বাজেট তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে: মুহিত

নতুন বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2015, 04:27 PM
Updated : 23 May 2015, 05:03 AM

দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আভাস, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম অপেক্ষাকৃত কম এবং সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে ‘স্বস্তিদায়ক’ অবস্থা বাজেটের আকার বাড়াতে সহায়তা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নবমবারের মতো বাজেট দিতে যাওয়া মুহিত।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে শুক্রবার সকালে সিলেটে নিজের বাসভবনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ফুরফুরে মেজাজে থাকা অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

এবারের বাজেটে ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে ‘বিশেষ উদ্যোগ’ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

৪ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পাস হওয়ার কথা ৩০ জুন।

নতুন বাজেট নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় মুহিত বলেন, “এবারে আমাদের বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা পেরিয়ে যাবে। এতদিন আমি বলেছিলাম, বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। কিন্তু এডিপি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বেড়ে লাখ কোটি টাকায় যাওয়ায় এবং সেইসঙ্গে রাজস্ব ব্যয়ও কিছুটা বাড়ায় আমার অরিজিনাল টার্গেট তিন লাখ কোটি টাকার উপরে চলে যাবে।

“কিন্তু তাতে আমি মোটেও বিচলিত নই। বরং খুশিই লাগছে। একটা বড় বাজেট দিতে যাচ্ছি আমি।”

‘আর এই বড় বাজেট দিতে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আমাকে সাহস জুগিয়েছে’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা সপ্তম বাজেট দিতে যাওয়া অর্থমন্ত্রী বলেন, “এবার আমি সত্যিই  একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থার মধ্যে বাজেট দিতে যাচ্ছি। এমন ফুরফুরে মেজাজে আগে কখনও বাজেট দেইনি।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আমরা এই স্থিতিশীলতা এনেছি। হরতাল-অবরোধ চিরবিদায় নিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। আর কোনো সহিংসতা হবে বলেও মনে হয় না। এখন দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। এবং এটা অব্যাহত থাকবে…। কোনো ধরনের অস্থিরতা-সংঘাত বরদাশত করা হবে না।

“আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। তারা এখন নির্ভয়ে বিনিয়োগ করবে; ব্যবসা করবে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।”

অন্যদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। খাদ্যপণ্যের দামও কম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছে। আমদানি বাড়ছে। রপ্তানি খাতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।

“সব মিলিয়েই আমাকে অনেক বেশি আশা দিয়েছে। আর সে কারণেই এবারের বাজেট বড় হচ্ছে,” বলেন অর্থমন্ত্রী।

নতুন বাজেটে ‘নতুন’ কী থাকবে-এ প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুহিত বলেন, “ভারতের কাছ থেকে ছিটমহলগুলো আমরা অনেক দিন পর পেয়েছি। তাদের জন্য কিছু করা আমার কর্তব্য বলে মনে করছি। আমার সরকারও তাই মনে করে। আমার এবারের বাজেটে ছিটমহলবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাখা হবে বিশেষ বরাদ্দ।”

সম্প্রতি ভারতীয় পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের একটি বিল পাশ হয়েছে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।

বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে।

‘আপনি বলেছিলেন, সামর্থ্য আছে-এমন সব মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসবেন’-সেটা কি এই বাজেটে থাকবে- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “সেটা আর এবার সম্ভব হবে না। তবে এবার আমরা দেশের বড় একটা অংশকে করের আওতায় নিয়ে আসব। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কর দেয় মাত্র ১১ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার দশমিক ১ শতাংশের কম। এটা লজ্জার। এটা হতে পারে না।”

‘দেশে করদাতার সংখ্যা যে করেই হোক বাড়াব’- এ অঙ্গীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজস্ব বোর্ড একটা জরিপ করেছে। কিছু নাম-টাম পেয়েছে। তাদেরকে এবার করের আওতায় আনা হবে।”

আর এ সংখ্যা ‘কম’ নয় বলেও জানান তিনি।

কারা এর আওতায় পড়বে জানতে চাইলে মুহিত মৃদু হেসে বলেন, “সেটা এখন বলব না। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। অপেক্ষা করেন; দেখতে পাবেন।”

চলতি বাজেটের মতো নতুন বাজেটেও বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে জানান মুহিত।

“বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) ফ্লাইওভারসহ যে সব মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের সিঁড়িও হবে এবারের বাজেট।”

মুহিত বলেন, “আমাদের এই সরকারের মেয়াদের আগেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে এর কাজ ২০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। মেট্রোরেলের ভূতাত্ত্বিক জরিপের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করতে চাই আমরা।”

অন্য সব মেগা প্রকল্পও বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।