সাংসদদের বরাদ্দ বাড়ল ৫ কোটি টাকা

উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যরা আগের চেয়ে বছরে এক কোটি টাকা করে বেশি পাবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2015, 03:21 PM
Updated : 7 July 2015, 07:20 PM

এ জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২’ নামে একটি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে প্রতি এমপি বছরে ৩ কোটি টাকা করে মোট ১৫ কোটি টাকা পেলেও মূল্যস্ফীতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় এবার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এতে সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদে সাংসদদের বরাদ্দ বেড়েছে পাঁচ কোটি টাকা।

সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টসহ গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারবেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২৮৪ জন সংসদ সদস্যকে এ বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সিটি করপোরেশন এলাকার ১৬ জন সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা বরাদ্দ পাবেন না।

সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা থাকায় তাদের তালিকায় রাখা হয়নি। 

মুস্তফা কামাল জানান, একনেক সভায় মোট আটটি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্য থেকে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা আর সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯৫ কোটি টাকার জোগান দেওয়া হবে।

তিনি জানান, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

এই প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, বরাদ্দকৃত অর্থ সংসদ সদস্যরা নিজেরা সরাসরি ব্যয় করতে পারবেন না। তারা তাদের পছন্দমতো তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেসব বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্পটির অধীনে ৪৬৬ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং ৬ হাজার ১৭৩ কিলোমিটার গ্রাম সড়কের উন্নয়ন করা হবে। সেই সঙ্গে ৪ হাজার ৫৯৭ কিলোমিটার পল্লী সড়কও হবে রক্ষণাবেক্ষণ।

এদিকে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি ও মানব পাচার ও মাদক দ্রব্যের চোরাচালান বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

একনেকে এ সংক্রান্ত দুটো প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্প নতুন এবং অপরটি সংশোধিত। অনুমোদিত প্রকল্প দু’টির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, ‘বর্ডার ম্যানেজম্যান্ট ইক্যুইপমেন্ট ফর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (প্রথম সংশোধিত)’ নামে প্রকল্পের আওতায় বিজিবির জন্য জিএসপি মেশিন উইথ কলিগ পজিশন, থার্মাল ইমেজিং বাইনোকুলার, ফগার মেশিন, নাইট ভিশন গগলস, স্যাটেলাইট ফোনসহ প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস কেনা হবে।

অপরদিকে, ‘সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র ৬০টি বিওপি নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় সীমান্ত এলাকায় ৬০টি বর্ডার আউটপোস্ট নির্মিত হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আমাদের সীমান্তে সর্বমোট ৮৮৩টি ক্যাম্প রয়েছে। এরমধ্যে ৬৬৭ টি ক্যাম্পের ভবন ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের একুশটি সীমান্তবর্তী জেলার ৬০টি ক্যাম্পের ভবন নির্মাণ করা হবে। ফলে বিজিবির সদস্যগণ স্বাস্থ্য সম্মত ও নিরাপদ আবাসন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।”

পুলিশ বাহিনীর ১৯টি পুরোনো অস্ত্রাগারের স্থলে পর্যাপ্ত সুবিধা সম্পন্ন আধুনিক অস্ত্রাগার নির্মাণে সভায় ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

অপরদিকে, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ছয়টি নতুন জাহাজ কিনতে একটি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বর্তমানে ৮টি জাহাজ রয়েছে। এদের গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি। অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় বিএসসি ৬টি জাহাজ ক্রয় করবে। এর মধ্যে তিনটি তেলবাহী জাহাজ এবং বাকি তিনটি পণ্যবাহী জাহাজ। প্রতিটি জাহাজের ধারণ ক্ষমতা ৩৯ হাজার টন।

এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।