রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংককে সতর্ক করলো বিএফআইইউ

মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে অগ্রগতি দেখাতে না পারায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ বাণিজ্যক ব্যাংককে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2015, 02:35 PM
Updated : 13 April 2015, 02:38 PM

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ জানিয়ে দ্রুত উন্নতির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পাশাপাশি ২০১৫ সালের জন্য প্রতিটি ব্যাংককের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে বিএফআইইউতে জমা দিতে বলা হয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের।

সম্প্রতি  সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার‌্যালয় ও বিভিন্ন শাখায়র মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার তদন্ত করে ব্যাংকগুলোর রেটিং তৈরি করেছে বিএফআইইউ।

তদন্তে ‘এএমএল’ নামের রেটিংয়ে প্রতিটি ব্যাংকের অবস্থা ‘অসন্তোষজনক’ (আনসাটিসফ্যাক্টরি) পেয়েছে বিএফআইইউ।

এ বিষয়ে বিএফআইইউ উপ-প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর এএমএল রেটিং মান উন্নয়নে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি। ইতিমধ্যে সে অনুযায়ী তারা কাজ শুরু করেছে। আশা করছি ব্যাংকগুলোর দ্রুত উন্নতি হবে।”

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ব্যাংকে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিভাগ থাকলেও পর‌্যাপ্ত জনবল নেই। ব্যাংকগুলোর অধিকাংশ শাখা এখনও অনলাইনে আসেনি। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গো এএমএল (goAML) সফটওয়্যার চালু করলেও তাদের রিপোর্টিং হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে।

অনেক শাখায় প্রতিবেদনযোগ্য নগদ লেনদেন (সিটিআর) ও সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) হলেও তার বিএফআইইউতে জানানো হচ্ছে না।

ব্যাংকগুলোতে ১০ লাখ টাকার বেশি নগদ লেনদেন হলে সেটি এসটিআর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। আর পরিমাণ যাই হোক কোনো লেনদেনকে সন্দেহজনক (পাচার বা বেআইনি-অবৈধ কাজে ব্যবহারের জন্য লেনদেন) মনে হলে তাও জানানোর নিয়ম রয়েছে।

ব্যাংকিং খাতের আমানত, ঋণ, মোট শাখা ও মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেক হয় রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে পারিচালিত হলেও এসব ব্যাংকের সিটিআর ও এসটিআর রিপোর্ট অন্যদের তুলনায় অনেক কম।

গত ডিসেম্বর শেষে এই পাঁচ ব্যাংকের শাখা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬৩০টি। দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট শাখার প্রায় অর্ধেক এসব ব্যাংকের নেটওয়ার্কভুক্ত।

এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন এসব ব্যাংকে অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা থাকায় ঝুঁকি অনেক কম। কারণ তারা নিজেরাই বুঝতে পারেন কোন লেনদেনটি কি উদ্দেশ্যে হচ্ছে।

ফরিদউদ্দিন বলেন, “যারা দুই নম্বরি কাজ করবে তারা আমাদের ব্যাংকে আসে না। সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে কম হয়। বেসরকারি ব্যাংকে এসব হয়ে থাকে। সেজন্য বেসরকারি ব্যাংক রিপোর্টও বেশি করে।

“তবে আমরা স্বীকার করছি, আমাদের সচেতনতার অভাব আছে। সেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা সচেতনতা বাড়ানো বিষয়ে ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।”

এর মধ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাস্তবায়নের জন্য রূপালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের কাছেও তা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।  

অগ্রণী ব্যাংকের সম্প্রতি জারি করা এক জরুরি সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, “ব্যাংকের বিভিন্ন অঞ্চল প্রধানদের তত্ত্বাবধানে সন্ত্রাসে অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ শাখা পরিদর্শন করে ৬ মাস পরপর রিপোর্ট করার কথা। কিন্তু ব্যাংকটির ৪৯টি অঞ্চল থেকে সময়মত রিপোর্ট আসছে না।”

এসব শাখাগুলোর অঞ্চল প্রধানদের সতর্ক করে আগামীতে সময়মত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর‌্যায়ে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ মানদণ্ডে গ্রে থেকে গ্রীন স্তরে উন্নীত হয়েছে।