মাহাথির নয়, উন্নয়ন হবে হাসিনা মডেলে: মুহিত

বাজেট সামনে রেখে এবারই সবচেয়ে ‘ফুরফুরে মেজাজে’ থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ‘বিশ্বে উন্নয়নের নতুন মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2015, 04:25 AM
Updated : 25 May 2015, 12:15 PM

সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করার নানা মহলের অভিযোগের মধ্যে মন্ত্রী মুহিত শুনিয়েছেন অর্থনীতিতে উল্লম্ফনের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার কথা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুহিত বলেন, “সব কিছুই এখন আমাদের অনুকূলে। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছি। মাহাথির মোহাম্মদের মালয়েশিয়ার উন্নয়ন বিশ্ববাসী দেখেছে। এবার দেখবে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের উন্নয়ন।”

আগামী দুই বছরের মধ্যে তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা রেখে তিরাশি বছরের উদ্যমী সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “এই মেয়াদে আমরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি। এই সময়ে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নেব… প্রচুর বিনিয়োগ করব। আর সে সব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করব।”

শুক্রবার সিলেটে নিজের বাসায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া পৌনে এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে নতুন বাজেটের নানা দিক, অর্থনীতির হালচাল, ব্যাংক খাতের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী, যিনি টানা সপ্তমবারের মতো বাজেট দিতে যাচ্ছেন।

৪ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন তিনি। বাজেট পাস হওয়ার কথা ৩০ জুন।

অর্থমন্ত্রীর পুরো সাক্ষাৎকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আপনার এবারের বাজেটে কী চমক থাকবে?

আবুল মাল আবদুল মুহিত: চমক যে কোনটা হবে, তা তো এখনও জানি না। এই বাজেটের আরওতো কয়দিন বাকি…। দেখা যাক চমক কোনটা হয়।

তবে বাজেটের আয়তন (আকার) যেটা আপনারা জানেন তার থেকে কিন্তু বেশি হবে। আমি এতোদিন বলে আসছিলাম তিন লাখ কোটির কাছাকাছি হবে। এখন কিন্তু তিন লাখ কোটি টাকা পেরিয়ে যাবে। কারণ আমার অরিজিনাল এস্টিমেট যা ছিল, তার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার এডিবি বেড়ে লাখ কোটি টাকায় উঠেছে। রাজস্ব ব্যয়ও কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে আমার এবারের বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকার উপরে চলে যাবে।

কিন্তু তাতে আমি মোটেও বিচলিত নই। বরং খুশিই লাগছে। একটা বড় বাজেট দিতে যাচ্ছি আমি। এই বড় বাজেট দিতে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আমাকে সাহস জুগিয়েছে। এবার আমি সত্যিই একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থার মধ্যে বাজেট দিতে যাচ্ছি। এমন ফুরফুরে মেজাজে আগে কখনও বাজেট দেইনি।

বিষয়টি আমি স্পষ্ট করে বলছি শোনেন…। আমাদের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আমরা এই স্থিতিশীলতা এনেছি। হরতাল-অবরোধ চিরবিদায় নিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। আর কোনো সহিংসতা হবে বলেও মনে হয় না। এখন দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। এবং এটা অব্যাহত থাকবে…। কোনো ধরনের অস্থিরতা-সংঘাত বরদাশত করা হবে না। আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। তারা এখন নির্ভয়ে বিনিয়োগ করবে, ব্যবসা করবে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।

অন্যদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। খাদ্যপণ্যের দামও কম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছে। আমদানি বাড়ছে। রপ্তানি খাতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সব মিলিয়েই আমাকে অনেক বেশি আশা দিয়েছে। আর সে কারণেই এবারের বাজেট বড় হচ্ছে।

দীর্ঘদিন পর ভারতের কাছ থেকে আমরা ছিটমহলগুলো পেয়েছি। এগুলোর উন্নয়নে বাজেটে কোনো বরাদ্দ থাকবে?

অবশ্যই তাদের জন্য (ছিটমহলবাসী) বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভারতের কাছ থেকে ছিটমহলগুলো আমরা অনেক দিন পর পেয়েছি। তাদের জন্য কিছু করা আমার কর্তব্য বলে মনে করছি। আমার সরকারও তাই মনে করে। আমার এবারের বাজেটে ছিটমহলবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাখা হবে বিশেষ বরাদ্দ।

তাদের জন্য কিছু আমাদের করতেই হবে। বর্তমান বাংলাদেশ যে রকম আছে, তাদের সে রকম করতে হবে। আমরা সবাই যেমন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি; তাদেরও সে সব ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

[সম্প্রতি ভারতীয় পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের একটি  বিল পাস হয়েছে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।]

 

প্রাক-বাজেট আলোচনাগুলোতে আপনি বলেছিলেন, সামর্থ্য আছে-এমন সব মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসবেন-সেটা কি এই বাজেটে থাকবে?

