খুলনা-মংলা বন্দর রেলপথের ব্যয় ১২১% বেড়েছে

ভারত সরকারের ঋণে খুলনা শহর থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2015, 01:55 PM
Updated : 26 May 2015, 01:56 PM

২০১০ সালে যখন এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়, তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশোধন করে প্রকল্পটি ফের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এতে প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৮১ কোটি টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে।

সংশোধিত এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ভারত সরকার ঋণ সহায়তা হিসেবে দেবে ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।

প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সভার পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “রেলপথের এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের ফলে রূপসা নদীতে প্রায় ৭১৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি রেলসেতু নির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে রেললাইনের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।”

খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ এবং ২১ কিলোমিটার লুপ লাইন তৈরি করতে নতুন করে কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে বলেও ব্যয় বেড়েছে বলে জানান তিনি।

সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী, মোট ব্যয়ের মধ্যে নির্মাণ কাজে (রূপসা রেলসেতুসহ) খরচ হবে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ৬৭৮ একর ভূমি অধিগ্রহণে খরচ হবে ১ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে অন্য খরচও রয়েছে।

একই সঙ্গে ভারত সরকারের ঋণ সহায়তায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত রেললাইনের সংস্কার সংক্রান্ত একটি প্রকল্পও মঙ্গলবারের একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটিকে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ৬৭৮ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, মোট ব্যয়ের মধ্যে ৫৫৬ কোটি টাকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে দেবে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১২২ কোটি টাকা।

ট্রেন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এ রেলপথটি ২০০২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে।

৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ রেলপথটিকে আরও ৯ কিলোমিটার বাড়িয়ে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত করে চালু করলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওযার্ক উভয়ের সঙ্গেই যুক্ত হতে পারবে।

এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে বলে সরকার আশা করছে।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের সময় ১ শতাংশ সুদে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার ঋণ দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়।

ওই অর্থে রেল খাতের এই দুটি প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।

১০০ কোটি ডলারের এই ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতুতে ব্যয় করতেও সায় দিয়েছে ভারত সরকার।

চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে আরও অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভারত আরও ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দিতেও রাজি হয়েছে।

মিল্কভিটায় গুঁড়ো দুধ তৈরির নতুন প্ল্যান্ট

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত মিল্কভিটায় গুঁড়ো দুধ তৈরির আরও একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এজন্য ‘সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন’ নামে ৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে একনেকের মঙ্গলবারের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

সরকার পরিচালিত সমবায় দুগ্ধ খামার মিল্কভিটা ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, নতুন এ প্ল্যান্টটি হলে গুঁড়ো দুধের উৎপাদন দৈনিক ২৫ মেট্রিক টন বাড়বে। তা বাংলাদেশের গুঁড়ো দুধের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ আমদানি করে। সে হিসেবে গড়ে দৈনিক আমদানির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫৯ মেট্রিক টন।

মিল্কভিটায় গুঁড়ো দুধ তৈরির জন্য এখন একটি প্ল্যান্ট রয়েছে, যার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ১২ মেট্রিক টন।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, শাহজাদপুরে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৫ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মিল্কভিটা আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে, যা দিয়ে তারা পাস্তুরিত তরল দুধ, গুঁড়ো দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করে।

কিন্তু অবশিষ্ট দুধ বাজারজাতকরণে সমস্যায় পড়েন ক্ষুদ্র খামারিরা। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত  দুধ উৎপাদনের মৌসুমে অতিরিক্ত দুধ বাজারজাতকরণের এই সমস্যা দেখা দেয়।

“সেই সাথে বর্ষা মৌসুমের যাতায়াত সমস্যা তো আছেই। সেজন্যই এ এলাকায় দৈনিক উৎপাদিত ২ লাখ লিটার কাঁচা দুধ প্রক্রিয়াকরণ করে দৈনিক ২৫ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ উৎপাদন করা হবে। এতে দুধের খামারিদের স্বার্থ যেমন রক্ষা হবে, সেই সঙ্গে কমবে গুঁড়ো দুধের আমদানিও,” প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছে সরকার।

আরও ছয় প্রকল্প

একনেকের মঙ্গলবারের সভায় আরও ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে-৮৫৩ কোটি টাকার উৎপাদনশীল কাজে নারীদের সক্ষমতার উন্নয়ন প্রকল্প, ৬১ কোটি টাকায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নসহ সৌন্দর্যবর্ধন, ৫৬ কোটি টাকায় জামালপুর শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ৮৮ কোটি টাকায় কন্সট্রাকশন অব কোরস অব মিলিটারি পুলিশ সেন্টার এন্ড স্কুল এট সাভার ক্যান্টনমেন্ট, ২১৭ কোটি টাকায় হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার স্থাপন এবং ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মানিকনগর এলাকায় মেঘনা নদীর বামতীরে প্রতিরক্ষামূলক কাজ।