সঞ্চয়পত্রের সুবিধা নিচ্ছে ধনীরা: বিরুপাক্ষ পাল

উচ্চ সুদের হারের সুবিধা নিতে ধনীরাও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করায় সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য চালু করা এই স্কিমটি আর কাজে আসছে না বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2015, 06:44 PM
Updated : 29 April 2015, 10:11 AM

রোববার রাজধানীতে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত এক সেমিনারে এই মত প্রকাশ করেন তিনি।

বিরুপাক্ষ বলেন, “আমরা জানি সঞ্চয়পত্রে পেনশনার, বয়স্ক ও বিধবারা বিনিয়োগ করে। কিন্তু এখন উচ্চ সুদের কারণে মিলিয়নিয়াররাও বিনিয়োগ করছে। এমনকি পুঁজিবাজার থেকেও বিনিয়োগ আসছে এখানে।

“ফলে সামাজিক যে দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বিবেচনা করা হত, তাও এখন আর থাকছে না।”

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে উচ্চ সুদহারকে অন্যতম বাধা হিসেবে তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত না হওয়ার অন্যতম কারণ ঋণের উচ্চ সুদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেষ্টা করছে ঋণের সুদহার কমাতে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ এ ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

“বিনিয়োগে গতিশীলতা সৃষ্টির স্বার্থে সরকারের উচিত এই ঋণ উপাদানের সুদহার কমানো। এছাড়া পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে হলেও এই খাতের সুদ কমানো দরকার।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ২৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের আসল-সুদ বাবদ ৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।

ফলে সঞ্চয়কারীদের নিট বিনিয়োগ অর্থাৎ সরকারের এ খাতে ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও আট মাসেই এ দ্বিগুণের বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে।

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া এড়াতে পারলেও বিপুল পরিমাণ সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধে সরকার চাপের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অধীনে চার ধরনের- পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পাঁচবছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে।

মেয়াদপূর্তি সাপেক্ষে পাঁচবছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, তিনমাস মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ এবং সবচেয়ে বেশি পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে সরকার। এজন্য সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিক্রি সবচেয়ে বেশি।

প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো নারী এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর‌্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। এক লাখ টাকায় মাসে নীট (সব ধরনের কর কেটে নেয়ার পর) এক হাজার ৭০ টাকা লাভ পায় বিনিয়োগকারী।

পাঁচবছর মেয়াদি ও তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র দেশের যে কোনো নাগরিক কিনতে পারেন। এমনকি নাবালকদের নামেও কেনা যায়। একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে এই দুটো সঞ্চয়পত্রে।

আর পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।

এদিকে ব্যাংকগুলোও মেয়াদি আমানতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। তবে অধিকাংশ ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদহার ১০ শতাংশের কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ব্যাংকিং খাতে গড় সুদহার ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর থেকে চলে যাবে কর।

সমাজের অবসরপ্রাপ্ত, বয়স্ক, বিধবা তথা যেসব ব্যক্তির বাণিজ্যিক বিনিয়োগ করার সক্ষমতা নেই, তাদের নিরাপদ উপার্জনের কথা চিন্তা করে সরকার সঞ্চয়পত্র চালু করেছে।

এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের কিছু ব্যক্তির নিরাপদ বিনিয়োগের ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবেও কাজ করে। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণের চাপ কমে।

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী প্রধান অতিথি ছিলেন।