সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমছে

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2015, 11:22 AM
Updated : 6 April 2015, 02:49 AM

রোববার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “আমাদের সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদের হার খুবই বেশি। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে।

“সে কারণেই আমরা এটাকে কমানোর (রিভিউ) সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এর আগে আমরা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়িয়েছিলাম। সেটা আর রাখা সম্ভব হচ্ছে না।”

তবে কবে থেকে, কোন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কতটা কমানো হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী।

এর আগে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, “সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিক্রি বাড়ায় চলতি বাজেটে এ খাত থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) তার দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে। এমনটা হতে থাকলে সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা সমস্যার মধ্যে পড়বে।”

এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, “সঞ্চয়পত্রের বেশি সুদ আর থাকবে না।”     

ব্যাংকের আমানতের তুলনায় সুদ বেশি দেওয়া এবং পুঁজিবাজারে পড়তিভাবে অনেকেই নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। সম্প্রতি ব্যাংকের সুদ হার আরও কমে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির পালেও হাওয়া লাগে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ২৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের আসল-সুদ বাবদ ৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।

ফলে সঞ্চয়কারীদের নিট বিনিয়োগ অর্থ্যাৎ সরকারের এ খাতে ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০০ শতাংশ বেশি।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরে। তবে আট মাসেই তার দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গেছে।

ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশি উৎসের পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকেও ঋণের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে এ ঋণ নেওয়া হয়। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের বেশিরভাগ ঋণই সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হয়।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেওয়া একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। এবার ব্যাংক খাত থেকে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করেছে তার তুলনায় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বেশি।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি ছিল ১৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এবার একই সময়ে মোট বিক্রি তার চেয়েও ১১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা বেশি হয়েছে।

একক মাস হিসাবে সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এখান থেকে এক হাজার ৪৪ কোটি টাকার সুদ-আসল পরিশোধ বাদ দিয়ে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা বিক্রি থেকে ৯৯১ কোটি টাকার আসল-সুদ পরিশোধ বাদ দিয়ে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছিল ১ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। এ হিসাবে একক মাস হিসেবেও গত ফেব্রুয়ারিতে নিট বিক্রি আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

জানুয়ারি মাসেও নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬০৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের শেষের দিকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো নিয়ে আলোচনা উঠেছিল। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি দাবি তুললেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ সময়ে ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ দিলেও এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত ১ মার্চ থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে মেয়াদি আমানত নিচ্ছে।

অন্যদিকে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদ বা মুনাফা হচ্ছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ । পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ সুদ দেওয়া হচ্ছে। আর তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ও ব্যাংক মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। আট মাসে এর নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে বিক্রির শীর্ষে থাকা তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ১ হাজার ৯৭০ কোটি, পোস্ট অফিসের মেয়াদি সঞ্চয়পত্র ১ হাজার ৪০৪ কোটি এবং ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড ২৫৯ কোটি টাকা।

নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মোট পরিমাণ থেকে আগের বিক্রিত সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের পরিমাণ বাদ দেওয়ার পর অবশিষ্টাংশকে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি বলা হয়।

নগদায়নের ক্ষেত্রে গ্রাহককে সুদসহ আসল পরিশোধ করা হয়। সুদ-আসল পরিশোধের পর যে নিট অর্থ জমা থাকে সেটাকেই সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বা ধার বলে হিসাব করা হয়। এর জন্য সরকারকে সুদ গুণতে হয়।