বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত বিসিআইএম-এর দুইদিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিন ওই চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব কে এম শহিদুল হক।
তিনি বলেন, "চারদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে বিসিআইএমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে কক্সবাজার সম্মেলন একটি মাইল ফলক।
"পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার চারদেশ বাংলাদেশ চীন ভারত ও মিয়ানমারকে যুক্ত করে অর্থনৈতিক করিডার তৈরীর গুরুত্ব নিয়ে একমত হয়েছে।"
প্রস্তাবিত বিসিআইএম করিডরটির আওতায় চীনের ইউনান প্রদেশ, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও ভারতের সাড়ে ১৬ লাখ বর্গকিলোমিটারের বিশাল এই অঞ্চলের ৪৪ কোটি মানুষের পাশাপাশি থাকবে সড়ক, জল এবং আকাশ পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এটি ছিল বিসিআইএম-এর দ্বিতীয় বৈঠক। চারদেশের ৪৪ জন প্রতিনিধি নিয়ে সম্মেলন শুরু হয় বুধবার।
দুইদিনের আলোচনার ফলাফল নিয়ে যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেন চারটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
শহিদুল হক বলেন , "সম্মেলনে অংশ নেয়া সকলের প্রতিবেদনের কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রতিটি প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, 'এ করিডোর তার রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক'। যদিও এখানে কারো অর্থনৈতিক লাভ বেশি কারো কম।
"তবে সবাই স্বীকার করেছেন এ করিডোর স্থাপনের কারণে সব রাষ্ট্র লাভবান হবে।"
তিনি জানান, সম্মেলনে অর্থনৈতিক করিডোরের সাতটি খাত নিয়ে আলোচনা হয়। চার অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে 'প্রধান টার্গেট' ধরে আলোচনা হয়েছে। এতে চারটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে করিডোর স্থাপনে সম্মতি জানান।
তিনি বলেন, "২০১৫ সালের জুনে ভারতে পরবর্তী বৈঠকে বিসিআইএম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে এবং এবারের আলোচনা সিদ্ধান্ত আকারে রূপ নেবে।"
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার দুই হাজার বছরের পুরনো সিল্ক রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমার ও চীনের রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতেই তখন এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
পরে নানা কারণে সে উদ্যোগ থেমে গেলেও ১৯৯৯ সালে চীনের নেতৃত্বে আবারো সিল্ক রুট চালুর উদ্যোগ নেয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো।
আর এটি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম।
চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য কক্সবাজার, টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব, মান্ডালায়ে হয়ে তা কুনমিং পর্যন্ত পৌঁছানোই হল এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য।
এর জের ধরেই বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ গঠন করে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন।
২০১৩ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর চীনের বেইজিংয়ে চার দেশের মধ্যকার প্রতিনিধি দলের মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী বৈঠক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হল।
বৈঠকে চারটি দেশের প্রতিনিধিরা নয়টি বিষয়ে তাদের বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেন।
এগুলো হলো- জ্বালানি সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য সহজীকরণ, শুল্ক কমানো, নন-ট্যারিফ বাধা দূর, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়, দারিদ্র্য বিমোচন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত।
সম্মেলনে বাংলাদেশের ১৭, চীনের ১৫, ভারতের ৭ এবং মিয়ানমারের ৫ জনের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ্য করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, "এই প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের নানা উদ্যোগ থাকবে। এসব এলাকার উন্নয়নও হবে ব্যাপক। অর্থনীতিও পরিবর্তন হবে।"