সেটা আর এবার সম্ভব হবে না। তবে এবার আমরা দেশের বড় একটা অংশকে করের আওতায় নিয়ে আসব। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কর দেয় মাত্র ১১ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার দশমিক ১ শতাংশের কম। এটা লজ্জার। এটা হতে পারে না। করদাতার সংখ্যা যে করেই হোক বাড়াব। আমাদের রাজস্ব বোর্ড একটা জরিপ করেছে। কিছু নাম-টাম পেয়েছে। তাদেরকে এবার করের আওতায় আনা হবে। আর এ সংখ্যা ‘কম’ নয়। কারা এর আওতায় পড়বে সেটা এখন বলব না। আর তো কয়েকটা দিন। অপেক্ষা করেন; দেখতে পাবেন।

রাজস্ব আদায় বাড়াতে আমরা অন্য যে উদ্যোগটা নিচ্ছি সেটা হল- প্রত্যেকটা উপজেলায় আমরা আমাদের আয়কর অফিস ‍নিয়ে যাব। এখন ৬২টা উপজেলায় আয়কর অফিস আছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই আমরা সবগুলো উপজেলায় অর্থাৎ ৪৮৮টি উপজেলাতেই কর অফিস স্থাপন করব।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনার অভিযোগ আছে। এই খাত নিয়ে আপনার মতামত জানাবেন কি?

হ্যাঁ, আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কিছু সমস্যা ছিল। এখন কিন্তু নেই। সবগুলো ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ভালোই পারফরমেন্স করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং হেবিট (চর্চা) ভালো। ব্যাংক কাভারেজও ভালো। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। সুতরাং সেই দিক দিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকও আতিউর রহমানের নেতৃত্বে পলিসি অব ইন্ক্লুশনের মতো সুন্দর সুন্দর পলিসি করে যাচ্ছে, যার সেবা দেশবাসী পাচ্ছে। 

আপনার এবারের বাজেটে কোন কোন খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে?

বরাবরের মতোই ইন টার্মস অব হাইয়েস্ট এলোকেশন- বিদ্যুৎ-জ্বালানি অ্যান্ড পরিবহন। এ সব খাতে তো বড় ইনভেস্টমেন্ট হয়। এমনকি আমার অগ্রাধিকারে লো হলেও তাদের এলোকেশন উইল বি রেইজড হাইয়েস্ট দিস টাইম আপ টু ২০১৮।

আর গুরুত্বের দিক দিয়ে যদি বলতে চাই তাহলে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন। এই তিন খাতে বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। এ সব খাতের বিভিন্ন প্রোগ্রাম কীভাবে ভালো করা যায় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

এই যেমন, স্যানিটেশনে উই কাভার ৯৪-৯৫% পপুলেশন। কিন্তু ধরেন, চা বাগান। কোনো স্যানিটেশন নাই। দেড় লাখ শ্রমিক। কোনো পানীয় পানের নেই। এটা শেইমফুল টু দ্য গভর্নমেন্ট। শেইমফুল টু দ্য কান্ট্রি। এই শেইম যাতে না থাকে, তার জন্য আমার একটা বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। চা বাগানের এই যে দুরাবস্থা তা কিন্তু আমরা জানিও না। আমি নিজে চা বাগানে যাই তাই জানি….।

তারা ছড়ার পানি খায়, গোসল করে, সব কিছু করে…। চিন্তা করতে পারেন, বাংলাদেশে এটা…। সো দেয়ার উইল বি ভেরি স্পেশাল প্রোগ্রাম। ইয়েস, দিস ইজ ওয়ান অব দ্য থিং আই হ্যাভ টু ডু…।

এই চা বাগানকে আমাদের মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসতে হবে। এরা তো বিদেশি না। এরা সেই কোন জামানায় এসেছে। আইসোলেটেড হয়ে থেকে গেছে। বাট দে হ্যাভ টু বি অ্যাবজর্বড টু দ্য সোসাইটি। ইট ইজ স্মল গ্রুপ অব পিপল। বাট ইট ইজ শেইম ফর বাংলাদেশ। আমাদের আদিবাসীরাও এ রকম খারাপ অবস্থায় আছে। তাদের জন্যও কিছু করা হবে।

আপনি বলছেন বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাহলে বাজেট ঘাটতি কেমন হবে? বিশাল এই বাজেটের রাজস্বই বা কীভাবে আসবে?

