ভারতের অনুদানের পুরোটাই পেয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প

একশ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির আওতায় ২০ কোটি ডলার অনুদানের পুরোটাই ছাড় করেছে ভারত এবং এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2015, 01:26 PM
Updated : 15 July 2015, 01:31 PM

গত জুন মাসের শেষ দিকে ভারত সর্বশেষ কিস্তির ৫ কোটি ডলার ছাড় করে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতীয় অনুদানের সব অর্থই পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে। তাই এ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে জমা হয়েছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতীয় অনুদানের ২০ কোটি ডলারের পুরোটাই আমরা বুঝে পেয়েছি। এখন সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই অর্থ খরচ করবে।”

পদ্মা পাড়ে চলছে দেশের দীর্ঘতম সেতুর নির্মাণ কাজ- ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

চার বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার এই ঘোষণা আসে।

দীর্ঘ জটিলতার পর বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় তিনশ’ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। সেতু নির্মাণের কাজটি পেয়েছে চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়িারিং কোম্পানি।

রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোকে সড়ক যোগাযোগে যুক্ত করতে পদ্মা নদীর উপর ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক হয়েছে।

নতুন ঋণে কাজ শুরুর তাগিদ

গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় যে ২০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন শুরুর তাগিদ দিয়েছে দেশটি।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সঙ্গে দেখা করে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ এই তাগিদ দেন, যা চিঠি দিয়ে ইআরডিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইআরডি সচিব মেজবাহ উদ্দিনের কাছে ভারতীয় দূতাবাসের পাঠানো অন্য একটি চিঠিতে নতুন দুটি প্রকল্প তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে।

চুক্তির সময় ১৩টি প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। এখন নতুন দুটিসহ ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের তালিকা ১৫টিতে উন্নীত হচ্ছে।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আসিফ-উজ-জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতীয় ঋণের অর্থায়নে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পগুলোর কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

“তবে প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের বিষয়ে ভারতীয় ঋণদান কর্তৃপক্ষ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে। এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।”

ঢাকা সফরে ভারতীয় ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়িত কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নতুন যে দুটি প্রকল্প তালিকাভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, তার একটি হচ্ছে ঈশ্বরদী ইন্টার কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ, অন্যটি হচ্ছে বিলুনিয়া থেকে ফেনী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ।

আগের তালিকাভুক্ত ১৩ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ থেকে ১৮২ কোটি ৬৮ লাখ ডলার জোগান দেওয়ার কথা। বাকি ১৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার নতুন দুই প্রকল্পে যাবে।

তিনটি প্রকল্পকে ভারত অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপকে ক্যারেজ ওয়ার্কশপে উন্নীত করা, আশুগঞ্জ নদী বন্দর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার স্থল বন্দর সড়ক নির্মাণ এবং আশুগঞ্জ নদীবন্দরের আভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ।

এর মধ্যে সৈয়দপুরে ক্যারেজ ওয়ার্কশপ নির্মাণে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কের জন্য ২৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার, আশুগঞ্জে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার জোগান দেওয়া হবে।

ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বিআরটিসির জন্য ৫০০ ট্রাক সংগ্রহ, বিআরটিসির জন্য দোতলা ও আর্টিকুলেটেড বাস সংগ্রহ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা।  

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) উচ্চ শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, ১২টি জেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পও অর্থ পাবে ভারতের ঋণ থেকে।

বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৪০০ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পও এর মধ্যে রয়েছে।

খুলনা থেকে দর্শনা, পার্বতীপুর-কাওনিয়া  ডাবল রেল লাইন স্থাপন প্রকল্পেও ভারতীয় ঋণের অর্থ পাবে।

৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আধুনিকায়নে ভারতীয় ঋণ থেকে ২৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জোগান দেওয়া হবে।

এছাড়া চারটি মেডিকেল কলেজ এবং একটি জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পও এর মধ্যে রয়েছে।