শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে, শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কিছু ‘জরুরি’ কাজ করতে হবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বিবেচনায় নিয়ে তারা বলেছে, এদেশের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি জোরালো ও স্থায়ী।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ‘অংশীদারিত্বের’ চেতনায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে তারা ‘ঘনিষ্ঠভাবে’ কাজ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, শ্রমমন্ত্রী থমাস পেরেজ, যুক্তরাজ্য বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান এবং ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক আলফনসো লেনহার্ট ওয়াশিংটনের পক্ষে বিবৃতিতে সই করেন।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র বিষয়ক ও নিরাপত্তা নীতিমালা বিষয়ক ইইউ শীর্ষ প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোহেরিনি, কর্মসংস্থান বিষয়ক ইইউ কমিশনার মারিয়ান থাইসেন, ইইউ বাণিজ্য কমিশনার সিসিলিয়া ম্যালস্ট্রম এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন কমিশনার নেভেন মিমিকা ব্রাসেলসের পক্ষে এতে সই করেন।
২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু এবং তার কিছুদিন আগে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা যায়।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের ২৮ দেশের এই জোট। এই দেশগুলিতে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র হলেও এই খাতে দেশটি জিএসপি সুবিধা দেয় না। অন্য যেসব পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় তা দেশের ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ১ শতাংশের মতো।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর ওই বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশের জন্য ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস’-জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে তারা।
তখন ওয়াশিংটন জানায়, কারখানাগুলোর কর্ম পরিবেশের উন্নতি এবং শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগসহ ১৬টি শর্ত পূরণ হলে তবেই এ সুবিধা ফেরত দেওয়া হবে।
এরপর থেকে সরকারও পোশাকখাতের নিরাপত্তা, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও তাদের জীবনমানের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। কারখানাগুলোর উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সেখানে চালানো হয় যৌথ পরিদর্শন।
গত দুই বছরে সংগঠনের অধিকার, সামষ্টিক দরকষাকষি ও পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধন করেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবারের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা পরিদর্শক নিয়োগের পর তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
অগ্নিও কাঠামোগত নিরাপত্তা পর্যালোচনার সঙ্গে কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে অনলাইনে তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।
শ্রম বিষয়ে অভিযোগের জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে এবং প্রায় নতুন ৩০০ ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে গত বছর পোশাক খাতের দুই হাজারেরও বেশি কারখানার পরিদর্শন করে নিরাপত্তাজনিত কারণে ৩০টি কারখানা পুরোপুরি এবং ১৭টি কারখানা আংশিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এর পরও আইএলওর সহায়তায় ‘সময়মতো এবং স্বচ্ছভাবে’ সব কারখানা পরিদর্শন এবং ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন চালু রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
এছাড়া ইপিজেডভুক্ত কারখানাগুলোকে বাইরের কারখানার মতো সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
তারা বলেছেন, অবৈধ শ্রম চর্চা, সহিংসতা ও ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের হয়রানির ঘটনাগুলোর বিষয়ে সরকারের সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
“আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারের যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা নাজুক ও অস্থায়ী হয়ে পড়তে পারে যদি না শ্রমিকরা ওই সব অধিকার চর্চা না করতে পারে এবং নিজেদের স্বার্থ ও উদ্বেগের কথা তুলে ধরতে সংগঠিত হতে না পারে।”
তারা বলেছেন, প্রতিশ্রুত ওইসব কাজ একসঙ্গে শেষ করতে তারা অংশীদারিত্বের চেতনায় কাজ ঘনিষ্ঠভাবে সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।