থাকে তিনি হলেন সত্যজিৎ রায়।”