সোনালীর টাকা কেটে হল-মার্কের দায় শোধ শুরু

সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নিয়ে হল-মার্ক গ্রুপের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2015, 03:09 PM
Updated : 9 Feb 2016, 06:22 PM

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের এফসি ক্লিয়ারিং হিসাব থেকে এক লাখ ১২ হাজার ৩৭০ ডলার কেটে নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাবে জমা করে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আহসানউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব বিল পরিশোধে সোনালী ব্যাংককে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। তাদের পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও ব্যাংক বিল দিচ্ছিল না।

“বিল আটকে থাকায় ব্যাংক খাতে অনেক জটিলতাও হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নিয়ে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছি।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা জানান, হল-মার্কের কাছে বিল আটকে আছে এমন অন্যান্য ব্যাংক তাদের দাবি নিয়ে এলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো তাদের পাওনাও মেটানোর ব্যবস্থা করা হবে।

হল-মার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান প্যারাগন নিট কম্পোজিট এক লাখ ১২ হাজার ৩৭০ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এলসির মাধ্যমে। আর ওই আমদানি বিল পরিশোধের বিষয়ে হল-মার্কের হয়ে ‘গ্যারান্টি’ বা স্বীকৃতি দিয়েছিল সোনালী ব্যাংক।

স্বীকৃতির বিষয়টি এ রকম- আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে আমদানি বিল পরিশোধ না করলে সোনালী ব্যাংক তা পরিশোধ করে দেবে। এক্ষেত্রে সাধারণত ১৮০ দিন সময় থাকে।

সোনালী ব্যাংক হল-মার্কের পক্ষে দেশের ৪২টি ব্যাংককে এ রকম দুই হাজার ৩৪২টি বিলের গ্যারান্টি দিয়েছিল, যার অর্থমূল্য এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা।

কিন্তু ২০১২ সালে হল-মার্কের ঋণ জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সোনালী ব্যাংকে এসব বিল আটকে যায়।

২০১০ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে হল-মার্ক গ্রুপের আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে সে সময় ব্যাপক শোরগোল ওঠে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আর্থিক খাতের বড় এই কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্ত শুরু করে দুদক। হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদসহ সোনালী ব্যাংকের ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা হয় ১১টি মামলা।

সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কসহ ছয় প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতিতে লোপাট হওয়া তিন হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে কিছু টাকা সমন্বয় হলেও তিন হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই বকেয়ার দুই তৃতীয়াংশ অর্থ সরাসরি হল-মার্ক ও বাকি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে গেছে। ব্যাংকিং পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ফান্ডেড দায়’।

আর বাকি বকেয়া তৈরি হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের মাধ্যমে, যাকে বলা হয় ‘নন-ফান্ডেড’ দায়। এই দায়ের টাকাই এখন সোনালী ব্যাংককে পরিশোধ করতে হচ্ছে।  

সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদে প্রণীত দশ নীতিমালার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ৫৮৬টি বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয় সোনালী ব্যাংক। এর মধ্যে ৩৬১টি বিলের বিপরীতে ১ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার পরিশোধও করা হয়।

বাকি ২২৫টি বিলের বিপরীতে ৩২টি ব্যাংকের ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৪২০ ডলার পাওনা এখনো পরিশোধ করেনি সোনালী ব্যাংক, যার ৫০টি বিল নিয়ে মামলা চলছে।

পাওনাদার ব্যাংকগুলোর দাবির ভিত্তিতে গত ১৫ ডিসেম্বর ব্যাংকার্স সভায় এসব বিল পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংককে এক মাসের সময় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানিয়ে দেওয়া হয়, সোনালী ব্যাংক পাওনা পরিশোধ না করলে তাদের এফসি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে দায় মেটানো হবে।

এরপরও সোনালী ব্যাংক বিল পরিশোধ না করে আরও যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সময় চায়।

এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি পাঠিয়ে টাকা কেটে দায় মেটানোর সিদ্ধান্ত সোনালী ব্যাংককে জানিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে এফসি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত স্থিতি (অর্থ) রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এখন ধারাবাহিকভাবে সোনালী ব্যাংকের গ্যারান্টি বা স্বীকৃতি দেওয়া ১৭৫টি বিলের পাওনা বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করে দেবে। এসব বিলের বিপরীতে ৪৭ লাখ ডলার পাওনা রয়েছে ৩২টি ব্যাংকের।