কুল চাষে ভাগ্য বদল

কুল চাষ করে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন যশোরের শার্শা উপজেলার পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2015, 01:44 PM
Updated : 21 Jan 2015, 01:44 PM

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবন করা আপেল কুল, বাউকুল ও ঢাকা-৯০ জাতের কুলসহ কয়েকটি জাতের চাষ করেন তারা। মাত্র চার মাসে লাখ টাকার ফলন দেখে জীবন বদলের স্বপ্ন দেখছেন।

পুরো শার্শা উপজেলাজুড়েই কুলচাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে বেনাপোল, বাগআঁচড়া, উলাশি, শার্শা ও কায়বা ইউনিয়নে।

উপজেলার বেনাপোল, কাগজপুকুর, উলাশি, নাভারন, হাড়িখালি, বাগআঁচড়া ও বেলতলা বাজারে চলে মৌসুমী কুলের বেচাকেনা। এখানে আছে অনেকগুলো কুলের আড়ত।

ওইসব আড়ত থেকে প্রতিদিন অন্তত দুই ট্রাক কুল ঢাকা ও বরিশালের ফল বাজারে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শার্শায় এবার পাঁচ শতাধিক চাষি অন্তত এক হাজার বিঘা জমিতে কুলচাষ করেছেন।

উপজেলার ৫৬০ বিঘা জমিতে তাদের দেখিয়ে দেওয়া নিয়মানুযায়ী কুলের চাষ হয়েছে। ওদেরকে কৃষিবিভাগ বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা করে আসছে।

তবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে কুল চাষ করেছেন।

চার মাসে ফসল ঘরে ওঠে। অক্টোবরের শেষে কুল তোলা শুরু হয়। চলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।

সামটা গ্রামের খোদাবক্স মোড়লের ছেলে কৃষক খোরশেদ আলম (৪৫) কুলচাষ করেই জীবন-জীবিকার অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, যা অন্যদের অনুপ্রাণিত করে।

অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করে খোরশেদ আলম অনেককিছু করেছেন। একটি কুলবাগান থেকে করেছেন তিনটি। শার্শার নাভারন-সাতক্ষীরা সড়কের হাড়িখালি মোড়ে রয়েছে তার ‘বিমিল্লাহ ফলভান্ডার’। ৪৫জন কুলচাষি তার মাধ্যমে ঢাকা ও বরিশালে ফল পাঠান।

উলাশির কাঠুরিয়া মাঠে খোরশেদের কুল বাগান। গোটা বাগানজুড়ে বাউকুল, আপেলকুল ও নারকেলকুল ধরে আছে। ফলের ভারে স্বল্প উচ্চতার গাছগুলো নুইয়ে পড়ছে।

বাউকুল পুরোপুরি পুষ্ট হয়ে গেছে, আকারও বেশ বড়। আপেল কুল এখনও পুষ্ট হয়নি। সেগুলোর বর্ণ অনেকটা বাদামি ও খয়েরি রঙের মিশ্রণ।

খোরশেদ জানান, পুষ্ট হলে এগুলো সাদা হয়ে যাবে। আর নারকেলকুল তীব্র শীতের কারণে এখনও অপুষ্ট রয়ে গেছে।

তিনি জানান, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। বর্তমানে তার বাগান রয়েছে তিনটি। বিগত ১০ বছর তিনি সফলভাবেই কুলের চাষ করে আসছেন।

ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত সেচ ও সার দিতে হয়। বাগান নিয়মিত পরিচর্যার জন্য ৬/৭ জন লোক রাখার পাশাপাশি ব্যাপক শ্রম দিতে হয়।

বিঘা প্রতি সবমিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ৩০/৩২ হাজার টাকা। আর ফলন পাওয়া যায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।

এ বছর তার ৮ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকার কিছু বেশি। প্রথম বছর তাই খরচ একটু বেশি। দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। মৌসুম শেষে তিনি বিক্রি করে পাবেন ৮ লাখ টাকা। ৩/৪ লাখ টাকা তিনি লভ্যাংশ পাবেন বলে আশা করছেন।

এ মৌসুমে ইতোমধ্যে ঢাকা ও বরিশালের ফলের আড়তে ট্রাকযোগে কুল পাঠানো শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের রেক্সনা খাতুন, শ্যামলাগাছির মনি বেগম, গাতিপাড়ার আহসান হাবিব, গোগার সহিদুল ইসলাম, গাতিপাড়ার সফিউদ্দিনও সফল কুলচাষি।

দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে মনি বেগম এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। তার স্বামী শহিদুল ইসলাম একজন রাজমিস্ত্রি। স্বামীর প্রতিদিনের আয় ৩শ টাকা। ওই টাকায় চার জনের সংসার চালানো কঠিন।  

মনি বেগম বলেন, সরকারের সহায়তায় কুল চাষ করে তাদের সংসারে শান্তি ফিরেছে।

তিনি এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছেন। আরও ৫০/৬০ হাজার টাকার কুল বিক্রির আশা করছেন।

এ বছর তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আগামী ১০ বছর আর বড় কোনো খরচ নেই বাগানে। এখন বছর বছর শুধু টাকা আসবে। তাই তার এখন শুধু স্বপ্ন দেখার পালা।   

উলাশির কাঠুরিয়া মাঠে কথা হয় কুলচাষি আব্দুল জব্বার ও আব্দুল আহাদের সঙ্গে।

জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মাঠে এবছর নতুন করে ১১ বিঘা জমিতে কুল গাছ লাগাইছি। একদিন বাদে ৪শ কেজি করে কুল পাচ্ছি। প্রতিকেজি কুল বিক্রি করছি ৮০/৯০ টাকায়।”

প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার কুল বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।