২০ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে বাজেট প্রস্তাব মুহিতের

অর্থনীতির নানা সূচকে স্বস্তির সুবাতাসের মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2015, 10:05 AM
Updated : 4 June 2015, 01:28 PM

বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বাজেটে ব্যয়ের এই ফর্দ আকারের দিক দিয়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বড়।

২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে এবার মূল বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।

এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা; যার ৯৭ হাজার কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। উন্নয়ন ব্যয়ের এই পরিমাণ জিডিপির ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।

আর অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১.৫ শতাংশ। এই ব্যয়ের বড় একটা অংশই যাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশনে। এর সঙ্গে বিদেশি ঋণের পুঞ্জীভূত সুদ মেটানোর দায়ও রয়েছে।

এই বিশাল ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে জনগণের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে জরিপ করে পাওয়া নতুন কয়েক লাখ করদাতাকে করজালে নিয়ে এস রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা তিনি সংসদে তুলে ধরেছেন।

খাত ধরে ধরে মোট ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের আশা করছেন মুহিত, যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)  আয়কর, আমদানি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার যোগান দেবে।

আর এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ৫ হাজার ৮৭৪  কোটি এবং ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা কর বহির্ভূত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন মুহিত।

এই হিসাবে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি থাকছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ।

বরাবরের মতোই বিদেশি ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ থেকে এই ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা দিয়েছেন মুহিত।    

বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে ৩০ হাজার ১১৪ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৫৫ হাজার ৫২৩ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংক থেকে ধার করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।

এছাড়া ব্যাংক বহির্ভূত উৎস ও জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে মোট ১৮ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা করছেন। 

নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে তুলে ধরে মুহিত বলেন, “বৈদেশিক সহায়তার যে বিশাবল পাইপ লাইন গড়ে তোলা হয়েছে সেখান থেকে ব্যয় বাড়লে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা যথেষ্ট কমানো সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাব, যাতে অন্তত আগামী বছরের বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের হার বাড়ানো যায়।”

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে মুহিতের বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো বাংলাদেশের বাজেট উপস্থাপনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হলেন তিনি।  

শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে এর আগে ছয় বার বাজেট দিয়েছেন তিনি। আর ব্যক্তিগতভাবে এটি তার নবম বাজেট।

নতুন বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা। অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, আসন্ন নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বাড়বে।

সেই সঙ্গে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন মুহিত।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বাজার মূল্যে দেশের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা ছিল।