উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪২ লাখ ৪৪ হাজার দরিদ্র শিক্ষার্থীর কাছে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেবে সরকার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2015, 10:23 AM
Updated : 17 Feb 2015, 10:24 AM

৫৩ জেলার ২১৭ উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এসব শিক্ষার্থীর টাকা প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পটিসহ ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।

এর মধ্যে তিনটি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প বলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড প্রজেক্ট দ্বিতীয় পর্যায় (এসইএসপি) নামের প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন হবে।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে।

দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের মাসে কত টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হবে- জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ক্ষেত্রে মাসিক উপবৃত্তি হবে ১০০ টাকা। ৮ম শ্রেণির ক্ষেত্রে তা ১২০ টাকা এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ক্ষেত্রে মাসিক উপবৃত্তি ১৫০ টাকা।

অন্যদিকে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক ১৫ টাকা হিসেবে টিউশন ফি দেওয়া হবে। ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ক্ষেত্রে তা ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও এসএসসি পরীক্ষা ফি বাবদ বার্ষিক এককালীন ৭৫০ টাকা করে দেওয়া হবে।

কী অনুপাতে ছাত্র-ছাত্রীদের এ উপবৃত্তি দেওয়া হবে- সে সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রতি শ্রেণিতে মোট ছাত্রীর ৩০ শতাংশ এবং মোট ছাত্রের ১০ শতাংশ এই উপবৃত্তি পাবে।

উপবৃত্তি পাওয়ার কিছু শর্তও রয়েছে, যা বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান মুস্তফা কামাল।  

শিক্ষার্থীর অভিভাবকের জমির পরিমাণ ৭ শতাংশের নিচে এবং বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ৭৫ ভাগ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বার্ষিক পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। ৮ম ও ৯ম শ্রেণির ক্ষেত্রে তা হতে হবে ৪০ শতাংশ।

“আরেকটি শর্ত হল, এসএসসি অথবা দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে অবিবাহিত থাকতে হবে,” বলেন মুস্তফা কামাল।

উপবৃত্তি বিতরণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং বা বিকাশ বা অন্য কোনো সহজ পদ্ধতিতে সরাসরি যোগ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে এই উপবৃত্তি প্রদান করা হবে।”

উপবৃত্তি দেওয়ার লক্ষ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “অর্থের অভাবে কারও লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয়ে যায় সে বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করতে চায়। যে পর্যন্ত আমরা শতভাগ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত এ প্রকল্পটি চলমান থাকবে।”

সরকার আশা করছে, প্রকল্পটি চলতে থাকলে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমে আসবে।

বর্তমানে সরকার সারাদেশে পাঁচটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ থেকে স্নাতক পর্যন্ত উপবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একনেকের আগের সভাতেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আরও একটি উপবৃত্তি সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিনের সভায় ঢাকার ১২টি এলাকায় গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার চালু সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৭১৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।

এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৩৭ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ৪৫ কোটি টাকা দেবে। বাকি ২ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে।

প্রকল্পটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় রোধে সরকার ঢাকার ১২টি এলাকায় ২ লাখ প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এলাকাগুলো হল- বাড্ডা, গুলশান, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, মিরপুর, কাফরুল, খিলক্ষেত, উত্তর খান, দক্ষিণ খান, উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল।

বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়ায় ৪ হাজার প্রি-পেইড মিটার চালু রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, “এর সফলতা বিবেচনায় নিয়েই আমরা রাজধানীর পুরো ২৪ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে একাজ করা হবে।

“রাজধানীতে পুরোপুরিভাবে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করানো গেলে যে পরিমাণ গ্যাস বেঁচে যাবে, তা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগালে তা থেকে দৈনিক ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রি-পেইড মিটার যাতে দেশেই তৈরি করা যায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সাথে সিলিন্ডার গ্যাস যাতে শহর ও গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুলভে ও সস্তায় পাওয়া যায় সে ব্যাপারেও সরকার প্রধানের নির্দেশনা রয়েছে।