ক্ষতির খতিয়ান বিদেশিদের জানাল এফবিসিসিআই

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাতের মাশুল অর্থনীতিকে কিভাবে দিতে হচ্ছে, তা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2015, 01:45 PM
Updated : 18 Feb 2015, 02:33 PM

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের শুরু থেকে উদ্বিগ্ন এফবিসিসিআই এই কর্মসূচি দেড় মাসে গড়ানোর পর বুধবার বিদেশি কূটনীতিকদের একটি সভায় ডেকে এনে তাদের কাছে ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে।

সোনারগাঁও হোটেলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনের আয়োজনে এই সভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, কোরিয়া, ভারত, চীনসহ ২৮টি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরামউদ্দীন আহমদ বলেন, চলমান অবরোধ-হরতালে সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রতিদিন ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। গত ৪৪ দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট ১ দশমিক ২০ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ২০ দল, যাতে সহিংসতা ঘটছে। তাদের এই দাবিতে নতি স্বীকার না করার কথা জানিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনরা।  

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, রাশিয়ার রাষ্ট্রদুত আলেকজান্ডার নিকোলায়েভ, জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা চলমান সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের ভেতর থেকেই করার প্রত্যাশা রেখেছেন।

অবরোধ-হরতালের কথা তুলে ধরে কাজী আকরাম সভায় বলেন, দেশ যখন সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন চলতি বছরের শুরু থেকে কিছু রাজনৈতিক দল সহিংস কর্মসূচি নেওয়ায় আমাদের অর্থনীতিকে ব্যাপক মূল্য দিতে হচ্ছে।

অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি এই কর্মসূচিতে নাশকতায় ৮৮ জনের প্রাণহানি, ২০০ মানুষের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কথাও বলেন তিনি; আসে পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীদের বিপর্যয়ে পড়ার কথাও।

রাজধানী ঢাকাকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে ডাকা অবরোধে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে উঠে আসে এসবিসিসিআই সভাপতির কথায়।

“চলমান অবরোধ-হরতাল সারা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এতে দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ গুণতে হচ্ছে, শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে।”

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আমরা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। এজন্য এফবিসিসিআই বারবার রাজনৈতিক দলগুলোকে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি না দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

“কারণ এসব কর্মসূচি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও দেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ধরনের নেতিবাচক কর্মসূচি অর্থনীতির ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে।”

বর্তমান অবরোধ-হরতালকে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে মানতে নারাজ কাজী আকরাম একে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ বলে আখ্যায়িত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, “বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা এখানকার জনগণের ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। এটি গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে ব্যবসায়ী, নাগরিক প্রতিনিধি আছে। এখানকার সমস্যা আমরা আশা করি, তাদের মাধ্যমেই সমাধান হবে।”

“আমি বলব বাংলাদেশের ভালোর জন্য অবস্থার পরিবর্তন দরকার,” বলেন সদ্য বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়ে আসা এই কূটনীতিক।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলায়েভ বলেন, “এই অস্থিরতা, সহিংসতা কেন হচ্ছে বা কারা করছে, সেটা বের করা আমার কাজ না। তবে আমি এটা অবশ্যই বলব, যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারের কাজ দেশের এবং মানুষ ও অর্থনীতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা আশা করব, সরকার সেই দায়িত্বশীলতা দেখাবে।”

এফবিসিসিআই সভাপতি বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, “এখন আমাদের মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই দুর্যোগও খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।”

সভায় কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়া-পিয়ের লাহামি, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান ইয়ংও বক্তব্য রাখেন।

সভায় আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, পালেস্টাইন, সুইডেন, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ভ্যাটিক্যান সিটি, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারত দূতাবাসের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

এফবিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, উইমেন চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহমেদসহ শতাধিক ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।