নতুন বছরের ২৩ দিনেই প্রায় ১০০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। মাস শেষে এই রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
অতীতের মত এবারও প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখবে- এমন আশা অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখতের।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “টানা হরতাল-অবরোধে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। দিন যতোই যাচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ ততোই বাড়ছে। কবে পরিস্থতি স্বাভাবিক হবে-তা কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু এতো অস্থিরতার মধ্যেও আমাদের প্রবাসীরা তাদের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে চলেছেন।”
এর আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে ‘বিশেষ’ অবদান রেখেছেন বলে জানান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা (বিআইডিএস) প্রতিষ্ঠানের এই গবেষক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত (১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত) ৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের যে কোন মাসের প্রথম ২৩ দিনের চেয়ে বেশি।
মাস শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রেমিটেন্স সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসের আগ পর্যন্ত চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ্যাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা।
এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ১২৬ কোটি ডলার। নভেম্বর মাসে এসেছিল ১১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
অক্টোবর মাসে এসেছিল ১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
পরের মাস অগাস্টে এসেছিল ১১৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে ১৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরে তিন বার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ছাড়ায় গতবছরের ৭ অগাস্ট। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়।
৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধের আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে।
১৫ ডিসেম্বর ফের রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ছাইদুর রহমান।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রিজার্ভ ফের ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে বলে জানান তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের রপ্তানি আয় বেশি এসেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
দুই মাস পর পর আকুর দেনা শোধ করতে হয়।