শনিবার সকালে রাজধানীর লেইক শোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ওই সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচক ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এই সদস্য।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “প্রবন্ধে বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির বরাদ্দ যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার মধ্যে বস্তুনিষ্ঠতা ও সামঞ্জস্যতা নেই।”
কয়েক বছর ধরে খাদ্য, কৃষি ও বিদ্যুৎসহ বেশ কয়েকটি খাতে ভর্তুকির জন্য প্রায় সমান বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রবন্ধের তথ্যে তা অসামঞ্জস্য করে দেখানো হয়েছে বলে তার পর্যবেক্ষণ।
“যেমন ২০১২-১৩ অর্থবছরে খাদ্য খাতে দুই দশমিক ৫১ শতাংশ দেখানো হয়েছে। বিপরীতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ৯৩ ভাগ। ভর্তুকির হার এতোটা ‘ফ্লাকচুয়েট’ হতে দেখা যায়নি।”
“এখন বাজেটে ভর্তুকির হার কমে আসছে।”
একইভাবে বিদ্যুৎ, পাট, বিপিসি ও পিডিবির বরাদ্দ বিশ্লেষণেও সামঞ্জস্য নেই মন্তব্য করে অধ্যাপক শামসুল বলেন, তথ্য বিশ্লেষণে বস্তুনিষ্ঠতার এরকম অভাব হলে সিপিডি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে সিপিডির ভিজিটিং ফেলো কানিজ সিদ্দিক দেশি-বিদেশি আর্থিক খাত থেকে ঋণ নিয়ে দেওয়া ভর্তুকির যথাযথ ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিয়ে ভর্তুকি ব্যবস্থা সংস্কারে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
কানিজ সিদ্দিক বলেন, “অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ কৌশলের ভিত্তিতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য, সমাজ উন্নয়ন ও পরিবেশের উন্নয়ন বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।”
ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রভেদে ক্ষণস্থায়ী, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগ্রহণের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, অন্য দেশের দেওয়া ভর্তুকির সফলতার উদাহরণগুলো থেকে অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়।
জ্বালানী ও বিদ্যুত খাতের ভর্তুকি কমাতে সরকারি ও বেসরকারি নিম্ম বেতনের চাকরিজীবিদের বেতন বাড়ানোর পক্ষে মত দেন তিনি।
ভোক্তা পর্যায়ে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে কানিজ বলেন, কৃষকের কাছে ভর্তুকির চেয়ে সময়মতো সার পৌঁছাতে পারলে তারা বেশি লাভবান হবে।
ভর্তুকির ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে গিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়টি সবার নজরে আনেন অধ্যাপক শামসুল আলম।
“কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরির জন্য ভর্তুকি দরকার। তবে ভর্তুকির জন্য নীতিমালা প্রয়োজন।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে আগে থেকেই ভর্তুকি আছে। ভর্তুকির প্রধান উদ্দেশ্য অসাম্য কমিয়ে আনা।
“২০১০ সালে যখন সরকার রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল, তখন জনগণের যে কোনো মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার আগ্রহ ছিল। এখন ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে।”
অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “যে লক্ষে বাজেটে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা অর্জিত হচ্ছে কি না, তা গবেষণা করতে হবে। ভর্তুকিতে সংস্কার, উদ্দেশ্য ও স্বচ্ছতা দরকার।”