এলো শিশু বাজেট

শিশুদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের শিশু সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে প্রথমবারের মত ‘শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2015, 06:16 PM
Updated : 4 June 2015, 06:16 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “শিশুদের চাহিদা পূরণ, অধিকার ও কল্যাণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কর্মসূচি, উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এতে।”

গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শিশু বাজেট উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুহিত।

তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে শিশুদের উন্নয়নে যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বা যে সব কার্যক্রম গ্রহণ ও নীতিকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে ‘শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনায়’ সে সব বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।

একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু বাজেট প্রণয়ন করতে হলে সব মন্ত্রণালয়ের শিশুকল্যাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে বিবেচনায় নিতে হবে জানিয়ে মুহিত বলেন,সবার আগে এসব কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ এবং তাদের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য একটি উপযুক্ত কাঠামো প্রণয়ন প্রয়োজন।

এসব কাজ পর্যায়ক্রমে শেষ করার আশা প্রকাশও করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন,আগামী জুলাই মাস থেকে সরকার ‘স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি ফর চাইল্ড ফোকাসড বাজেটিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শিশুদের কল্যাণে বরাদ্দকৃত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ ও শিশু খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলেও মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

দেশের সামগ্রিক বাজেটে প্রথমবারের মতো আলাদাভাবে শিশু বাজেট দেওয়া হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে। তবে পৃথকভাবে কোনো বাজেট বরাদ্দ না দিয়ে বরং শিশুদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় এমন কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিশু বাজেটের অধীনে।

প্রথমবারের মতো শিশু বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন, দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার প্রণীত প্রতিবেদনসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে সুনির্দিষ্টভাবে শিশুরা সরাসরি উপকৃত হয় এমন প্রকল্প, কর্মসূচি ও কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুনরায় মন্ত্রণালয়সমূহের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রথম ভাগে শিশু স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ১ হাজার ৫১৬ কোটি ৯৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সামগ্রিক বাজেটের মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৪-১৫ সালের বাজেটে সংশোধিত বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪০৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

দ্বিতীয় ভাগে শিশু শিক্ষায় বিনিয়োগ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ৯ হাজার ৬৪৬ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালের বাজেটে সংশোধিত এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ১৮৮ কোটি ৫০ লাখ ২০০ হাজার টাকা।

এই ভাগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১৩ হাজার ৯১২ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ২৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

এই ভাগে মোট বরাদ্দের পরিমাণ সামগ্রিক বাজেটের ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯১ কোটি।

তৃতীয় ভাগে শিশু সুরক্ষা, কল্যাণ ও বিকাশে বিনিয়োগ হিসাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ৪৬৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্বাব করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৩৬৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

এই ভাগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩১২ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

এই ভাগে মোট বরাদ্দের পরিমাণ সামগ্রিক বাজেটের ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল মোট বাজেটের ১ দশমিক ৮ শতাংশ।