ঋণের চাহিদা নেই, ব্যাংকে জমছে অলস টাকা

বাজারে ঋণের চাহিদা কম থাকায় দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ হচ্ছে না, পড়ে থাকছে অলস টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদবকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 05:37 PM
Updated : 18 Dec 2014, 05:54 PM

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় পরিবেশের ঘাটতি থাকায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য ঋণ নিতে আগ্রহ পাচ্ছে না। 

বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে তা থেকে ৮১ টাকা ঋণ বিতরণ করে বাকি ১৯ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ জমা হিসেবে রাখতে হয়।

কিন্তু আমানত ও ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, পুরো ব্যাংকিং খাত বাজার থেকে যতো আমানত সংগ্রহ করেছে তার ৭১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ অক্টোবর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত (আন্তঃব্যাংক বাদে) ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এসময়ে ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৪ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৭০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এই সময়ে গত বছরের তুলনায় আমানতে ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এবিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হোসেন খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় দেশে প্রকৃত অর্থে শিল্পায়ন অর্থ্যাৎ নতুন শিল্প স্থাপন হচ্ছে না।

“আমার জানামতে, অনেক ব্যাংকেই অনেকের ঋণ অনুমোদিত হয়ে পড়ে আছে, তারা ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছেন না।”

তাছাড়া সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আশানুরূপ বাস্তবায়ন না হওয়াকেও তিনি ঋণ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।

অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী আনোয়ার গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান খালেদ বলেন, “এডিপি বাস্তবায়ন হলে বাজারে অনেক ধরনের চাহিদা তৈরি হয়। তাতে বিনিয়োগের জন্য ঋণের চাহিদাও বাড়ে।”

সংঘাতময় বছর পেরিয়ে নির্বাচনের পর রাজনীতিতে ‘স্বস্তি’ এলেও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে তার প্রভাব দেখা যায়নি।

চলতি চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর)২১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং নির্বাচনের আগে ব্যাপক সংঘাতময় থাকলেও গত অর্থবছরের ওই পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২০ শতাংশ।

ঋণ বিতরণ না হওয়ার বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারমম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে ঋণ চাহিদা না থাকায় অনেকদিন ধরেই ব্যাংকগুলোতে ঋণ বিতরণের যোগ্য অতিরিক্ত টাকা রয়েছে। ”

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে ঋণযোগ্য অলস টাকা পড়ে থাকলেও সম্প্রতি বিনিয়োগ বেড়েছে, যার প্রভাবে ঋণ চাহিদাও বাড়বে।

এছাড়া পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু হলে তার প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বাড়বে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্র্যাক, শাহজালাল ইসলামী, প্রাইম ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বিতরণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে।

এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ বিতরণে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি রয়েছে সাতটি ব্যাংকের।

এগুলো হচ্ছে- স্টান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন, সিটি ব্যাংক এনএ, ওরি ব্যাংক ও আল ফালাহ ব্যাংক।

এছাড়া দেশের অনেক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে, যাদের ঋণ বিতরণের হার ৬০ শতাংশের নিচে।