শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের তথ্য সংগ্রহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থ মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করতে ব্যাংক খাতের গত ১৪ বছরের শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2015, 02:04 PM
Updated : 27 May 2015, 02:08 PM

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বাংলাদেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে এই তথ্য ৩১ মের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়।

২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবের আগে এই তথ্য চাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ধারণা, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এই বিষয়ে কিছু বলতে পারেন।

প্রতিটি ব্যাংককে ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের শীর্ষ ৫০ জন ঋণ খেলাপির তথ্য দিতে বলা হয়েছে। ফলে একটি ব্যাংক থেকে ১৪ বছরের জন্য আলাদা তালিকায় ৭০০ জন ঋণ খেলাপির তথ্য পাঠাতে হবে।

এক বছর কারও সম্পর্কে তথ্য দিলে পরের বছরের তালিকায় তাকে বাদ দিয়ে ৫০ জনের ওই তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খেলাপি গ্রাহক ও ঋণের কী কী তথ্য পাঠাতে হবে সেজন্য একটি ছকও পাঠানো হয়েছে চিঠির সঙ্গে। তাতে ঋণ ও ঋণ গ্রহিতা সম্পর্কিত ২৩ ধরনের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ গ্রহিতার নাম-ঠিকানা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ, সুদের পরিমাণ, পুনঃতফসিলের সংখ্যা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েনিন্টফোর ডটকমকে বলেছেন, “জাতীয় সংসদে খেলাপি ঋণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী এক ডিও লেটার দিয়ে ঋণ খেলাপিদের তালিকা শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করার মত দেন। একইসঙ্গে তিনি কিছু তথ্যও চান।

“কিন্তু আইন অনুযায়ী, সব তথ্য এভাবে প্রকাশ করা যায় না। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ভেবে-চিন্তে প্রতিবছরের প্রত্যেক ব্যাংকের ৫০ জন শীর্ষ ঋণখেলাপির তথ্য চেয়েছে। এসব তথ্য নিয়ে সরকারকে দেওয়া হবে। সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”

২০০১ সাল থেকে তথ্য কেন চাওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, “২০০১ হচ্ছে নতুন শতাব্দির প্রথম বছর। এটি একটি ভিত্তি বছর। এজন্যই।

“এছাড়া এই সময়কালে বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ- সব ধরনের সরকার ক্ষমতায় ছিল। কোন সরকারের সময়ে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি কী ছিল, সেটাও বোঝা যাবে।”  

গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া এক চিঠিতে ঋণ খেলাপিদের শ্বেতপত্র প্রকাশের পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তখনই তিনি ঋণ খেলাপিদের তথ্য জানতে চান।

চিঠিতে (ডিও লেটার) অর্থমন্ত্রী বলেন, “খেলাপি ঋণ নিয়ে জাতীয় সংসদে হৈ চৈ হয়েছে। অনেক সাংসদ অভিযোগ করেছেন, বড় খেলাপি হলে বড় সুবিধা পাওয়া যায়। সাংসদরা মনে করেন, এ বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা যেতে পারে। আমিও মনে করি, স্বচ্ছতার খাতিরে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা যায়।”

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে এক চিঠি পাঠিয়ে খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছিলেন মুহিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এই খেলাপি ঋণের সিংহভাহ মন্দ বা কু ঋণ, অর্থাৎ যে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে এরকম ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ১৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে রাখার নানা চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালা শিথিল করে নামমাত্র ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়েছে। তারপরও খেলাপি ঋণ কমেনি।