তামাকে উচ্চহারে কর আরোপের সুপারিশ

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক পণ্যে করের হার আরও বাড়ানোর পাশাপাশি তামাকজাত পণ্য বিক্রির উপর সারচার্জ বর্তমানের দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2015, 03:10 PM
Updated : 21 May 2015, 03:10 PM

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো- ফ্রি কিডসের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়।

‘কেমন তামাক-কর চাই: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষে সুপারিশ তুলে ধরেন অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বারকাত।

তাদের সুপারিশ ও পরামর্শের মধ্যে রয়েছে- কর নির্ধারণের জন্য সিগারেটের মূল্যস্তর পদ্ধতি বাতিল করে তুলনামূলক উচ্চহারে নির্দিষ্ট পরিমাণ এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ, বিড়ির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমাত্রায় নির্ধারিত ট্যারিফ ভ্যালুর উপর ধার্য‌ প্রথা বাতিল করে নির্দিষ্ট পরিমাণ এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের উপর বর্তমান ‘এড ভ্যালোরেম’ কর ব্যবস্থার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ, নতুন অর্থ বছর থেকে তামাকজাত পণ্যের বিক্রয় মূল্যের উপর বর্তমান আরোপিত স্বাস্থ্যখাতে সারচার্জ শতকরা ১ ভাগ বাড়িয়ে ২ ভাগ উন্নীত করা।  

হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা আবুল বারকাত বলেন, “তামাকজাত পণ্যের ভোগ কমানোর কার্যকর একটি উপায় হল তামাকের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করে মূল্য বাড়ানো।

“এছাড়া তামাকজাত পণ্যের করহার বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে পারে।”

তামাক-কর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বারকাত বলেন, বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের প্রকৃত মূল্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। গত কয়েক বছর ধরে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় সিগারেটের ‘প্রকৃত মূল্য’ কমেছে। অন্যদিকে বাড়ছে মানুষের গড় প্রকৃত আয়, ফলে তামাকজাত পণ্য বেশি পরিমাণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় চলে এসেছে। এটাকে ‘তামাকের রাজনীতি’ বললে অত্যুক্তি হবে না।

বিড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিড়ির উপর অতিনিম্নহারে করারোপ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সব ধরনের বিড়ির প্রতি ২৫ শলাকার প্যাকেটের উপর ১০ টাকা হারে নির্দিষ্ট পরিমাণ (স্পেসিফিক) এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের উপর বর্তমান “এড ভ্যালোরেম” কর প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে মোট প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, যার বিপরীতে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে মাত্র ১৪.৩৬ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১ শতাংশেরও কম।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে প্রতি ১০০ গ্রামের প্যাকেট এবং কৌটার উপর ১৫০ টাকা নির্দিষ্ট পরিমাণ (স্পেসিফিক) এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি।

বর্তমানে তামাকজাত পণ্যের উপর স্বাস্থ্যখাতে (হেল্থ) সারচার্জ ১ শতাংশ থেকে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২ শতাংশে উন্নীত করা হলে সরকারের রাজস্ব আদায় ২৩৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হবে বলে জানান তিনি।

এই সারচার্জ থেকে আহরিত রাজস্ব আয়ের ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে, ২০ শতাংশ তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কর্মসূচি (গবেষণা ও প্রচারাভিযান) বাস্তবায়নে, ১৫ শতাংশ নিকোটিন আসক্তদের আসক্তি মুক্ত করার কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবং ৪০ শতাংশ তামাক চাষে নিয়োজিত কৃষক এবং তামাকজাত পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃজনে ব্যয় করতে সুপারিশ করেন বারকাত।

বর্তমান কর কাঠামো তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “তামাক দ্রব্যের উপর বিদ্যমান কর কাঠামোটি জটিল, যা তামাক রাজনীতিরই একটি অনুষঙ্গ। এ জটিল কর কাঠামোর সুবিধা পাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো আর বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আত্মার সহ-আহবায়ক নাদিরা কিরণ।