ক্ষতির পরিমাণ বাজেটের অর্ধেক: কাজী আকরাম

অবরোধ-হরতালে ৭০ দিনে অর্থনৈতিক ক্ষতি টাকার অঙ্কে বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের অর্ধেক ছাড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2015, 11:54 AM
Updated : 16 March 2015, 11:55 AM

বিএনপি জোটের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘অর্থনীতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তব্যে এই দাবি করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের শীর্ষ এই ব্যক্তি।

চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে, রাজনৈতিক আন্দোলনে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি বইতে হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। 

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ ডাকেন, এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে তার সঙ্গে শুরু হয় প্রায় লাগাতার হরতাল।

হরতাল-অবরোধে সহিসংতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি কয়েক হাজার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, পণ্য পরিবহন হচ্ছে বিঘ্নিত।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও এই সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

কাজী আকরাম বলেন, “যে ক্ষতি হচ্ছে, তা টাকার অঙ্কে হিসাব করা যাবে না। তবে মোটা দাগে এটা বলব, এই ৭০ দিনে মূল বাজেটের অর্ধেকের বেশি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতি সবচেয়ে হয়েছে পরিবহন খাত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের।”

বর্তমান আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন মানতে নারাজ এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “রাজনীতি তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। সবই অর্থনীতি ধ্বংস করার আন্দোলন।

“আমরা ভাগ্যহত যে আমাদের দেশের রাজনীতিকরা পেট্রোল বোমার রাজনীতি করেন।”

সংলাপে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন বলেন, “আমরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই ক্ষতি থেকে বের হতে না পারলে আমাদের আবাসন খাত বন্ধ হয়ে যাব।”

বাংলাদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামিউল আহমেদ বলেন, তার খাতই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। 

“রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রথম শিকার হয় পর্যটন খাত। আমরা অনেক অনুরোধ করেছি। এখন মনে হচ্ছে, বাঁচার জন্য গণকান্না অনুষ্ঠান করতে হবে।”

সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান বলেন, “আমাদের এখন মরার অবস্থা। আমরা সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।

ফাইল ছবি

“আমাদের বাঁচার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, যে কোনো উপায়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন।”

সংলাপের সঞ্চালক বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, “আমরা মুক্তি চাই। এজন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বা সংলাপ, যা দরকার সরকার সেটা করবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা। আমরা নিরাপত্তা চাই।”

যে কোনো পন্থায় স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “শুধু যে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, এমন নয়। অনেক দেশই কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেছে। আমরা সংলাপ বা নিয়ন্ত্রণ যে কোনো উপায়ে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চাই।”

রানার গ্রুপের মালিকানাধীন পাক্ষিক পত্রিকা ‘টাইম ওয়াচ’ আয়োজিত এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও রানার গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আলী দ্বীন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাইম ওয়াচের উপদেষ্টা সম্পাদক বজলুর রায়হান।