পতাকা আর জাতীয় সংগীতে প্রতিবাদ জানাবেন ব্যবসায়ীরা

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দাবিতে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় দাঁড়াবেন ব্যবসায়ীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2015, 09:16 AM
Updated : 8 Feb 2015, 07:02 AM

দেশের প্রতিটি জেলায় ব্যবসায়ী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সামনে বেলা ১২টা থেকে ১৫ মিনিটের জন্য এ কর্মসূচি হবে। এ সময় ব্যবসায়ীরা শান্তির জন্য গাইবেন জাতীয় সংগীত।

রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জরুরি বোর্ড সভা ও সাবেক সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, ওই কর্মসূচি পালনের পর তারা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেবেন।

কাজী আকরাম বলেন, “বর্তমানে যে ধংসাত্মক কর্মসূচি চলছে, আমরা তা চাই না। আমরা দেশের সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ীকে নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধের দাবিতে দাঁড়াব।”

‘দেশ বাঁচাও, অর্থনীতি বাঁচাও’ এই কর্মসূচির স্লোগান হবে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আমরা কারও পক্ষে নই। আমরা অর্থনীতির পক্ষে, অর্থনীতির কথা আমাদের বলতে হবে।”

২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচন সামনে রেখে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটেও শান্তির প্রতীক সাদা পতাকা নিয়ে দেশজুড়ে মানববন্ধন করে সহিংতার প্রতিবাদ জানিয়েছিল এফবিসিসিআই। এবার তারা দাঁড়াবেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে।

সারা দেশে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় জোট হল এফবিসিসিআই। জেলা ও মহানগরভিত্তিক ব্যবসায়ীদের চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনগুলো এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। সংগঠনটি দাবি করে, দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি তারা।

এই ব্যবসায়ীদের নিয়ে সারা দেশে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করা, স্মারকলিপি দেওয়ার পরও দাবি আদায় না হলে ‘এমন কিছু’ করা হবে, যাতে দুই প্রধান জোট আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়।

তবে সেক্ষেত্রে তারা কী করবেন- সে বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেননি।  

কাজী আকরাম  জানান, “হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আদালতে যাওয়ার অবস্থান থেকে এফবিসিসিআই সরে যায়নি। সেটিও সক্রিয় বিবেচনায় আছে।”

এর আগে এফবিসিসিআই অর্থনীতির স্বার্থে আইন করে হরতাল বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিল।

সকালে যখন মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বোর্ড সভা হয়, তখন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী ও মো. হেলাল উদ্দিনসহ ৪৮ জন পরিচালকের অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন।

আর বিকালে সাবেক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে মাহবুবুর রহমান, মীর নাসির হোসেন, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, আনিসুল হক, এ কে আজাদ, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান ও বর্তমান সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ঘনঘন হরতাল-অবরোধের‘ প্রতিবাদে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীরা সারা দেশে সাদা পতাকা হাতে যে মানববন্ধন করেছিলেন, এফবিসিসিআইয়ের সেই কর্মসূচির নাম ছিল ‘প্রতিবাদবন্ধন’।

রোববার বোর্ডসভা শেষে আবারও পতাকা হাতে রাস্তায় নামার কর্মসূচি ঘোষণা করে কাজী আকরাম বলেন, “আমরা দেশ বাঁচানোর জন্য জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে পথে দাঁড়াব। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পালিত হবে এ কর্মসূচি। আমরা সবাইকে একটা মেসেজ দিতে চাই- দলের চেয়ে দেশ বড়। এই মুহূর্তে দেশ রক্ষা করা কর্তব্য।”

২০১৩ সালে এফবিসিসিআইয়ের সেই কর্মসূচির পরও রাজনৈতিক নেতাদের সাড়া না পাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “একটা কাজ তো শুরু করতে হয়, আমরা একটা কর্মসূচি নেব। সেটা পালন করব। তারপরও ফল না হলে আমরা এমন কিছু করব যাতে তারা আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়।”

গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধ চলছে। এতে প্রথম ১৬ দিনে সাড়ে ৩৬ হাজার টাকার বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়েছে বলে সম্প্রতি একটি ব্যবসায়ী সংগঠন হিসাব দেখায়।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পের তিন সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ নেতারা রাজনৈতিক সংঘাতে অর্থনীতির সঙ্কটের কথা তুলে ধরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

গত ১০ জানুয়ারি কাজী আকরাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সংলাপের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। এবার আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না। সম্ভব হলে আইনি পদপেক্ষ নেব।”

জানা গেছে, ওই ঘোষণার পর এফবিসিসিআই তিন সদস্যের একটি কমিটি করে পাঁচজন শীর্ষ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে দুই জন তাদের লিখিত মতামতও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী আকরাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনি পথে প্রতিকার চাওয়ার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। আমরা আশা করি অবরোধের বিরুদ্ধে একটা প্রতিকার পাওয়া যাবে। ভারতীয় আদালতে বন্ধ এর বিরুদ্ধে রায় আছে।”