বাজেট যতোই বড় হোক না কেন ঘাটতি কিন্তু চলতি বাজেটের মতো ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। কোনো অবস্থাতেই ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

আর রেভিনিউ কালেকশনে (রাজস্ব আদায়) বিরাট জাম্প হবে। এখন (চলতি বাজেটে) রেভিনিউ কালেকশনের লক্ষ্যমাত্রা যেটা আছে সেটা হল এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। জাম্প যেটা প্রত্যাশা করছি সেটা প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। টেন্টেটিভ বাজেটে যেটা আমরা ধরেছিলাম সেটাই ছিল এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ফাইনাল বাজেটে সেটা আরও বেড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে। কীভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করব? আমার উত্তর হচ্ছে- নাম্বার ওয়ান- ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর রেভিনিউ কালেকশন মাশাল্লাহ..। আগেই বলেছি, সব উপজেলায় আয়কর অফিস করব। নাম্বার টু- রাজস্ব প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। অনেক নতুন লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের লোকজনকে বলা হয়েছে- ওই লোকের কাছ থেকে ১০টাকা পাও, তার থেকে ১২ টাকা নিতে হবে; নট দ্যাট। ওই লোকের কাছ থেকে ১০টাকা পাও নাও..। তার সঙ্গে আরো ১০টা লোককে নিয়ে আসতে হবে..। আমি আশা করি এভাবেই ১১ লাখ থেকে ছয় লাখ বেড়ে ১৭/১৮ লাখ হবে। তারপর আরও বাড়বে..। এভাবে বাড়তেই থাকবে।

বাংলাদেশের লোকজনের ট্যাক্স দিতে যে অনীহা সেটাই হল আমার অস্বস্তির বিষয়। তারপরও কিন্তু আমাদের গত পাঁচ বছরে রেভিনিউ গ্রোথ (রাজস্ব আদায়) গড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। এক বছর তো আমরা ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। এতেই প্রমাণিত হয়, চেষ্টা করলে আমরা পারি। সেই চেষ্টাই আমরা করব।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাজ কবে শেষ হবে?

এ কথা ঠিক যে, আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের ফোর লেনের কাজ শেষ করতে দেরি হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে- এই কাজটি এখন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফোর লেনও উইল বি কমপ্লিটেড ইন দ্য নেক্সট ফিসকাল ইয়ার। তাদের যা দরকার, সেইভাবে হবে।

মেট্রোরেলের কাজ শুরু হবে। ওটাতো জাইকা কমিট করেছে, তারা করবে। চায়নাও আমাদের বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পদ্মা সেতুতে রেল লাইন থাকবে। আমরা চেষ্টা করছি, চায়না অর ইন্ডিয়া যেটাই হোক না কেন- তাদের বিনিয়োগে আমাদের রেল খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করতে…। যে সব জেলায় রেললাইন নেই, সেখানে রেললাইন করা হবে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজও হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়নের কথা বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, আমরা শুধু নিজেদের জন্য অস্ত্র তৈরি করব না; বিদেশে রপ্তানিও করব। আপনার এবারের বাজেটে বড় কিছু থাকবে?

না, এজন্য খুব বড় কিছু থাকবে না। আমাদের তিন বাহিনীর জন্য আমরা যে সব প্রোগ্রাম আন্ডারটেক করেছি, সেটা অলরেডি বাজেটে ইনক্লুডেড।…. সুতরাং ওই দিক দিয়ে নতুন বাজেটে বড় কিছু থাকছে না। 

প্রবাসীরা বিশাল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন। আপনার এবারের বাজেটে তাদের জন্য কোনো প্রণোদনা থাকবে?

না, আর্থিক দিক দিয়ে প্রবাসীদের জন্য কোনো প্রণোদনা থাকবে না। তারা আসলে সেইভাবে সেটা চায়ও না। তারা যেটা চায় সেটা হল- যখন তারা দেশে আসে তখন একটু শান্তি চায়; স্বস্তি চায়। সেটাই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটাই হবে তাদের আসল প্রণোদনা।

অনেকের সঙ্গেই আমার নিয়মিত কথা হয়, তারা আমাকে বলে, আমরা একটু আরামে দেশে যেতে চাই। যে কয়দিন দেশে থাকি একটু শান্তিতে থাকতে চাই। বিমানবন্দরে হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে বলেন। দিস ইজ মেইনলি ল অ্যান্ড অর্ডার কম্প্লায়িং। ল অ্যান্ড অর্ডারে আমাদের সরকার যথেষ্ট করেছে। এবারে প্রধানমন্ত্রী একটা প্রোগ্রাম নিয়েছেন, পুলিশকে আরেকটু শক্তিশালী করার জন্য। আমরা সেটার এক্সপানশনে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৫০ হাজার পুলিশ নেবেন।

দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। অর্থনৈতিক অবস্থাও মোটামুটি ভালো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের মতো বাংলাদেশের উন্নয়নে পরিকল্পনা হাতে নেবেন কি?

