সাইফুরের রেকর্ড ভাঙব: মুহিত

প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের বারো বারের বাজেট দেওয়ার রেকর্ড ভাঙতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2015, 03:17 PM
Updated : 23 May 2015, 05:35 PM

মুহিত বলেছেন, “আমি সৌভাগ্যবান। বাংলাদেশের আটটি জাতীয় বাজেট দিয়েছি। এইতো মাত্র কয়েক দিন পর নবম বাজেট দিতে যাচ্ছি। বেঁচে থাকলে আরও বাজেট দিয়ে যেতে চাই।”

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে শুক্রবার সিলেটে নিজের বাসভবনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন প্রত্যাশার কথাই শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকারে নতুন বাজেটের নানান দিক, অর্থনীতির হালচাল, ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোকপাত করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

৪ জুন জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৪৪তম বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পাস হওয়ার কথা ৩০ জুন।

‘প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ১২টি বাজেট দিয়ে গেছেন। আপনি সেই রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি না’- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত হেসে বলেন, “আমি কিন্তু একটি রেকর্ড ইতোমধ্যেই করে ফেলেছি…। বাংলাদেশের টানা সাতটি বাজেট দিতে যাচ্ছি আমি। টানা পাঁচটির বেশি বাজেট কিন্তু এর আগে কোনো অর্থমন্ত্রী দেয়নি।

“নয়টি তো হয়ে গেল…। আর তিনটি। বারোটি হয়ে যাবে..।”

ডান হাত উপরের দিকে উঠিয়ে বললেন, “আমার বয়স এখন তিরাশি চলছে। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদের বাকি বাজেটগুলো দিয়ে গেলেই তো বারোটা হয়ে যাবে। সেটা পারব ইনশাআল্লাহ….।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে সরকারের মেয়াদ পূর্তির আগে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আছে। সেটা হলে তো ১২টি বাজেট দেওয়া সম্ভব হবে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সদা হাস্যোজ্জ্বল মুহিত বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “কিসের নির্বাচন? সব ঠাণ্ডা…। আমাদের মেয়াদ পূর্তির আগে কোনো নির্বাচন নয়।”

টানা সাতটি বাজেট দেওয়ার ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “এক সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেই সরকারই আবার ক্ষমতায় আসার একটা অ্যাডভানটেজ আছে। আমাদের চলতি বাজেট (২০১৪-১৫) যেটা শেষ হতে যাচ্ছে, সেটা ছিল আসলে আগের সরকারের ধারাবাহিকতার বাজেট।

“আমি এবার যে বাজেট দিতে যাচ্ছি, সেটা আসলে নতুন বাজেট। এই বাজেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিগত সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাব…।”

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে পাঁচটি বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। আর এই সরকারের মেয়াদে গত বছরের জুনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছেন তিনি।

৪ জুন দিচ্ছেন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট।

আর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এরশাদ সরকারের সময় দিয়েছিলেন দুটি (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর)।

নতুন বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান মুহিত।

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে বলে জানান তিনি।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সামরিক থেকে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এ সময়ের মধ্যে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে অনেকবার। এসব সরকারের আমলে ১৪ জন অর্থমন্ত্রী (অর্থ উপদেষ্টা) ৪৩টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

৪ জুন ৪৪তম বাজেট দিতে যাচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। সেই বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বাজেটও দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ; আকার ছিল ৯৯৫ কোটি টাকা।

আর এবার তিন লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট দিচ্ছেন মুহিত।

বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান সবচেয়ে বেশি ১২ বার বাজেট দিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল সময়ে দুটি, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সময়ে পাঁচটি এবং ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল সময়ে আরও পাঁচটি বাজেট দিয়েছেন সাইফুর রহমান।

আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া দিয়েছেন ছয়টি বাজেট। এছাড়া চার বার বাজেট দিয়েছেন এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সায়েদুজ্জামান।

সংসদ ভবন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটের আকার এবং প্রস্তাবকারী অর্থমন্ত্রীর তালিকা:

১৯৭২-’৭৩ তাজউদ্দিন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৭৩-’৭৪ তাজউদ্দিন আহমেদ ৯৯৫ কোটি টাকা

১৯৭৪-’৭৫ তাজউদ্দিন আহমেদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা

১৯৭৫-’৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা

১৯৭৬-’৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা

১৯৭৭-’৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা

১৯৭৮-’৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা

১৯৭৯-’৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা

১৯৮০-’৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা

১৯৮১-’৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা

১৯৮২-’৮৩ এ এম এ মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৩-’৮৪ এ এম এ মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা

১৯৮৪-’৮৫ এম সায়েদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা

১৯৮৫-’৮৬ এম সায়েদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৬-’৮৭ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা

১৯৮৭-’৮৮ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা

১৯৮৮-’৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা

১৯৮৯-’৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা

১৯৯০-’৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা

১৯৯১-’৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা

১৯৯২-’৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা

১৯৯৩-’৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা

১৯৯৪-’৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা

১৯৯৫-’৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা

১৯৯৬-’৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা

১৯৯৭-’৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৯৮-’৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা

১৯৯৯-’০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা

২০০০-’০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা

২০০১-’০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা

২০০২-’০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা

২০০৩-’০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা

২০০৪-’০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা

২০০৫-’০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা

২০০৬-’০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা

২০০৭-’০৮ মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৮-’০৯ মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৯-১০ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা

২০১০-১১ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা

২০১১-১২ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা

২০১২-১৩ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা

২০১৪-১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা