বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে যা আছে

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পাশাপাশি সরকারকে বিশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার আনার সুপারিশ করেছে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন ও চাকরি কমিশন।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2014, 03:34 PM
Updated : 22 Dec 2014, 05:16 PM

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে জমা পড়া এই প্রতিবেদনে নতুন যে বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন ধরা হয়েছে।

পাশাপাশি কমিশন সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেছে।

কমিশন মনে করে, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদ্যমান পেনশনের হার বাড়ানো উচিৎ এবং কল্যাণ তহবিলে সংস্কার প্রয়োজন।

একইসঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়ি নির্মাণ ও গাড়ি কেনার জন্য অধিক সুবিধা সৃষ্টির বিষয়ে কিছু বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

বেতন কাঠামোর গ্রেড পদ্ধতিতে পরিবর্তন, বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণিকরণ পদ্ধতির বিলুপ্তি, ঔপনিবেশিক আমলের ইবি (ইফিসিয়েন্সি বার) তুলে দেওয়া, প্রেষণে নিয়োগ বন্ধ করার মতো সুপারিশও এসেছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবী নতুন এই কাঠামোতে বেতন পাবেন বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।

রোববার অর্থমন্ত্রীর হাতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় এই কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন পাঁচ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে এসব সুপারিশের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন।

তার ওই বক্তব্যের লিখিত অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য অবিকৃতভাবে প্রকাশ করা হলো।

অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশন প্রতিবেদন পেশকালীন বক্তব্য

অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদন আপনার কাছে পেশ করতে পারার সুযোগে আমরা কৃতার্থ। আপনার জ্যেষ্ঠ ছেলে শাহেদের অসুস্থতার কথা শুনে আমরা ব্যথিত। তার আশু এবং সম্পূর্ণ আরোগ্য কামনা করি।

২। বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ বিজ্ঞপ্তিত হয় ২৪/১১/২০১৩ তারিখে। আপনার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ১১/১২/২০১৩ তারিখে। কমিশনের ১২ তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ০৮/১২/২০১৪ খ্রিঃ তারিখে, প্রকৃতপক্ষে সেদিনই অর্থাৎ ১২ মাসেই কমিশনের কাজ সম্পন্ন হয়। একজন চেয়ারম্যান (আপীল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায়) তিনজন পূর্ণকালীণ সদস্য ও একজন সদস্য সচিব সমন্বয়ে পূর্ণকালীণ কমিশন এবং ১৪ জন খন্ডকালীণ সদস্য ও ৪০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সহকারে কমিশন গঠিত হয়। কমিশনে সংশ্লিষ্ট হয়ে দেশের বিশেষ করে চাকরি বিষয়ে কাজ করার সুযোগ দেয়ার জন্য সদাশয় সরকার বিশেষ করে আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কমিশনের কাজে অর্থ বিভাগের সহযোগতিার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। ইহা ছাড়া জনপ্রশানস মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতিও ধন্যবাদ জানাই।

৩। কমিশনের কার্য সম্পাদন কালে আমাদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক। সরকারি চাকুরেগণের নিয়োগে মেধার প্রাধান্য, উপযুক্ত বেতন ভাতার মাধ্যমে দক্ষতা, সততা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, চাকরিক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ স্বচ্ছতায় পদোন্নতি, পদায়ন, প্রশিক্ষণ এবং মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলোতে নজর দেয়া হলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারি কর্মী বাহিনী দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে আরও বৃহত্তর ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে কমিশন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। কমিশন সম্পূর্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একটি টিম হিসাবে কাজ করেছে।

৪।  অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের মোটা দাগের সুপারিশগুলোতে চারটি বিশেষ দিক হল:

            ২০০৯ সনের ৭ম বেতন স্কেল ০১/৭/২০০৫ থেকে ৩০/০৬/২০০৯ সময়ের জন্য অর্থাৎ চার বছরের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছিল আর ৮ম বেতন স্কেল সুপারিশের ভিত্তি ০১/০৭/২০০৯ থেকে ৩০/০৬/২০১৫ অর্থাৎ ছয় বছরের ভিত্তিতে সুপারিশকৃত।

            প্রথমবারের মত সদাশয় সরকার চার সদস্যের পরিবর্তে ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য কল্যাণকামী বেতন কাঠামো সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়।

            ২০০৯ সনের পর এ পর্যন্ত পুঞ্জীকৃত মূল্যস্ফীতির পরিমাণ শতকরা ৬৩ ভাগ।

            এ সময়ে অন্ততঃ দুই লক্ষ লোক নতুনভাবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন।

৫। অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদনের কয়েকটি মূল সুপারিশ হচ্ছে-

#          বেতন কাঠামোতে স্কেল/গ্রেডের সংখ্যা হ্রাস করে ২০ থেকে ১৬ করা।

#          বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণীকরণ রহিত করা।

#          ঔপনিবেশ আমলের একটি শোষণ যন্ত্র ইবি অর্থাৎ এফিসিয়েন্সী বার তুলে দেওয়া।

#          বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সবার জন্য ১লা জুলাই নির্দিষ্ট করা 

#          অনেক জটিলতা ও মামলা, মোকদ্দমার উৎস সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের বিলুপ্তি ঘটিয়ে মূলতঃ পদোন্নতির মাধ্যমে পরবর্তী উচ্চতর ধাপে উঠার ব্যবস্থা করা।

#          তাছাড়া দুটো গ্রেড/শ্রেণীর স্কেলের মধ্যে টাকার অংকে পার্থক্য বাড়ানোর সুপারিশ করা হচ্ছে, ধাপের সংখ্যা ৯-১৬ গ্রেড/স্কেলের জন্য বিশটি এবং পনের বছরে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাবার মত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ব্যবস্থা করা।

#          ৪র্থ থেকে ১৬তম গ্রেড/স্কেলের বেতনে একই হারে শতকরা পাঁচভাগ চক্রবৃদ্ধি হারে বার্ষিক বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

#          সর্বনি¤œ বেতন ধরা হয়েছে মাসে ৮,২০০/- টাকা (যা ৭ম কমিশনের সুপারিশের পর নির্দ্ধারিত ৪১০০/- টাকা থেকে শতকরা ১০০ ভাগ বেশী) ১ম গ্রেড/স্কেলে সর্বোচ্চ বেতন ধরা হয়েছে ৮০,০০০/- টাকা যাহা বর্তমান বেতনের ১০০ভাগ বেশী। ৯ম গ্রেড ও ৮ম গ্রেডকে একত্রীভূত করে ৮ম গ্রেডের বেতন ধরা হয়েছে ২৫০০০/- টাকা (৯ম গ্রেডের ১১০০০+ ১০ম গ্রেডের ১২০০০ এর বিপরীতে) এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি মূলতঃ মেধা আকর্ষণের জন্যই করা হয়েছে। আর সার্বিকভাবে বেতন বৃদ্ধি সরকারি চাকরিতে মেধাবী, দক্ষ ও সৎ চাকুরেগণকে ধরে রাখার ও একটি প্রয়াস বৈকি। বেতন বৃদ্ধির সুপারিশকালে পরিবারের সংজ্ঞা, বিগত ছয় বছরের পুঞ্জীকৃত মূল্যস্ফীতি, চার বছরের স্থলে ছয় বছরের ভিত্তি, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের বেতনাদির চিত্র বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

#          সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত ধার্য করা হয়েছে ১:৯.৭৬ যাহা সপ্তম কমিশনের অনুরূপ।

#          ১ম গ্রেড/স্কেলের যারা সচিব হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁদের নীতি নির্দ্ধারণ কাজে এবং সমন্বয়ের কাজে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ শতকরা ৫ ভাগ হারে অর্থাৎ ৪০০০/-টাকা অতিরিক্ত বেতন প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

#          সিনিয়র সচিবগণের বেতন মাসে ৮৮,০০০/- টাকা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব/মূখ্য সচিবের মাসিক বেতন ১,০০,০০০/- টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

#          চাকরি শুরু করার সময় একটি স্থিতিভাতার ব্যবস্থা করা।

#          অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের কার্যকর করার তারিখে ২০১২ সনে প্রদত্ত শতকরা ২০ ভাগ মহার্ঘ ভাতা রহিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।

            অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ ০১/০১/২০১৫ তারিখে  কার্যকর করা হলে ঐ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অবসর ভাতা ও এমপিও খরচ মিলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে শতকরা ৬৩.৭ ভাগ। আর ২০১৩-১৪ সনের প্রকৃত রাজস্ব ব্যয় ১৯ শতাংশের তুলনায় ২০১৫-১৬ সনের প্রক্ষেপিত রাজস্ব ব্যয় কিছুটা বেড়ে হবে শতকরা ২০.১ ভাগ। মোট বাজেটের হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বেতন-ভাতাদির খরচ ছিল ১৪.২% ; ২০১৫-১৬ সনেও ইহা বর্দ্ধিত বাজেটের ১৪.২ শতাংশ হবে।

সরকারি চাকুরে গণের বেতনের স্বল্পতা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ভাতা নতুন ভাবে শুরু করার এবং বিদ্যমান ভাতা হার/পরিমাণ বৃদ্ধির দাবী প্রবল হয়ে উঠছে। ৮ম কমিশনের সুপারিশ অনুমোদন/কার্যকর করা হলে বেতন অনেক বৃদ্ধি পাবে বিধায় নতুন ভাতা শুধু শতকরা হারে নির্ধারণ করা ঠিক হবে না। বিদ্যমান ভাতা হয় নির্দিষ্ট অংকে অথবা সর্বোচ্চ মাত্রার একটি সীমারেখাসহ হার ভিত্তিক হতে পারে।

ডেপুটেশন/প্রেষণ প্রথা এবং ইহার ভাতা বাতিল করা যেতে পারে খুবই বিশেষ প্রয়োজন ও অপরিহার্যতা ছাড়া। কমিশন বিশেষ ভাতা সমর্থন করেনি।

কয়েকটি ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভাতার পরিমান যৌক্তিকী করনের চিন্তা করা যেতে পারে।

বাড়ীভাড়া ভাতা আর ও যৌক্তিক করার তাগিদে চারটি স্তরে তিন ধরনের ক্ষেত্র বিভাগ যথা (ক) ঢাকা মেট্রো, (খ) চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও সাভার, নারয়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, গাজীপুর (গ) জেলা শহর এবং (ঘ) অন্যান্য স্থান এ চার ধরনের ক্ষেত্র বিন্যাস করা হয়েছে।

কম বেতনভুক্ত গণের জন্য বাড়ী ভাড়ায় সর্বনিম্ন সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বদলীজনিত ভ্রমণ ভাতায় সরলী ও সহজীকরণ করা হয়েছে।

#          বিনোদন ছুটি ও ভাতা প্রতি তিন বছরের পরিবর্তে প্রতি দুই বছর করা যেতে পারে।

#          সরকারি চাকুরিগণের মৃত্যু অথবা দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরণ দ্বিগুন করা যেতে পারে।

#          সচিবালয় ও তার বাইরের কর্মচারীগণের মধ্যে ১৯৯৫ সনের সার্কুলারে সৃষ্টি বৈষম্য দূর করা যেতে পারে।

#          বুয়েট ও অন্যান্য কোটা ছাড়া ভর্তির বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ ছাড়া অন্যান্য সরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকুরিগণের জন্য ভর্তি কোটা রাখা যায়।

            বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বইকেনা ভাতা ও গবেষনাভাতা বাড়ানো যেতে পারে।

          কমিশন একটি বিশেষ বিষয়ের দিকে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে। গ্রাম পুলিশের অল্প বেতনের অর্ধেক আসে সরকারি কোষাগার থেকে। বাকীটা ইউনিয়ন কাউন্সিল দিতে পারে না। সংগৃহীত চাল ছয়/নয় মাস পর নষ্ট হয়ে যায়। এখন ওপেন মার্কেট অপারেশন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তাই প্রকিউরমেন্টের চাল অতি সুলভ মূল্যে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের কাছে ইস্যু করা যেতে পারে।

            অষ্টম বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ এমপিও ক্ষেত্রে ছয় মাস পরে কার্যকর করার যেতে পারে যাতে ততদিনে স্কীমটি সম্পর্কে একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়।

            কমিশন লোকসানী স্বায়ত্বশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে আলাদা বেতন কাঠামো সমর্থন করে নাই। যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা বেতন কাঠামোর সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে থাকলে তা কার্যকর করা কমিশন সমর্থন করে। তবে সরকার অনুমোদিত বেতন কাঠামোতে যে কয়টি গ্রেড/স্কেল থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকে ও সমান সংখ্যক গ্রেড/স্কেল থাকলে ভাল হয়।

            কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের কতিপয় সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে মূল্য স্ফীতি তেমন বাড়ার কারণ নেই। মোট শ্রমজীবির মাত্র শতকরা ২.৫ ভাগ সরকারি চাকুরের প্রস্তাবিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে বাজেটে এ খাতের খরচ বাড়বে না ; রাজস্ব খরচ ও সামান্য বাড়বে।

            বেতন ভাতার বাইরে সরকারি চাকুরেগণের বাসস্থান একটি বড় সমস্যা। অথচ অবসরে মাথা গোজার ঠাই সবারই একটি মাথা ব্যথা। এ বিষয়ে কমিশন বিভিন্ন বিকল্প সুপারিশ রেখেছে।

            রিয়েল এস্টেট মাধ্যমে ৬০:৪০, ফর্মূলায় খাসজমি, পুরানো ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করে হায়ার পারচেজ ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বিক্রী করে, ২০ জন বা ১০ জনের গ্রুপ করে সরকারি চাকুরেগণের জন্য ৫/৭ কাঠা জমি বরাদ্দ ও গৃহ নির্মাণ হিসাবে ৫০ মাসের মূল বেতন ব্যাংক রেইটে ঋণ দিয়ে এবং জমি কেনার প্রমান সাপেক্ষে ব্যাংক রেইটে ৫০ মাসের মূল বেতন প্রদান করে মৃতপ্রায় নির্মাণ খাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করা যেতে পারে।

            গাড়ী কেনার ঋণ ১ বছর নিরীক্ষামূলক ভাবে প্রাধিকার প্রাপ্তগণ + ৩য় গ্রেড/স্কেল সকলের জন্য বিনা সুদে ২৫ লক্ষ টাকার ঋণ নিরীক্ষা সফল হলে ৪র্থ গ্রেড/স্কেল অনুরূপ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তবে স্বায়ত্ব ও আধা স্বায়ত্ব সংস্থায় এ সুবিধা দেওয়া হলে রক্ষনাবেক্ষণের খরচ সংস্থার নিজস্ব আয় থেকে বহন করতে হবে।

            স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কমপ্রিহেনসিভ বিমা করে প্রতিজন চাকুরের জন্য মাসে ৪০০+১০০ টাকার প্রিমিয়াম সরকার থেকে দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদে পাঁচলক্ষ টাকা পর্যন্ত মৃত্যু জনিত ক্ষতিপূরণ অথবা চাকুরে ও পরিবারের সদস্যগণের হাসপাতালের খরচসহ বিমা দাবী সরাসরি হাসপাতালে পরিশোধিত হতে পারে। নো ক্যাশ হ্যান্ডনিং। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থপনায় বড় উদ্যোগ প্রয়োজন হবে। তবে এতে মুমূর্ষ বিমা খাতের প্রাণ সঞ্চার হতে পারে।

            ইহা ছাড়া বিমা খাতের উদ্ধৃত্ত থেকে ৫০০ শয্যার একটি আধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল সরকারি চাকুরে গণের জন্য স্থাপন করা যেতে পারে। বিমার প্রিমিয়াম আয় থেকে যথেষ্ট সঞ্চয় উদ্ধৃত্ত হবে বলে এ খাতে সরকারের খরচ পরবর্তীতে অনেকটাই কমে যাবে।

          পেনশনের হার ৯০ শতাংশে বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করা যায় তবে আনুতোষিক (নভেম্বর ২০১৩ সনে ২৬ বছর পর বৃদ্ধি করা হয়) ১ টাকা = ২৩০ টাকা এখনই আর বৃদ্ধি করা সমীচিন হবে না। ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ১২ মাসের পরিবর্তে ২০ মাসের অর্জিত মূল বেতন নগদায়ন করা যেতে পারে।

            অবসরে যাওয়া ২০ বছর চাকুরির পর হতে পারে তবে এ বিধান দ্য পাবলিক সার্ভেন্টস রিটারমোট আ্যক্ট ১৯৭৪ এর আওতামুক্ত রাখা যেতে পারে।

            পিএলআর এর বদলে এলপিআরে প্রত্যাবর্তন করা যেতে পারে।

            যে হারে বেতন বাড়বে সে হারে পেনশন বাড়ানো যায়। তবে যারা সম্পূর্ণ বেতন উঠিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁদের জন্য মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ ও ২৫০০ টাকা করা যেতে পারে। তাঁদের উৎসব ভাতা বাড়ানো যায় One rank one pension সমর্থনযোগ্য নয়।

          সম্পূর্ণ বেতন উঠিয়ে নেয়াদের ক্ষেত্রে পেনশন পুনরুজ্জীবনের জোরদার দাবীর পেছনে কোন আইনী বা নৈতিক সমর্থন আছে বলে কমিশন মনে করে না। ন্যুনতম পেনশন ২০০০ টাকা করা যেতে পারে । সম্পূর্ণ বেতন উঠিয়ে নেয়া পেনশনারগণের উৎসব ভাতা বছরে দু’টোর পরিবর্তনে চার মাসের মূল বেতনের সমতুল্য হতে পারে। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ করমুক্ত রাখা যায়।

            বর্তমান কল্যাণ ফান্ডকে পুনর্গঠিত করে বীমা ব্যবস্থাপনা, পেনশন ফান্ড ব্যবস্থাপনা এবং কল্যাণ ফান্ড ব্যবস্থাপনায় ভাগ করে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

            কল্যাণ ফান্ডের দৈনিক বাংলার মোড়ের বিশ/পঁচিশ কাঠা জমি বিক্রী করে ৪০০ শত কোটি টাকা মূলধন জমা দিয়ে সমৃদ্ধি সোপান ব্যাংক স্থাপন করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও স্বলমেয়াদী বাণিজ্যিক ব্যাংকের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ পেশাদার ভিত্তিতে চলবে এ ব্যাংক। দশ লক্ষ চাকুরের প্রত্যেকে ৪০০০ টাকার শেয়ার মূলধনের মালিক হবেন। প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে।

            চাকুরী বিষয়ে ব্যাপক সংস্থার ও পুনর্গঠন ভেবে চিন্তে করা সমীচীন হবে। প্রতিটি ক্যাডারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান অনুসরণ করে পিরামিড রচনা করা উচিৎ হবে। পদ খালি থাকলে পদোন্নতিতে বিলম্ভ এড়াতে হবে। নন-ক্যাডারের অে নক যুক্তিসংগত দাবী দাওয়া নিরীক্ষা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

            উপযুক্ততা ও মেধা যাচাই করে গ্রেড/স্কেল ৪ এ ডেভোলেপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট পুল স্থাপন করার চিন্তা করা যেতে পারে। গুচ্ছ ধরনের নিরীক্ষা করা যেতে পারে। যারা এক পদে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে বাধ্য হন তাদের জন্য ও অর্গানোগ্রাম সৃষ্টি করা ঠিক হবে।

দেশ ও জাতি গঠনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ও বুয়েটকে বিশেষ মর্যাদা দান করা যেতে পারে।

            সরকারি চাকরি আকর্ষণীয় না করা হলে আগামী বিশাল ও ক্রম সম্প্রসারণশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ইহার সামাজিক রূপান্তরের জন্য সঠিক সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাবে না। প্রতিটি স্তরে প্রশিক্ষণ এবং বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের মাধ্যমেই পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারি চাকুরেগণের পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দেয়ার ভীতি দূর করার চেষ্টা নিতে হবে।

            ১৯৭৭ সনের আদলে দ্য পে অ্যান্ড অ্যালাউন্সেস অর্ডার জারীর মাধ্যমে কমিশনের রিপোর্টের সরকারি অনুমোদিত অংশ বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে।

একটি স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশন অথবা একটি স্থায়ী বেতন ও আলাদা চাকরি পূণর্গঠন কমিশন স্থাপন করা সমীচীন হবে।

(ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন)

৭ই পৌষ, ১৪২১