ওয়েল..। ভালো প্রশ্ন করেছেন আপনি। এবার আমাদের উন্নয়নের পালা- শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা দেশে স্থিতিশীলতা এনেছি। এটা ধরে রাখতে চাই। আর সহিংসতা-সংঘাত নয়, শান্তি-স্বস্তি। আর এর মধ্য দিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে উন্নয়নের মডেল হিসাবে দাঁড় করাতে চাই।

তবে মালয়েশিয়া বা মাহাথির মোহাম্মদের মতো নয়। মাহাথির সাহেব মাহাথির সাহেবের প্রোগ্রাম করেছেন। আমাদের এখানে শেখ হাসিনার প্রোগ্রাম হবে। এবং তার মধ্য দিয়েই আমরা উন্নয়নের মডেল হব। আমি মনে করি, এটা একটা বড় ব্যাপার হবে। আঠারো পর্যন্ত সে সময়টাতে উই ইনভেস্ট ইন ম্যাসিভ প্রোগ্রাম, ইট উইল টেক আস....বিগিনিং অব পদ্মা।

মুডিস, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ‍পুওরসসহ (এসএনপি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী দুই বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোর দিকে যাবে।

আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় সব কিছুই আমাদের অনুকূলে। এই মেয়াদে আমরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি। এই সময়ে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নেব… প্রচুর বিনিয়োগ করব। আর সে সব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করব। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে দিয়ে আমরা কিন্তু তার শুভ সূচনা ইতোমধ্যেই করে দিয়েছি।

আর স্থিতিশীলতার কথা যেটা বলছেন সেটা কিন্তু এসে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার প্রোগ্রাম কেউ মানছে না। হরতাল-অবরোধ এই দেশে আর হবে না। এখন হরতাল হবে যদি কোনো কারখানার শ্রমিকরা তাদের নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য ডাকে তাহলে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে সরকারের মেয়াদ পূর্তির আগে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আছে। সেটাকে কেন্দ্র করে দেশে আবার অস্থিরতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই?

কিসের নির্বাচন? আমাদের মেয়াদ পূর্তির আগে কোনো নির্বাচন নয়। নো ইলেকশন। …এটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এটা দুটো বড় শক্তি বলেছে- ব্রিটেন এবং ইউএস (যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র)। ইলেকশন নরমাল টাইমে হবে। আমাদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির পর হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে মানবপাচার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। সাগরে নৌযানে আটকা পড়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ব্যাপারে অপনার বক্তব্য জানাবেন?

এই বিষয়টি নিয়ে আই অ্যাম সিরিয়াসলি কনসার্নড। তার জন্য আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- দালালগুলোকে আইডেন্টিফাই করা এবং তাদের বিচার করা। আমাদের সরকার সেটা করবে। ইতোমধ্যেই সেটা শুরু করা হয়েছে। মানুষতো, ইউ নো ভাগ্যান্বেষণে যায়। …. এতদিন ধরে নৌকার মধ্যে আছে। মর্মান্তিক….।

তবে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির জন্য আমরা দেশে বেশ কিছু ট্রেইনিং সেন্টার করেছি। সেগুলো থেকে এখন ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। তারা যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে সাগরে পাড়ি না দেয়।

দুর্নীতি কমাতে আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনী ইশতেহারে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আপনি নিজে সেটি প্রকাশও করেছিলেন। তারপর আর সেটার কিছুই হয়নি। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

হ্যাঁ, একটা ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে এটা কিন্তু বাজেটের বিষয় নয়। ওটা দেখা যাবে; কন্টিনিউ চিন্তা করি নাই। আর ওইটা আসলে হাই লেভেল পলিসি ডিসিশনের ব্যাপার।

তিন সিটি করপোরেশনে নতুন মেয়ররা দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা এই তিন সিটির কতোটা উন্নয়ন করতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন?

দেখা যাক তারা কদ্দুর কী করতে পারেন…। ইট অল ডিপেন্ডস অন দ্য প্রোগ্রামস দে ওয়ার্ক আউট। তাদের একটু সময় দিতে হবে। আমি তাদের বলেছি, তোমরা ভালো কাজের প্ল্যান করো এবং সময় নিয়ে ব্যবহার করো আমাকে। ছয় মাস লাগে নিয়ে নাও। তোমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আপনি ফ্যামিলি ট্যাক্স আরোপের কথা বলেছিলেন। সেটা কি এই বাজেটেই থাকবে?

ফ্যামিলি ট্যাক্স, না। ইটস নট ইয়েট। আমি চেয়েছিলাম, প্রোপার্টি ট্যাক্স (সম্পদ কর) করার জন্য। কিন্তু এটা নিয়েও ভালো ফল পাওয়া যায়নি। তাই আমি একটু চিন্তায় আছি।