লাভের মুখ দেখতে যাচ্ছে বিপিসি

জ্বালানি তেল বিক্রি করে এখন লোকসান গুণতে হচ্ছে না বলে সরকারকে ভর্তুকিও দিতে হচ্ছে না।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2014, 02:29 PM
Updated : 23 Dec 2014, 07:12 PM

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এই ‘স্বস্তি’ এনে দিয়েছে, স্থানীয় বাজারে দাম না কমালে এখন লাভের মুখ দেখবে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি।

বেশি দরে কিনে কম দামে বিক্রি করায় জ্বালানি খাতে এতদিন যে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছিল, ওই অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে যাওয়ায় তা মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৪- এর তথ্য অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮-০৯ অর্থবছর ছাড়া বিপিসি প্রতি বছরই মোটা অঙ্কের লোকসান দিয়ে আসছে। ২০০৮-০৯ এ  শুধু ৩২২ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।

চলতি অর্থবছরেরও জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তেল আমদানির জন্য সরকারের কাছ থেকে ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছিল বিপিসি।

“অক্টোবরের পর আর কোনো অর্থ আমরা সরকারের কাছ থেকে নিইনি, অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য আর কোনো অর্থ নিতে হবে না,” বলেন বিপিসির চেয়ারম্যান ইউনুছুর রহমান।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণেই তাদের ভর্তুকি নিতে হচ্ছে না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।

সেপ্টেম্বর মাস শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১১০ ডলার, যা এখন ৬০ ডলারে নেমে এসেছে।

জ্বালানি তেল আমদানি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) জ্বালানি তেল আমদানির জন্য মোট ১৭৬ কোটি ৭০ লাখ (১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম।

অথচ তেল আমদানির জন্য ২০১৩-১৪ অর্থবছরের এই চার মাসে তার আগের বছরের (২০১২-১৩) একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৩৭ শতাংশের মতো।

বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, পরিমাণগত দিক দিয়ে তেলের আমদানি কমেনি। দাম কমার কারণে খরচ কমেছে।

“এখন আমরা তেল আমদানির জন্য যে এলসি খুলছি, তার খরচ আগের থেকে অনেক কম পড়ছে। এই তেল দেশে আসতে ৩০/৩৫ দিন সময় লাগবে। যদি এ সময়ের মধ্যে স্থানীয় বাজারে তেলের দাম না কমে, তখন আমাদের লাভ থাকবে।”

অর্থ্যাৎ অক্টোবর থেকে যে তেল বাংলাদেশে আসছে, তাতে কেনা দর ও বিক্রি দর প্রায় সমান থাকছে। কোনো লোকসান হচ্ছে না। এখন যে এলসি খোলা হচ্ছে, সেই তেল বিক্রি করে লাভ হবে বিপিসির, যদি স্থানীয় বাজারে দাম না কমানো হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম কমানো হবে কি না- জানতে চাইলে ইউনুছুর রহমান বলেন, “সেটা সরকারের উপরের মহলের বিষয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার আমাদের নেই।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোপূর্বে বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

জ্বালানি তেল খাতে ভর্তুকি দিতে না হওয়া সরকারের ওপর চাপ কমিয়েছে, সে অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা যায় বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখতের চোখে এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ‘স্বস্তির’ খবর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছরই বিপিসি মোটা অঙ্কের লোকসান দিত। এবার যদি ভর্তুকি দিতে না হয়, সরকার এ খাতের অর্থ অন্য উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতে পারবে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আগামী বছরই ১০০% বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, উদ্বৃত্ত অর্থ তা সামাল দেবে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

বেতন কমিশনের সুপারিশ ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তেলের দাম যদি নিম্নমুখীই থাকে, তাহলে বেতন বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেটাও আর থাকবে না।”

২০১১-১২ অর্থবছরে বিপিসির লোকসানের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি  ১১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। তার আগের বছরে (২০১০-১১) লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছরে বিপিসির লোকসানের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) লোকসানের পরিমাণ ছিল তিন হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

এই বছরগুলোতে বিপিসি যে লোকসান দিয়েছে, তা সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিয়েছে।