সরকারি সংস্থাটি বলছে, “বাংলাদেশের নারী ও শিশুদের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক সূচকে গ্রাম ও শহর অঞ্চলের পরিবারগুলোর মধ্যে বিরাট বৈষম্য বিদ্যমান।
মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিক্স) শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বিবিএস। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ড. দিপঙ্কর রায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “ধনী পরিবারের একজন সদস্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, দরিদ্র পরিবারের একজন সদস্য তার ছিটেফোঁটাও পান না। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পয়ঃনিষ্কাশনসহ অন্যান্য সূচকে ধনী পরিবারের সদস্যরা অনেক এগিয়ে।”
উদাহরণ হিসেবে বিবিএস বলছে, দেশে এখন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪২ শতাংশই খর্বাকৃতির। খর্বাকৃতি এসব শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৫৩ শতাংশ) দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। আর ২৭ শতাংশ ধনী পরিবারের শিশুদের খর্বাকৃতি দেখা গেছে।
জেলাভিত্তিক জরিপে খর্বাকৃতির হার নেত্রকোণায় সবচেয়ে বেশি এবং মেহেরপুরে সবচেয়ে কম বলে দেখা যায়।
৭৪ শতাংশ দরিদ্র পরিবার সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী পাশে পান না বলে জরিপে দেখা যায়। এর ফলে দরিদ্র পরিবারে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারও বেশি বলে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে ৭৩ শতাংশ ধনী পরিবারই সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী পান বলে বিবিএস বলছে।
দরিদ্র পরিবারে বাল্যবিয়ের হার বেশি বলে দিপঙ্কর রায় তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
দরিদ্রদের ৫৩ শতাংশ পরিবারে ১৮ বছরে আগেই মেয়েদের বিয়ের ঘটনা পাওয়া গেছে। ১৮ শতাংশ পরিবারে বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে।
দেশে এখন মাত্র চার শতাংশ মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে জরিপে তথ্য পেয়ে তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দিপঙ্কর রায়।
৯৬ শতাংশ ধনী পরিবার উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা ব্যবহার করছে। সেখানে ৪৬ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের উন্নত পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা রয়েছে।
পয়ঃনিষ্কাশনের দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে মাদারীপুর। আর সবচেয়ে নিচে রয়েছে বান্দরবান।
ইউনিসেফের সহযোগিতায় ৬৪ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার পরিবার থেকে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, বিবিএস মহাপরিচালক আবদুল ওয়াজেদ, ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।