‘আউটসোর্সিং’ নিয়ে নীতিমালা পেল ব্যাংকগুলো

তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সেবা কার‌্যক্রম পরিচালনার বৈধতা দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2015, 03:38 PM
Updated : 19 Jan 2015, 03:38 PM

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ‘আউটসোর্সিং বন্দোবস্ত নীতিমালা’ শীর্ষক সার্কুলার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো হয়েছে।

এতে আউটসোর্সিংয়ের সংজ্ঞা, আউটসোর্সিং কর্মকাণ্ডের পরিধি, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, চুক্তি সম্পাদন, গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণ, পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এটিএম বুথে টাকা ভরা (নোট ফিডিং), গ্রাহকের অভিযোগ ও পরামর্শের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার কল সেন্টার পরিচালনা, চাকরি প্রার্থীদের যোগ্যতা ও কাগজপত্র পরীক্ষা, নিরাপত্তা প্রহরী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ- এমন অনেক সেবাই এখন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

এতোদিন ব্যাংকগুলো নিজেদের সুবিধামতো তৃতীয় পক্ষ নির্বাচন করে এলেও এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে হবে।

নীতিমালা প্রণয়নের ফলে ব্যাংকের আউটসোসিং কার্যক্রমের একটি স্বীকৃত ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং উদ্ভূত বিরোধ নিষ্পত্তির আইনগত ভিত্তি থাকবে।

কোন কোন সেবা আউটসোর্সিংয়ের মধ্যে পড়বে তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়, যাতে তাতে ২০টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাংকের নথি, রেকর্ড ও দলিলাদি এবং ইলেকট্রনিক বা ভার্চুয়াল ডাটা সংরক্ষণ, চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার এবং সমজাতীয় ব্যাংকিং দলিলাদি মুদ্রণ, টেলিফোন অপারেটর ও অভ্যার্থনাকারী, ঠিকানা ও দলিলাদির সঠিকতা যাচাইকরণ, কল সেন্টার, চিঠিপত্র গ্রহণ ও ডেসপাচ, ক্রেডিট ও ডেবিটকার্ড বিপণন, ঋণপ্রস্তাব প্রস্তুতির পূর্বধাপ পর্যন্ত ভোক্তা ও এসএমই ঋণের বিপণনমূলক কার্যাদি, প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎকারের পূর্বধাপ পর্যন্ত কর্মবল নিয়োগ প্রক্রিয়া, চাকুরি প্রার্থীদের যোগ্যতা ও কাগজপত্র যাচাই, পে-রোল প্রক্রিয়াকরণ ও কর্মচারী সুবিধা কর্মসূচি, কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি কর্মসূচি, গ্রাহক শিল্প ও বাজার জরিপ, এটিএম বুথ, বুথ ইউটিলিটি বিল সংগ্রহ বুথে নগদ অর্থ সরবরাহ সেবা, কাস্টমাইজড সফটওয়্যারের তদারকি ও উন্নয়নসহ আরো বেশ কিছু সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে এসব সেবার বাইরেও তৃতীয় পক্ষ ব্যবহার করে সেবা দিতে পারবে ব্যাংক।

দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই আউটসোর্সিং করা যাবে। তবে ব্যাংকের মৌলিক ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং মৌলিক কার্যক্রম আউটসোর্সিং করা যাবে না।

এছাড়া সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষা, আইন ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সেবা, ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট, বিদেশি প্রতিষঙ্গী ব্যাংকিং এবং ব্যাংকির সেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন কার্যক্রম যেমন, কুরিয়ার সার্ভিস, ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ও পয়ঃপরিষ্কার, খাদ্য সরবরাহ, ব্যাংক ভবনের নিরাপত্তা, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ পরিষেবা, টেলিফোন ও টেলিযোগাযোগ সেবা, বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য মিডিয়া বা ফার্মের ব্যবহার, স্টেশনারি মুদ্রণ (চেক, ড্রাফট ইত্যাদি ছাড়া) আউটসোর্সিং বলে বিবেচিত হবে না।

আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকের গোপনীয় তথ্য যাতে ফাঁস না হতে পারে সেবিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।

তাতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রকাশে নিষেধ রয়েছে এমন তথ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রকাশ করা যাবে না।”

সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা অসতর্কতাবশতঃ কোন অননুমোদিত ব্যক্তির কাছে ব্যাংক কিংবা গ্রাহকের গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করতে না পারে সে বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে ব্যাংককে।

এই সার্কুলার জারির আগে বিদ্যমান সকল আউটসোর্সিং বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।