‘বাজেট সিগারেট কোম্পানির জন্য উৎসাহের’

প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না বাড়ানোয় সিগারেট কোম্পানিগুলোকে বাজেটে ‘উৎসাহ’ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তামাকবিরোধী সংগঠকরা।   

নূরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2015, 03:21 PM
Updated : 4 June 2015, 03:21 PM

বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ধূমপানের কারণে নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেন এবং করবৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।

তামাকবিরোধী সংগঠকরা করবৃদ্ধিকে যৎসামান্য মন্তব্য করে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

মন্ত্রী তার বক্তৃতায় জর্দার মতো ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্যের বিষয়ে কিছু বলেননি।

চলতি বাজেটে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিবেচনায় তামাকজাত পণ্যে এক শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে তাও রাখা হয়নি।   

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বললেন, “অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। তবে সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক সে অনুপাতে বাড়ানো হয়নি।”

“প্রকৃত অর্থে সিগারেট মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য হয়েছে। এই বাজেট ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে ব্যর্থ।” 

বাজেটে ১০ শলাকার বর্তমান মূল্যস্তর ৯০ ও তদূর্ধ্ব টাকা থেকে কমিয়ে উচ্চমান ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূল্যস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৬১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ শতাংশ করা হয়েছে।

মধ্যম মানের সিগারেটের ক্ষেত্রে বর্তমান মূল্যস্তর ৫০-৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে মধ্যমান ৪০-৬৯ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক আগের মতোই ৬১ শতাংশ রাখা হয়েছে।

নিম্নস্তরের সিগারেটের মধ্যে বর্তমান ৩২.৫০-৩৫ টাকার মূল্যস্তর নিম্নমান ২০-৩৯ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এই স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্কও অপরিবর্তি রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ।

১৫-১৬.৫০ টাকার বর্তমান মূল্যস্তরকে নিম্নতম ১৯ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান করভার ৪৩ শতাংশ থেকে বড়িয়ে ৪৮ শতাংশ করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এই খাতে বিদ্যমান করহারে তেমন কোনো সংস্কারের প্রস্তাব রাখা হয়নি।

বর্তমানে ২৫ শলাকার ফিল্টারবিহীন বিড়ি ও ২০ শলাকার ফিল্টারযুক্ত বিড়ির দাম যথাক্রমে ৬ টাকা ১৪ পয়সা ও ৬ টাকা ৯২ পয়সা। এই দুই ধরনের বিড়ির দাম বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬ পয়সা ও ৭ টাকা ৯৮ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারে বিড়ি সহজলভ্য হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ তা গ্রহণ করছেন, যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থেকে যাচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠী।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ সালে বিড়ি ও সিগারেট শিল্পের আকার ছিল ১৪ হাজার ২২৮ কোটি শলাকা, যার মধ্যে শুধু সিগারেট সাত হাজার ৯৬৮ কোটি শলাকা এবং বিড়ি ছয় হাজার ১১০ কোটি শলাকা।

এ হিসেবে বাজারের ৫৬ শতাংশ দখল করে আছে সিগারেট, আর বিড়ি বাকি ৪৪ শতাংশ।

নতুন বাজেটে সিগারেট শিল্পের সবার জন্য করপোরেট টেক্স ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।

এর আগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই হারে কর দিতে হতো।

তামাক ব্যবসায়ীদের ‘যথেষ্ট চতুর’ অভিহিত করে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক জুবায়ের বলেন, “এই করহার তামাক শিল্পকে নিয়ন্ত্রণে আরোপ করা হয়েছে। তবে তা সিগারেটের দামের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।