৭% প্রবৃদ্ধি অলীক স্বপ্ন নয়: মুহিত

সাত শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জন বর্তমান বাংলাদেশের জন্য কোনো ‘অসম্ভব কল্পনা’ কিংবা ‘অলীক স্বপ্ন’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 04:10 PM
Updated : 29 June 2015, 04:59 PM

সোমবার জাতীয় সংসদে নিজের দেওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের উপর সমাপনী বক্তৃতায় মুহিত বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন।

মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বাধাকেই বড় করে দেখেছে। এটি হল রাজনৈতিক সুস্থিতি।

“দেশের জনসাধারণের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সুবিবেচনা চলমান রাজনৈতিক সুস্থিতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে, এ প্রত্যাশা করা অমূলক হবে না বলেই আমি মনে করি। কাজেই ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন বর্তমান বাংলাদেশের জন্য কোনো অসম্ভব কল্পনা কিংবা অলীক স্বপ্ন নয় বলে আমি মনে করি।”

গত ৪ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেই বাজেটের উপর গত কয়েক ধরে ২১৯ সংসদ সদস্য ৫৭ ঘণ্টা আলোচনা করেন।

ওই বাজেটে অর্থমন্ত্রী জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্থমন্ত্রী ধরেছেন ৭ শতাংশ। বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, অর্জিত হয়েছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

সোমবার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পর বাজেটের উপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন।

এরপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো গ্রহণ করে ‘সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনে আনীত অর্থবিল-২০১৫’ সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

মঙ্গলবার পাস হবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট। আগামী ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের শুরুতে এই বাজেট কার্যকর হবে।

নিজের দেওয়া বাজেটকে ‘উচ্চাভিলাষী’ স্বীকার করে নিয়ে মুহিত বলেন, “আমাদের বিগত বছরের বাজেটের পরও একই সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

“২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০১৯-২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি। এ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বাজেটের আকার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে হবে। কাজেই আমাদের বাজেট কিছুটা উচ্চাভিলাষী হবে সেটাই স্বাভাবিক।”

টানা সাতটি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করা মুহিত বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৪.৩ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে জিডিপি'র ১৭.২ শতাংশ করা হয়েছে।

বিগত অর্থবছরগুলোতে দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের গড় সক্ষমতা ৯১ শতাংশ। এই সক্ষমতা এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে।

“আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা আছে বিধায় ২০০৮-০৯ সালে যে বাজেট ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার তাকে আমরা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পেরেছি।”

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, অনেকে সংশয় প্রকাশ করলেও তাও পূরণে আশা্বাদী মুহিত।

“গত দু-তিন বছরে বিভিন্ন সময়কালে অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে বাজেটের লক্ষ্যানুযায়ী রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় সম্ভব হয়নি। কিন্তু এটা বাজেটের আর্থিক কাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ করে না। অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রভাব প্রমিত প্রক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় বিবেচনা করা দুরূহ।”

যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় ছিল তখন বাজেটের লক্ষ অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে বলে তথ্যও সংসদে উপস্থাপন করেন মুহিত।

২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭ শতাংশই অর্জিত হয়েছিল।

“অর্থাৎ স্বাভাবিক বছরগুলোতে আর্থিক কাঠামোর তেমন কোনো দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়নি, এটাই তার প্রমাণ,” বলেন তিনি।

বাজেট ঘাটতি নিয়ে সমালোচনাকে ‘অহেতুক’ বলে উড়িয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বলা হচ্ছে, বাজেট ঘাটতির আকার অনেক বড়, ঘাটতি অর্থ সংস্থানে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ গ্রহণ করলে তাতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইত্যাদি।

“এবারের বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ। সরকারের প্রাজ্ঞ রাজস্বনীতি অনুসরণের ফলে বাজেট ঘাটতি কখনোই গত ছয় বছরে জিডিপির ৫ শতাংশ অতিক্রম করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০০৯-১০ হতে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি ছিল গড়ে জিডিপির ৩.৬ শতাংশ।”

বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় পরিমিত বলেও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলেন মুহিত।

“২০১৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত (৭.২), শ্রীলংকা (৫.৯) ও মালদ্বীপ (১০.৬) বাজেটে ঘাটতির তুলনায় আমাদের বাজেট ঘাটতি বেশ কম।”

ঘাটতি অর্থায়নের মাধ্যমে প্রাক্কলিত বাজেট বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সার্বিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক অনেক কার্যক্রম সংকোচনের প্রয়োজন পড়ত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মুহিত বলেন, “শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বৈরিতা এবং এক ধরনের নির্বোধ দেশশত্রুতার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

“সকল প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ করে আমাদের কর্মঠ, কষ্টসহিঞ্চু, সাহসী ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা সাধারণ জনগণ তাদের শ্রম, মেধা, প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতা দিয়ে এই অগ্রগতির চাকা সচল রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের এই অগ্রযাত্রা থাকবে নিয়ত সঞ্চরণশীল। আমি বরাবরই এদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। আবারও পুনরাবৃত্তি করব যে, আমি অশোধনীয় আশাবাদী।”