খেলাপিদের তালিকা দিয়ে ঋণ না দেওয়ার অনুরোধ এসআইবিএলের

খেলাপি গ্রাহকদের তালিকা অন্য ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়ে তাদেরকে ঋণ না দিতে অনুরোধ করেছে বেসরকারি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2015, 01:00 PM
Updated : 22 March 2015, 01:00 PM

সম্প্রতি চিঠি দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়ার ৫৩ জন খেলাপি গ্রাহকের একটি তালিকা দেশের অন্য সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে ব্যাংকটি।

এসব গ্রাহকের কাছে ১১৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে এসআইবিএলের, যার পুরোটাই মন্দ বা লোকসানি পর‌্যায়ের ঋণ।

এই ৫৩ গ্রাহকের মধ্যে ৩৫ গ্রাহকই চট্টগ্রামের। তাদের কাছে আটকে আছে ৭২ কোটি ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। 

ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (সংশোধিত-২০১৩) এর ২৭ (কক) ধারা অনুযায়ী এই চিঠি পাঠিয়েছে এসআইবিএল।

এসআইবিএলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জি এম হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমাদের (ব্যাংকের) পক্ষ থেকে টাকা আদায়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু গ্রাহকরা এই খেলাপি ঋণ সমন্বয়ের বিষয়ে সামনে এগোনোর কোনো ইচ্ছা দেখাচ্ছে না। এজন্য আমরা আইনি পদক্ষেপও নিয়েছি।

“এজন্য আমরা আপনাদের অনুরোধ করবো যে, এসব গ্রাহককে কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা না দিতে অথবা কারোর কোন ঋণ থাকলে তা আর না বাড়াতে। এমনকি এসব ব্যক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠান বা এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দেওয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদের গ্যারান্টি বা মর্টগেজ না নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

এই খেলাপি গ্রাহকদের মধ্যে বগুড়ার রিমা ফ্লাওয়ার্স মিলসের কাছে ৬ কোটি ৬ লাখ টাকা, অতিথি ফিলিং স্টেশনের  ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, ফিরোজ কনস্ট্রাকশনের ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, মাসফা এন্টারপ্রাইজের খেলাপি ঋণ ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, রুমা ট্রেডার্সের ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা, জাহাদ কনস্ট্রাকশনের ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও গুঞ্জন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের কাছে ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংকটির।

চট্টগ্রামের এসবি কর্পোরেশনের এক কোটি ২৩ লাখ, এ মান্নান অ্যান্ড সন্সের এক কোটি ৩ লাখ, জিয়ান এন্টারপ্রাইজের এক কোটি ৯৭ লাখ টাকা, লায়লা সিন্ডিকেট ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার এন্টারপ্রাইজের এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রহমানিয়া অ্যান্ড সন্সের ৯ কোটি ৬ লাখ, চিটাগাং ডাইংয়ের এক কোটি ৩৯ লাখ, এক্সিম ইন্টারন্যাশনালের ৩ কোটি ৮৯ লাখ, মাহমুদ ট্রেডিংয়ের ৬ কোটি ৮৮ লাখ, কে এস ইন্টারন্যাশনালের কাছে এক কোটি ৪৬ লাখ, এনামুল হক অ্যান্ড আদারসের কাছে এক কোটি ৩৫ লাখ, ফাহিম ট্রেডার্সের কাছে ৯ কোটি ৯০ লাখ ও সাইনেক্স ইন্টারন্যাশনালের কাছে ৬ কোটি ৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে এসআইবিএলের।  

এসআইবিএল ছাড়াও ঋণ আদায়ে ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকও তাদের বেশ কয়েকজন খেলাপি গ্রাহকের তথ্য বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠিয়েছে।

ব্যাংকিং পরিভাষায়, খেলাপি ঋণের তিনটি ধাপ রয়েছে- প্রথমটি সাব স্টান্ডার্ড, দ্বিতীয়টি ডাউটফুল এবং শেষ ধাপটি হচ্ছে ব্যাড বা লস (মন্দ বা ক্ষতিজনিত)। এর মধ্যে ব্যাড বা লস পর‌্যায়ের খেলাপি ঋণ হচ্ছে সবচে খারাপ পর‌্যায়ের ঋণ, যা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা শুন্য। 

এধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংককে মুনাফা থেকে ১০০ ভাগ প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে হয় 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমান দাড়িয়েছে ৪২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা মন্দ বা ক্ষতিজনিত হয়ে পড়েছে।