এ নিয়ে চতুর্থবারের মত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করল। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক এক বিলিয়ন ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আতিউর রহমান।
প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির সব খাতই যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তখন রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি থাকা একটি স্বস্তির খবর।
“আমার বিশ্বাস ২০১৩ সালের সহিংসতা কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল চলমান অস্থিরতার মধ্যেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে।”
“আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত যে শক্তি আছে সেই শক্তি নিয়ে তারা সব বাধা-বিপত্তি দূর করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে।”
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ছাড়ায় গত বছরের ৭ অগাস্ট। আকুর বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়।
৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধের আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে।
১৫ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
৬ জানুয়ারি রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। আকুর বিল শোধের পর তা ২১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বুধবার তা ফের ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।
দুই মাস পর পর আকুর বিল পরিশোধ করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আকুর বিল চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করা হয়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের বিল পরিশোধ করা হবে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে।
তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন ছাইদুর রহমান।
রেমিটেন্স সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত (১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত) প্রায় ১০০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের যে কোন মাসের প্রথম ২৩ দিনের চেয়ে বেশি।
মাস শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা।
জানুয়ারি মাসের আগ পর্যন্ত চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ্যাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের রপ্তানি আয় বেশি এসেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এদিকে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) ডলার কেনা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত) বাজার থেকে ১৫৪ কোটি (১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।