বড় খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা অনুমোদিত

বড় ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুযোগ দিতে ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 06:30 PM
Updated : 27 Jan 2015, 06:30 PM
মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ নীতিমালার বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন ডেপুটি গভর্নর।

এই নীতিমালার আওতায় সুবিধা পেতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর‌্যন্ত আবেদন করা যাবে, যা এক ঋণগ্রহিতা একবারই পাবেন।

সময় বেঁধে দেওয়ার কারণ হিসেবে সুর চৌধুরী বলেন, “এই ধরনের সুবিধা যদি ক্রমাগত দেয়া হয়, তাহলে একটা নৈতিক সমস্যা তৈরি হবে। অনেকে খেলাপি হয়ে এই সুবিধা নিতে আসবে। এজন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।”

মেয়াদি ঋণের পুনর্গঠনের মেয়াদ ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ১২ বছর। আর তলবী ও চলমান ঋণের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৬ বছর।

ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধাপ্রাপ্ত কোম্পানি প্রথম তিন বছর কোনো নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না।

তবে প্রতারণা বা জালিয়াতির সাথে জড়িত কোনো ঋণগ্রহিতা ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে না। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা রয়েছে অথবা অন্য কোন আইনে অন্য কোনো সংস্থায় মামলা তারাও এই পুনর্গঠন সুবিধা পাবে না।

বেক্সিমকো গ্রুপসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ দাবি তোলার বাংলাদেশ ব্যাংক এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।

সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের কয়েকটি ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ ২৬ বছর মেয়াদে পরিশোধের জন্য বিশেষ সুবিধা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের কাছে আবেদন করে। এর পর চট্টগ্রামের মোস্তফা গ্রুপ ও এস আলমও একই ধরনের সুবিধা চেয়ে আবেদন করে।

তবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামো সমস্যা ও আন্তর্জাতিক বাজার প্রেক্ষাপটে যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সময়মত ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না তাদের সুবিধা দিতে এ নীতিমালা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন এস কে সুর চৌধূরী।

ডেপুটি গভর্নর বলেন, “ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পাশ করেছে। গত বোর্ড সভায় যেসমস্ত ঋণ গ্রহীতারা অপরিহার‌্য কারণে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে সমর্থ হচ্ছে না, তাদেরকে ঋণ পরিশোধে কিছুটা নীতি সহায়তা দেওয়ার জন্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করার জন্য, ব্যাংকের ঋণ আদায় যাতে সহজ হয় এজন্য এই নীতিমালা করা হলো।

“সেই নীতিমালা আজকে আমি পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করেছি। পর্ষদ সেটা দেখে কিছু মতামত ব্যক্ত করেছে, কিছু সংশোধনী এনে নীতিমালাটি অনুমোদন করেছে। আমরা এখন নীতিমালাটি সার্কুলার করে ব্যাংকগুলোকে পরিপালনের নির্দেশ দেব।”

এই নীতিমালার আওতায় ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা পেতে হলে একক বা গ্রুপভুক্ত ঋণগ্রহিতার বকেয়া ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা হতে হবে।  তবে একটি গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান মিলে ৫০০ কোটি টাকা হলে সুবিধা নিতে নেওয়া যাবে।

সুর চৌধুরী উদারহরণ দিয়ে বলেন, “একটি গ্রুপের চারটি ব্যাংকে ঋণ আছে, চারটি ব্যাংক সেই গ্রুপের ঋণ একসাথে করে একটা কনসোর্টিয়াম করে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে পারে। অথবা চারটি ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন আবেদন করতে পারে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, দেশে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এমন গ্রুপের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫০টি। 

এর আগে ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাংকের গ্রহীতাদের খেলাপি ঋণ পুণঃতফসিলের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেসময় খেরাপি ঋণ গ্রহীতাদের ডাউন পেমেন্টে (এককালীন জমা) ছাড় দেওয়া হয়। গত বছরের জুনে এই সুবিধা শেষ হয়েছে।

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে ঋণের মান অনুযায়ী ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এককালীন জমা দিতে হয়। ওই বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা মাত্র ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে।

এই বিশেষ সুবিধায় দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এরপরও ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমেনি।

সর্বশেষ তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।