রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক নিয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রাষ্ট্র মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2015, 04:06 PM
Updated : 6 April 2015, 04:06 PM

এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়নের জন্য ঋণ বিকেন্দ্রীকরণসহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের সাথে করা সমঝোতা চুক্তির (এমওইউ) ডিসেম্বর প্রান্তিকের মূল্যায়ন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

সোমবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে এই চার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীসহ অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এস কে সুর চৌধুরী বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনওই কোনো ব্যাংকের ওপর একেবারে সন্তোষ প্রকাশ করে না। আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর যে অবস্থা তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই।”

সুর চৌধুরী বলেন, “ব্যাংকগুলো কিছু বিষয়ে ভালো করেছে। তবে এখনও অনেক দূর্বল দিক রয়েছে। আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) সেগুলোর উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছি।”

আইন অনুযায়ী বছর শেষের দুই মাসের মধ্যে ব্যালান্স শিট বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করার কথা। কোনো ব্যাংক না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরও দুই মাস সময় চেয়ে নিতে পারে। সে অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২০১৪ সালের ব্যালান্স শিট বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া কথা সব ব্যাংকের। কোনো ব্যাংক না পারলে তারা আরও দুই মাস সময় নিয়ে অর্থাৎ এপ্রিলের মধ্যে জমা করবে।

“কিন্তু এই চার ব্যাংক ফেব্রুয়ারি মধ্যে ব্যালান্স শিট জমা দিতে পারেনি। তাদেরকে বলেছি যেন অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে (এপ্রিলের মধ্যে) অবশ্যই জমা দেয়,” বলেন ডেপুটি গভর্নর।

“ইতিমধ্যে যারা ব্যালান্স শিট ফাইনাল করেছে তারা যেন ত্রুটিগুলো দূর করে তা বলেছি। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংককে বলা হয়েছে তারা যেসব প্রভিশনিং করেছে তার ভুল শোধরাতে।”

সুর চৌধুরী বলেন, “এই চার ব্যাংকের শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের থেকে আদায় সন্তোষজনক নয়। এটা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

“এছাড়া ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সালের মধ্যে অবশ্যই অটোমেশনে যাওয়া, একক ঋণগ্রহীতার সীমা অতিক্রম না করা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ব্যাংকের এমডিদের বিস্তর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জন্য সুরক্ষা নীতি করেছে। আমরা চাই তারা (এমডিরা) এর সদ্ব্যবহার করুক। ঋণ কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অর্থাৎ বড় ঋণ কম দিয়ে কৃষি, এসএমইর মতো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে এমন উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণ করা হোক।

“একইসাথে অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা ব্যাংক খাতে আর কোনো জালিয়াতি দেখতে চাই না।”

সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের আর্থিক ও ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে প্রতিবছর সমঝোতা চুক্তি করে থাকে। বিশ্বব্যাংকের ব্যাংক মর্ডানাইজেশন প্রকল্পের অধীনে ২০০৭ সাল থেকে এ ধরনের এমওইউ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের ইসিএফ ঋণেরও একটি শর্ত রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন।

এই এমওইউতে খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ প্রবৃদ্ধি যথাযথ রাখা, লোকসানি শাখা ও পরিচালন ব্যয় কমানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও সুপারভিশনের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতি তিনমাস পরপর এইসব লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন করা হয়।

ব্যাংকগুলোর অর্জন

এমওইউ এর মূল্যায়ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে এই চার ব্যাংকের শীর্ষ ২০ জন করে মোট ৮০ খেলাপি ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে ৬২৩ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বছর শেষে ব্যাংক চারটি আদায় করেছে ২৩৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের আদায় সবচেয়ে কম।

এমওইউতে বলা হয়, ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। ব্যাংকটি সেই পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। বরং সাড়ে ৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে শর্ত ভঙ্গ করেছে জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। জনতা ব্যাংককে ১০ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য দেওয়া হলেও তাদের ঋণে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

একইভাবে অগ্রণী ব্যাংক ১০ শতাংশের বিপরীতে ১৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংক ১২ শতাংশের বিপরীতে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।