বিলিয়ন ডলারের ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ছে বিশ্ব ব্যাংক

ভারতের মতো বাংলাদেশেও ১০০ কোটি ডলারের ‘টাকা বন্ড’ ছাড়বে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন।

আবদুর রহিম হারমাছি ওয়াশিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2015, 01:25 PM
Updated : 19 April 2015, 01:25 PM

প্রবাসীদের জন্য ‘ডলার বন্ড’ থাকলেও প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ‘টাকা বন্ড’ ছাড়া হচ্ছে।

ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে আইএফসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “টাকা বন্ড ছাড়ার ব্যাপারে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু আইএফসির এই প্রস্তাব খুবই ইতিবাচক মনে হয়েছে।

“আমরা তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছি। দেশে ফিরেই আমরা এ ব্যাপারে কাজ ‍শুরু করবো। এবং যতো দূর সম্ভব কম সময়ের মধ্যে বন্ডটি ছাড়া হবে।”

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকের ২য় দিনে বোর্ড সদস্যদের ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দ এবং সদস্য দেশের অর্থমন্ত্রীরা এতে অংশ নেন।

আইএমএফের সদর দপ্তরের নীচ তলায় এই ফটোসেশনে দ্বিতীয় সারিতে ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। 

বসন্তকালীন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর জোর দেন সদস্য রাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠক করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ এবং যোগাযোগ অবকাঠামো বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন।

পরে আইএফসির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জিং ইয়ং চাইয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনায় আসে বন্ড ছাড়ার বিষয়টি।

অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের একটি ভালো খবর আছে। আইএফসি টাকা বন্ড ছাড়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা সেটাকে সাদরে গ্রহণ করেছি।

“আইএফসি যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড রেইজ (সংগ্রহ) করে সেটা বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় আমাদের বাজারে ছাড়বে। যে কেউ এই টাকা বন্ড কিনতে পারবে।”

‘টাকা বন্ড প্রবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় হবে’ মন্তব্য করে মুহিত বলেন, “বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে কোনো সুদ (জিরো ইন্টারেস্ট) পাওয়া যায় না। টাকা বন্ডে ৪/৫ শতাংশের মতো ইন্টারেস্ট থাকবে।

“আমাদের প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয় কোনো ব্যাংকে না রেখে টাকা বন্ডে বিনিয়োগ করলে ‘ভালো’ মুনাফা পাবেন। প্রবাসীরা ছাড়াও যে কেউ এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।”

মূলত দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আইএফসির এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে বলে জানান মুহিত।

দেশে বন্ড মার্কেট জনপ্রিয় না হওয়ায় এই উদ্যোগের সফলতা নিয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশে অনেকের সঞ্চয় আছে; তারা কিনবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বন্ড কিনবেন। বিনিময়ে তারা সুদ পাবেন।”

‘টাকা বন্ড’ ছাড়া হলে বাংলাদেশের সরকার এবং আইএফসি- উভয় পক্ষেরই লাভ হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের এবারের বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশ কী পেলো- জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “আইএফসির বন্ড, পরিবহন খাতে সাহায্য- এই তো।

“আসলে বসন্তকালীন বৈঠকে আসা হয় মূলত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে। সেপ্টেম্বর -অক্টোবরে যে বার্ষিক সভা হয়, তখন কোনো বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা যায় না। বসন্তকালীন বৈঠকে তাড়াহুড়ো হয় না কোনো। এবারও অনেকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হলো।”  

বৈঠকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাটও উপস্থিত ছিলেন।

যোগাযোগ খাত নিয়ে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের রোড-ট্রান্সপোর্টেশন সেক্টরে বিশ্ব ব্যাংকের কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তারা আরও কয়েকটি প্রকল্পে সহায়তা দিতে চায়। আমরা তাদের বলেছি, বাংলাদেশ সরকার এখন রেল ও ওয়াটার ট্রান্সপোর্টে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

“এ দুটোতেই বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছি আমরা। তারা এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করা হবে।”

আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে তিন দিনের এ বসন্তকালীন বৈঠকে।

শুক্রবার শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হচ্ছে রোববার।

</div>  </p>