আট মাসে ২০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি

টানা দুই মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও বাড়ছে দেশের রপ্তানি আয়।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2015, 03:05 PM
Updated : 21 March 2015, 06:14 PM

অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের আয় হয়েছে দুই হাজার ৩১ কোটি (২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশের বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৫ দশমমিক ১৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে।

জানুয়ারি মাসে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ৫ শতাংশ। আর জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ০৬ শতাংশ।

দুই মাস ধরে বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকলে রপ্তানি আয় আরও বাড়ত বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

তবে এখনকার এই অস্থিরতার প্রভাব আগামীতে ঠিকই পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন আমাদের রপ্তানির মৌসুম চলছিল। সহিংসতা না থাকলে অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও রপ্তানি আয় বাড়ত।

“এখন সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। দেশে প্রতিদিন আগুন-পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়ে মারা যাচ্ছে। সব জায়গায় আতঙ্ক। বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বায়াররা অর্ডার বাতিল করে দিচ্ছে। এর প্রভাব দেখা যাবে কয়েক মাস পর।”

অবশ্য সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারাতেই রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সেলিম ওসমান।

“আমরা এখন আমেরিকা-ইউরোপ ছাড়াও অনেক নতুন বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানি করছি। আমরা যে দামে যে মানের পোশাক রপ্তানি করি তা অন্য কোনো দেশ করতে পারবে না।... সে কারণেই বলছি, সব বাধা অতিক্রম করে আমরা রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখব।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখতের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ‘খারাপ নয়’।

“সমস্যা হচ্ছে- এ পরিস্থিতি কতদিন থাকবে। দ্রুত এর নিরসণ না হলে ভবিষ্যতে আমাদের রপ্তানি খাত বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়বে। এখন যে অস্থিরতা-সংঘাত চলছে তার প্রভাব পড়বে ছয় মাস-এক বছর পর।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালের সহিংসতার প্রভাব তুলে ধরে জায়েদ বখত বলেন, “তখন  যেসব রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছিল তার প্রভাব কিন্তু এখন আমরা দেখছি। গত অর্থবছর যেখানে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এখন সেটা ৫ শতাংশ। এছাড়া এখন বিমানে পণ্য পাঠাতে গিয়ে খরচও বেড়ে গেছে।”

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার, গতবছর ফেব্রুয়ারিতে যা ২৩৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছিল।

জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ দুই হাজার ৩১ কোটি ডলার আয় করেছে, আগের অর্থবছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার।

শুভাশীষ বসু জানান, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

এর মধ্যে উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮৪১ কোটি ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

আর নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮১৪ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আট মাসের হিসাবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৭ শতাংশ। ফুটওয়্যার (পাদুকা) রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট মাসে তার ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ অর্জন করা গেছে। হরতাল-অবরোধ-সহিংসতার মধ্যে এই অর্জনকে আমি সন্তোষজনই বলব।”

অর্থবছর শেষে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা পূরণ যদি সম্ভব নাও হয়, তারপরও তা কাছাকাছি থাকবে বলে এই কর্মকর্তার ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৩২০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

তবে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।